• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
পঁচিশে বৈশাখ

আজ বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৮, ২০১৯, ০৪:৪২ পিএম
আজ বিশ্বকবির জন্মবার্ষিকী

ঢাকা : আজ পঁচিশে বৈশাখ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের অন্যতম শীর্ষ রূপকার, কাব্যগীতির শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা, দ্রষ্টা ও ঋষি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫ বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে তার রয়েছে অসামান্য অবদান। কবিগুরুর দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ গভীর জীবনবাদী চিন্তাজাগানিয়া লেখায় অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে বাংলার জল, বাংলার মাটি, বাংলার ফল আর বাংলার আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠা মানুষ। তিনি সারা জীবন হৃদয়ের গহিনে লালন করেছেন মানব মুক্তির দর্শন। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেই দর্শন অন্বেষণ করেছেন। তার কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাসসহ সব সৃষ্টি মানুষকে আজও সেই অন্বেষণের পথে, তার অন্বিষ্ট উপলব্ধির পথে আকর্ষণ করে।

তাঁর রচনাবলি, কবিতা ও গান বাঙালি তথা বাংলাদেশীদের যাপিত জীবনের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাশিল্পী, চিত্রশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, ছোট গল্পকার ও ভাষাবিদ। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি চিত্রকর হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন।

রবিঠাকুরই বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

বর্ণাঢ্য আয়োজনে আজ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কবির জন্মজয়ন্তী উদযাপন করবে। বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, চ্যানেল আই ও ছায়ানট এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ ছাড়া বিটিভিসহ বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল ও বেতারেও সম্প্রচার করা হবে বিশ্বকবির জন্মজয়ন্তীর নানা অনুষ্ঠান। সংবাদপত্রের পাতায়ও থাকছে বিশেষ আয়োজন।

প্রাতঃস্মরণীয় রবীন্দ্রনাথ : রবীন্দ্র গবেষকদের মতে, এতকাল পরেও তিনি বাঙালির জীবনে প্রবাদের মত আছেন, আরও কয়েক দশক পরেও থাকবেন। তিনি চির নতুনের কবি, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কবি।

মৃত্যুহীন অনন্ত জীবনের সাক্ষর বয়ে যাবেন যুগ থেকে যুগান্তরে।

রবীন্দ্রনাথ বাংলার কবি, বাঙালির কবি তবে তিনি নিজেকে বিশ্বচরাচরের অংশ হিসাবে বিশ্বাস করতেন।

বাঙালিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, তুমি নিছক বাঙালি নও, তুমি বিশ্বচরাচরের অংশ।

সকলের সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রেমের মধ্যে বাঁচতে বলেছেন রবীন্দ্রনাথ। সঙ্গে যুক্ত করতে বলেছেন প্রাণীজগৎ, নিসর্গ, প্রকৃতিকে। শুধু তাই নয়, শিল্পের জগৎ, কল্পনার জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজের বিস্তার ঘটাতে বলেছেন ।

একশ বছরেরও বেশি আগে বাঙালির পাঠকদের প্রতি রবীন্দ্রনাথের জিঞ্জাসা ছিল ‘আজি হতে শতর্বষ পরে/কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি / শত কৌতুহল ভরে / অথবা, আজি হতে শতর্বষ পরে/এখন করিছো গান সে কোন্ নুতন কবি/ তোমাদের ঘর।’

কবির আশঙ্কার জবাবে বলা যায় শত বছর পরে এখন অনেক নতুন কবি এসেছেন, নব নব সৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত স্ফীত হচ্ছে আমাদের সাহিত্য এবং সঙ্গীত ভূবন। তারপরেও রবীন্দ্রনাথ মাত্র একজন। এখনকার নবীনদের সৃষ্টির উৎসও তিনি। এখনও জীবনের সবকিছুতে হাত বাড়াতে হয় রবীন্দ্রনাথে। তাই কবির বসন্ত গান শতবছর পরেও ধ্বনিত হয় নবীন কবি আর পাঠকের বসন্ত দিনে।

কবির এই আশঙ্কা যে আসলে অমূলক তার প্রমাণ এখনও ঘটা করে কবির জন্মদিন পালন করা হয়। শুধু তাই নয় পালিত হয়েছে তার সার্ধশত জন্মবার্ষিকী।

লাখো কন্ঠে গাওয়া হয়েছে তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’

নানা সঙ্কট-আনন্দ-বেদনায়, আশা-নিরাশার সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্র সৃষ্টি আমাদের চেতনায় বরাবর স্পর্শ করছে এবং করবে আরও বহু কাল।

রবীন্দ্রনাথ এখনও কেন প্রাসঙ্গিক-এ ব্যাপারে রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাঙালির এই কবি এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করেছিলেন যখন রাষ্ট্র ছিল পরাধীন, চিন্তা ছিল প্রথাগত ও অনগ্রসর, বাংলাভাষা ছিল অপরিণত।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ একাধারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বমানে উন্নীত করার পাশাপাশি জাতির চিন্তা জগতে আধুনিকতার উন্মেষ ঘটিয়েছেন। বাঙালির মানস গঠনে পালন করেছেন অগ্রদূতের ভূমিকা। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে অভিসারী হয়ে ওঠার প্রেরণা যোগানোর মধ্যদিয়ে বাঙালি মননকে বিশ্বমানে উন্নীত করে জাতিকে আবদ্ধ করে গেছেন চিরকৃতজ্ঞতায়। ১৫৮ বছর পেরিয়েও কবি আমাদের মাঝে তাই চিরজাগরূক হয়ে আছেন।

রবীন্দ্রনাথ প্রথম নোবেল বিজয়ী বাঙালি কবি । ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্য গ্রন্থের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। কবির গান-কবিতা, বাণী এই অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তির ক্ষেত্রে প্রভূত সাহস যোগায়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে শুধু নয়, চিরকালই কবির রচনাসমূহ প্রাণের সঞ্চার করে। আমাদের প্রতিটি সংগ্রামেই কবির চিরায়ত রচনাসমগ্র আজীবন স্বরণের শীর্ষতায় আবিষ্ট হয়ে আছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিভূ : রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিভূ। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় রয়েছে তার স্বাতন্ত্র্য চিহ্নিত ভূমিকা। বাঙালি জাতীয়তাবোধের অন্যতম প্রধান রূপকারও তিনি।

আবদুল হামিদ বলেন, তিনিই প্রথম অ-ইউরোপীয় হিসেবে বিশ্বসাহিত্যের এই সর্বোচ্চ স্বীকৃতিটি অর্জন করেন। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির বহুত্ববাদ, বৌদ্ধ ধর্মের অহিংস ও ইসলাম ধর্মের সুফিবাদ এবং বাংলার বাউলদের ভাববাদী চেতনার সমন্বয় সাধন করে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রসাহিত্য সবার পাঠ করতে হবে প্রাত্যহিক জীবনবোধের আলোকে। তিনি (রবি ঠাকুর) তৎকালীন পূর্ববঙ্গে অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশে আবির্ভূত হয়েছিলেন একজন সমাজসংস্কারক হিসেবে। তিনি দরিদ্র প্রজাদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সমবায়নীতি ও কল্যাণবৃত্তি চালু করে তাদের ভেতর প্রণোদনা জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন।

তার প্রবর্তিত সমবায় ব্যাংক, ক্ষুদ্রঋণের প্রচলন পরবর্তীকালে গ্রামীণ উন্নয়নে একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথের শিল্পীসত্তার সঙ্গে একাত্ম হয়েছে মানবিক সত্ত্বাও। ফলে সাধারণ বাঙালির দুঃখ-বেদনার কথক হিসেবে যে রবীন্দ্রনাথকে বাঙালি পেয়েছে তা পূর্ববঙ্গেরই সৃষ্টি। এসবের পাশাপাশি মানুষের প্রত্যক্ষ কল্যাণ কামনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে ভেবেছেন।

শিশুসহ নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন শান্তিনিকেতন। সেই সঙ্গে তিনি পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন।

মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার ক্ষেত্রে চিরকাল বিশ্বের জানালাকে খুলে দেয়ার কথা বলেছেন। তার চিন্তার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয় ঘটাতে পারলে একটা কার্যকর শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের বিশালতা এবং তার সৃষ্টির অপূর্ব মাধুর্যকে অন্তরাত্মা দিয়ে উপলব্ধি করতে হলে রবীন্দ্র চর্চার বিকল্প নেই।

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণায় যোগায় রবীন্দ্রনাথ : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনাদর্শ ও তার সৃষ্টিকর্ম শোষণ-বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে চিরদিন বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করবে।
 
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কালোত্তীর্ণ এ কবির সৃষ্টিকে প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। রবি ঠাকুরের অমর সৃষ্টি- আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি-গানটি জাতির পিতা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করেন যা দেশের মানুষের মনে সঞ্চারিত করেছে দেশপ্রেমের নতুন প্রেরণা।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, চব্বিশ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রবি ঠাকুরের লেখনী আমাদের উজ্জীবিত করেছে। তার জাতীয়তাবোধ বাঙালির অনন্ত প্রেরণার উৎস।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তার কবিতা ও গান মুক্তিকামী বাঙালিকে উদ্দীপ্ত করেছে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে।

রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বসাহিত্যের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বাংলা ও বাঙালির অহংকার। প্রতিভা ও শ্রমের যুগলবন্দির সম্মিলনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে করেছেন ঐশ্বর্যমণ্ডিত।

বিএনপির বাণী : বাংলা সাহিত্যের অবিসংবাদিত প্রাণপুরুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ উপলক্ষে এক বাণীতে এ কথা বলেন।

দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের জাতীয় জীবনের সবক্ষেত্রে বিশ্বকবির প্রভাব বিদ্যমান। তারা বলেন, তার উপন্যাস, কবিতা ও গানে গভীর জীবনবোধ, প্রকৃতির সাথে সংলগ্নতা ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর আস্থা ব্যক্ত করেছেন, যা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে এক অনাবিল শান্তি ও স্বর্গীয় আনন্দের আবহ তৈরি করে।

তারা বলেন, আজো আমরা সবাই তার লেখনি দ্বারা উদ্বুদ্ধ এবং তা সমাজের অনাচার, অবিচার আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীতে সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন তারা।

বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠানমালা-

রবীন্দ্রজয়ন্তীতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

জাতীয় পর্যায়ে কবির স্মৃতিধন্য শিলাইদহ, শাহজাদপুর, পতিসর ও দক্ষিণডিহিতে পালিত হচ্ছে সরকারি আয়োজনে নানা অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে বসবে মেলাও।

রাজধানীতে সরকারি পর্যায় ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন করবে।

জাতীয় পর্যায়ে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার।

এ বছর জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে রাজধানী ঢাকায়। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে বিকাল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ  এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম সিমিন হোসেন রিমি এমপি। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, লেখক, গবেষক, সংগঠক ও শিক্ষক অধ্যাপক সনজীদা খাতুন।

স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

রবীন্দ্র স্মারক বক্তব্য রাখবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলের পাশে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তিনদিনব্যাপী কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।

এবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯তম জন্মদিন উদ‌যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মানবিক বিশ্ব বিনির্মাণে রবীন্দ্রনাথ’।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করবে। বাংলা একাডেমিসহ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল দফতর ও সংস্থাসমূহ এ উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

ঢাকাসহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদ্‌যাপন করা হবে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহ যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে দিবসটি উদ্‌যাপন করবে। যে সকল জেলায় জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হবে না, সে সকল জেলার জেলা প্রশাসকগণ স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সহযোগিতায় কমিটি গঠন করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদ্‌যাপন করবে।

জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি চ্যানেলসমূহ ব্যাপকভাবে সম্প্রচার করবে।

কবিগুরুর ১৫৯তম জন্মদিন উদ্‌যাপন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জাতীয় পর্যায়ের মূল অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানসমূহে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রদান করবে। তাছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এসব স্থানের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

পদচারণায় মুখর দক্ষিণডিহি : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৯তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্রনাথ জাদুঘর মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে।

খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এই দক্ষিণডিহি গ্রামে নোবেল বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি। রবি ঠাকুর ও তার পত্নী মৃণালিনী দেবীর স্মৃতি রক্ষার্থে এই দক্ষিণডিহিতে ২০১২ সালে রবীন্দ্র জাদুঘর স্থাপন করা হয়। এই জাদুঘর ও দক্ষিণডিহিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শণার্থীরা আসছেন।

দক্ষিণডিহি শ্বশুর বাড়িতে কবিগুরু অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন, সে স্মৃতিবিজোড়িত স্থানটি নিজ চোখে দেখার জন্য রবীন্দ্রপ্রেমীরা ছুটে আসছেন।

খুলনার প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারি পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান জানান, গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দেশ বিদেশের মোট ২ লাখ ৩৫ হাজার দর্শনার্থী জাদুঘরটি পরিদর্শন করেছেন এবং এ থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৯০ হাজার ৮০৫ টাকা।

রবি ঠাকুরের শ্বশুর বাড়িটিকে ‘রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’ জাদুঘরে রূপান্তরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ২০১১-১২ অর্থবর্ষে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে।

তিনি বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিকগণ গত বছর বাড়িটির বাম দিকে রসুইখানা শনাক্ত করে এবং প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ কার্যক্রম শেষে তা দর্শণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের খুলনা কার্যালয় জানায়, বহুল স্মৃতি বিজোড়িত রবি ঠাকুরের শ্বশুর বাড়িটি প্রত্নতত্ত্বের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটির সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য চলতি অর্থবছরে ৩০ লাখ তিন হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের খুলনা আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, গত ২০১১-১২ অর্থ বছরে জাদুঘরে মূল ভবনের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে এবং ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে একটি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতল এই ভবনের নীচ তলায় দুটি কক্ষ এবং দ্বিতীয় তলায় চারটি কক্ষ রয়েছে।

বাড়ির পাঠাগারে ৫ শতাধিক বই এবং রবীন্দ্রনাথের অনেক দুর্লভ ছবি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে যদি রবি ঠাকুরের আরও স্মৃতি বিজড়িত জিনিস আনা যায় তবে দর্শনার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।

মিতা বলেন, ৩ দশমিক ২৪ একর জমির ওপর এই বাড়িটি গত ২০১০ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাছে দেওয়া হলেও এখনও কিছু জমি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বুঝে পায়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!