• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
বড় বিনিয়োগে ঋণ দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো

উল্টোপথে হাঁটছে তফসিলি ব্যাংক


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৭, ২০১৯, ০২:৫৫ পিএম
উল্টোপথে হাঁটছে তফসিলি ব্যাংক

ঢাকা : সরকারের নীতির সঙ্গে সংগতি নেই ব্যাংকিং খাতের। অনেকটা উল্টোপথে হাঁটছে তফসিলি ব্যাংকগুলো।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সরকারের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। বেসরকারি খাত বড় ধরনের বাধার মুখে পড়বে।

অবশ্য ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং খাতের অবস্থা ভালো নয়। তাই নিজেদের সুরক্ষায় বিনিয়োগে কৌশলী হতে হচ্ছে তাদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলধনের জোগান ঘাটতিতে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে তাদের।  

সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিল্পে মেয়াদি ঋণ ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ কমেছে। যদিও একই সময়ে শিল্পে মেয়াদি ঋণ আদায় বেড়েছে ১৩ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ শেষে শিল্পে মেয়াদি ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

শিল্পে মেয়াদি ঋণের পরিমাণ কমলেও একই সময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) খাতে ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।

২০১৮ সালের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এসএমই ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ১০ শতাংশ। মার্চ শেষে এসএমই খাতে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। একই সময়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে কৃষি ও অকৃষি গ্রামীণ খাতেও। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি খাতে ঋণ বেড়েছে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ। অকৃষি গ্রামীণ খাতে এ প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে আয়ের দেশের স্বীকৃতির পথে। আর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়ন দেশের কাতারে আসবে বাংলাদেশ। এ জন্য বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে হবে। দরকার হবে বড় ধরনের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সরকার।

অর্থনীতির চালিকাশক্তি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ দীর্ঘদিন ধরে একটি স্তরে আটকে আছে। টাকার অঙ্কে বাড়লেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের সঙ্গে বাড়ছে না। সরকারের নানা উদ্যোগেও খুব বেশি সুফল আসছে না। পরিস্থিতিকে আরো কঠিন করছে ব্যাংকিং খাত।

সূত্র বলছে, দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি রেকর্ড ছুঁয়েছে। তবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অনুপাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ব্যাংকিং খাতে সংকট থেকে ঋণ আমানত সীমা-এডিআর কমিয়ে গত ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এডিআর কমিয়ে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৯ শতাংশ করা হয়।

ব্যাংকগুলোর এডিআর নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে প্রথমে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এরপর আরেকটি সার্কুলারের মাধ্যমে সময় বাড়িয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর করা হয়। পরে সময় আরো বাড়িয়ে ৩০ মার্চ নির্ধারণ করা হয়।

তৃতীয় দফায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক, সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করে, তফসিলি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে।

এর মধ্যে আবার অনেক ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে আশানুরূপভাবে ঋণ বাড়তে পারেনি। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরো কমেছে।

সর্বশেষ হিসাবমতে, বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি গত ৯ বছরে সর্বনিম্ন, যা ১০ শতাংশের ঘরে দাঁড়িয়েছে। চলতি মূলধনের অভাবে দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তবে ব্যাংকাররা বলছেন, কিছু কিছু করপোরেট চলতি মূলধনের নামে ঋণ নিয়ে অপব্যবহার করছেন। ঋণের এ অর্থে বাড়ি করছেন, জমি কিনছেন, গাড়ি কিনছেন। অপ্রয়োজনীয় বিনিয়োগও করেছে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

দেশের একটি বড় শিল্পগোষ্ঠীর উদ্যোক্তা আলাপকালে বলেন, ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে চলতি মূলধন সংকটে পড়তে হচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে ঘুরেও অর্থ মিলছে না। এভাবে শিল্পকারখানার চাকা সচল রাখা কঠিন হয়ে যাবে।

অবশ্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান রোববার (৬ অক্টোবর) বলেন, কিছু বড় করপোরেট সামর্থ্যের চেয়ে অনেক বেশি ঋণ নিয়েছে। এক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অন্য ব্যাংকের সুদ পরিশোধ করেছে। ফলে কিছুটা সতর্ক হতে হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কিছু করপোরেটের কাছে পুরো ব্যাংক খাত জিম্মি। তাদের ঋণের পরিমাণ এত বেশি যে ব্যবসা, সম্পদ সব বিক্রি করেও ব্যাংকের দায় পরিশোধ করতে পারবে না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!