• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইউপি নির্বাচনবিধি চূড়ান্ত


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৭, ২০১৬, ০৭:৩১ পিএম
ইউপি নির্বাচনবিধি চূড়ান্ত

বিশেষ প্রতিনিধি

নির্বাচন কমিশন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের বিধি চূড়ান্ত করেছে। তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের বিধান বাতিল করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে ইসি আগে থেকে কিছু জানায়নি। চূড়ান্ত বিধি অনুসারে সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের মতো ইউপি নির্বাচনেও সংসদ সদস্যদের প্রচারে নামার সুযোগ রাখা হয়নি। আর পৌর নির্বাচনের মতো বাছাইয়ের আগেই একজনকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়ার বিধান বহাল রাখা হয়েছে। তাছাড়া রাজনৈতিক দলকে মনোনয়ন জমা দেয়ার আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হবে। ইসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ রাখা হলেও ইউপি চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ এবার সহজ করে দেয়া হয়েছে। পৌরসভার মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে নির্দিষ্টসংখ্যক ভোটারের সমর্থন বাধ্যতামূলক করা হলেও ইউপির সংশোধিত বিধিমালায় ওই বিধান তুলে দেয়া হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে ইসি প্রথম ধাপে ৫৩৮টি ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে ইসির চূড়ান্ত করা বিধি মেনেই ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সম্ভাব্য নির্বাচন বিধি পরিবর্তনের ব্যাপারে এখনো অন্ধকারেই রয়েছে। ইসি থেকে তাদের তেমন কোনো আভাসও দেয়া হয়নি। যদিও দেশে প্রথমবারের মতো ইউপি চেয়ারম্যান পদে দলীয় ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ রেখে গত নভেম্বরে আইন পাস হয়। সেই আলোকে নির্বাচন পরিচালনা ও আচরণবিধি সংশোধন চূড়ান্ত করেছে ইসি। খুব শিগগিরই তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে। তবে ইসির পক্ষ থেকে নিবন্ধিত ৪০ রাজনৈতিক দলকে এ বিষয়ে এখনো কিছুই জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণেরও কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসির প্রধান স্টেকহোল্ডার রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের না জানিয়ে আইন প্রণয়ন করা হলে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ একাধিক রাজনৈতিক দল ইতঃপূর্বে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের আচরণবিধি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। বিশেষ করে নির্বাচনী প্রচারে সংসদ সদস্যদের বাইরে রাখার বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল আপত্তি তুলেছিল। ওই দলের পক্ষ থেকে ইসিতে প্রতিনিধি গিয়ে ওই বিষয়ে লিখিত আপত্তিও জানিয়েছিল। একই ধরনের দাবি তুলেছিল জাতীয় পার্টি, জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টিও। তখন ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল সময়স্বল্পতার কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করা যায়নি। একইভাবে বিএনপির পক্ষ থেকেও তাড়াহুড়া করে আইন প্রণয়নের সমালোচনা করে বলা হয়, অনেক নতুন নিয়ম চালু করা হলেও তাদের এ বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। অথচ ইসির বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তাদের সাথে আলাপ-আলোচনার সংস্কৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমে আস্থায় নেয়া প্রয়োজন। আর সেটা করতে না পারলে আইন প্রয়োগ যথাযথ নাও হতে পারে। বর্তমান কমিশন নিজেদের দুর্বলতার কারণেই রাজনৈতিক দলগুলোকে এড়িয়ে চলতে চাইছে।
সূত্র আরো জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের বিষয়ে কমিশনের নেতিবাচক অবস্থান রয়েছে। কারণ তাদের সঙ্গে সংলাপে বসার অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের আমলে মাত্র একবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। ২০১২ সালের ওই সংলাপে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস ও ভোটার তালিকা হালানাগাদ নিয়ে দলগুলোর মতামত চেয়েছিল ইসি। তবে ওই আলোচনার পরে কমিশন সদস্যরা মনে করছেন, সেসময় রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বিধি-বিধান প্রণয়নে তেমন কোনো পরামর্শ না এলেও অহেতুক বিতর্কের মুখে ইসিকে পড়তে হয়েছে। সেজন্যই সংলাপকে এড়িয়ে চলার নীতি গ্রহণ করছে বর্তমান কমিশন। আর পৌরসভা নির্বাচনের মতো ইউপি নির্বাচনের প্রচারেও সংসদ সদস্যদের বাইরে রাখা হচ্ছে। পৌর নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগীদের সাথে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সংসদ সদস্যদের প্রচারের বাইরে রাখা হয়েছিল। এবার নতুন করে উপজেলা চেয়ারম্যানদেরও প্রচারের বাইরে রাখার প্রস্তাব কমিশন সভায় আলোচনা হলেও পাস হয়নি। তবে সংসদ সদস্যদের প্রচারে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার ব্যাপারে একাধিক দলের আপত্তি থাকলেও ইসি মনে করছে, পৌর নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়েছেন। সেজন্য তাদের প্রচারের সুযোগ দেয়া হলে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হবে। একইভাবে উপজেলা চেয়ারম্যানরাও সরকারি গাড়িসহ বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাদের কারণেও ইউপি নির্বাচনের মাঠ প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়েই উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্রচারের বাইরে রাখার চিন্তা করা হয়েছিল। তবে একাধিক কমিশনার ওই প্রস্তাবে আপত্তি তোলেন। তাদের যুক্তি সংসদে প্রতিনিধিত্ব না থাকায় দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বেশিরভাগই সংসদ সদস্য হওয়ায় তারা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া আগ থেকেই মন্ত্রী ও তাদের সমমর্যাদার ব্যক্তিকেও প্রচারে নামার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তারপরে উপজেলা চেয়ারম্যানদেরও প্রচারের বাইরে রাখা হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হতে পারে।
এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগেই একটি রাজনৈতিক দল থেকে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার বিধান ইউপিতেও বহাল রাখা হচ্ছে। ফলে কোনো দলের প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হলে ওই পদে সংশ্লিষ্ট দলের আর কোনো প্রার্থী থাকবে না। এই বিধানের ফলে পৌর নির্বাচনে বিএনপির মেয়র পদে অন্তত ১৪ প্রার্থী ছিল না।
অন্যদিকে ইসি চলতি বছরের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ৫৩৮টি ইউপির তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন বাধ্যতামূলক। ৫ বছরের সময় গণনা করা হবে পরিষদের প্রথম সভার দিন থেকে। তার আগে ২০১১ সালের ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ৫৩৮টি ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাছাড়াও ১ মে থেকে ৩১ মের মধ্যে ১৩৪টি, ১ জুন থেকে ৩০ জুনের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি, ১ জুলাই থেকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ৪০৮টি, ১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৩৪টি, বাকি ১১২টি ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়।
ইউপি নির্বাচনের বিধি চূড়ান্ত করা প্রসঙ্গে ইসি কার্যালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইউপি নির্বাচনের আচরণ ও পরিচালনা বিধি সংশোধনের কাজ শেষ পর্যায়ে। পরিচালনা বিধিমালা কমিশন সভায় অনুমোদন হলেও আচরণবিধি নিয়ে আরো কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার সম্ভাবনা নেই। তবে কমিশন চাইলে পরে আলোচনা হতে পারে।
আর ইউপি নির্বাচন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বলেন, সবদিক থেকে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। সতর্ক থাকতে হবে, যেন কোনো ঋণখেলাপি ও বিলখেলাপিকে মনোনয়ন দেয়া না হয়। অন্য যেসব কারণে প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে সেসব বিষয়েও তাদের সতর্ক থাকতে হবে। সব দায় ইসির ঘাড়ে চাপালে চলবে না।

 

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!