• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
বইমেলা প্রতিদিন

এখনো ম্যাড়মেড়ে গ্রন্থমেলা


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯, ০৩:০৪ পিএম
এখনো ম্যাড়মেড়ে গ্রন্থমেলা

ঢাকা : মেলার প্রাণ দর্শনার্থী। সে যেকোনো মেলা-ই হোক। গ্রন্থমেলা দর্শনার্থী পড়ুয়াদের অভাবে ম্যাড়মেড়ে দিন কাটাচ্ছে গত দুই দিন। প্রথম দুদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় মেলা জমে উঠেছিল। কিন্তু তৃতীয় দিন থেকেই ছন্দপতন। গতকাল চতুর্থ দিনে সেই ছন্দপতনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকল।

সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, আগের দিনের মতোই মেলার চিত্র। বইপ্রেমীদের খবর নেই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল চত্বরজুড়ে খাঁ খাঁ স্টলগুলোয় প্রাণ নেই। প্রাণ বলতে বিক্রেতাদের গল্পসল্প আর খুনসুটি।

হুমায়ূন আহমেদের সর্বাধিক বই প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশে প্রতিবছর প্রায় কুড়িজনের মতো বিক্রয়কর্মী দায়িত্ব পালন করেন। এবারো সংখ্যাটা তেমনই। তবে গতকাল গিয়ে দেখা গেল তাদের বেশিরভাগই অলস সময় কাটাচ্ছেন। তারা জানালেন, মেলা জমে উঠলে দম ফেলার ফুসরত পাবেন না। মেলা জমতে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে তাদের ধারণা।

মেলা জমুক বা না জমুক, নতুন বই প্রকাশে পিছিয়ে নেই কোনো প্রকাশনীই। ছোটবড় সব প্রকাশনী মেলায় প্রথম চার দিনে পাঁচশ’র বেশি নতুন বই এনেছে। সেসব বইয়ের বেচাবিক্রি শুরু হলেও তা প্রকাশকদের প্রত্যাশামাফিক নয় বলে জানালেন প্রিয়মুখ প্রকাশনীর কর্ণধার আহমেদ ফারুক।

তিনি বলেন, নতুন বই প্রতিদিনই মেলায় আসছে। শেষ দিন পর্যন্ত আসবে। কিন্তু কেনাবেচার জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। এখন দু-চারজন যারা মেলায় আসছেন তারা বই হাতে নিয়ে নেড়েচেড়েই দেখছেন বেশি। বিকালের খাঁ খাঁ মেলা সন্ধ্যার পর অবশ্য কিছুটা প্রাণ পেয়েছিল গতকাল। তবে সেটা উল্লেখ করার মতো না। অমর একুশে গ্রন্থমেলার চিত্র আরো ভরাট। আরো প্রাণবন্ত।

এদিকে গতকাল সোমবার বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু উপাধি অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. নূহ-উল-আলম লেনিন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুভাষ সিংহ রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তোফায়েল আহমেদ এমপি।

স্বাগত বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, আজকের আলোচনা অনুষ্ঠানটি ঐতিহাসিক তাৎপর্যের দাবি রাখে কারণ ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদ এ অনুষ্ঠানে জাতির পক্ষ থেকে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে অভিষিক্ত করার বিষয়ে বক্তব্য রাখতে উপস্থিত হয়েছেন।

প্রাবন্ধিক বলেন, ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে, ১৯৬৯-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে তোফায়েল আহমেদ যখন শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করার ঘোষণা দেন তখন মঞ্চে উপস্থিত ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া), ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) ও ডাকসুসহ সব ছাত্র নেতারা রেসকোর্সের লক্ষ জনতার সাথে দু-হাত তুলে এই ঘোষণার প্রতি সমর্থন জানান। বস্তুত, সর্বসম্মতিক্রমেই শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। কেউ কেউ কিছু না জেনেই ভিত্তিহীন মতদ্বৈধতার প্রশ্ন তুলতে চান, কেউ আবার ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি আগেই চয়ন ও ব্যবহারের কীর্তি দাবি করেন, যার কোনো ঐতিহাসিক মূল্য নেই। আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের ৫০ বছর পূর্তি এবং শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করার ৫০ বছর পূর্তিতে আমাদের মনে রাখতে হবে— এ দুটি ঘটনাই ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি এবং বাঙালি জাতির সম্মিলিত ইচ্ছার মহত্তম প্রকাশ।

আলোচকবৃন্দ বলেন, ১৯৬৯ বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় সময়ের নাম। স্বাধীনতার প্রস্তুতিপর্ব বলা চলে ইতিহাসের এই সময়খণ্ডকে। ছাত্রজনতার দাবি কীভাবে গোটা দেশের, সমগ্র জাতির জনদাবিতে পরিণত হয় তার উদাহরণ সৃষ্টি করেছিল সে সময়। ’৬৯-এরই ২৩ ফেব্রুয়ারি কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষে ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ যখন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ু্ল’ উপাধিতে ভূষিত করেন তখন মূলত তিনি স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীকরূপে পরিগণিত হন। এ বছর এ উপাধি অর্জনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি হচ্ছে। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি এ আলোচনাসভার আয়োজন করে ইতিহাসের দায় পূরণ করেছে।

সভাপতির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ’৬৯-এ সমগ্র বাঙালি জাতি স্বাধীনতার অগ্নি-আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত হয়েছিল। সংগ্রামী ছাত্রজনতার সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছিল কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের মুক্তির দাবি। উপনিবেশের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন সার্বভৌম বাঙালি জাতিরাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন হয়েছিল আসাদ, মতিয়ুর, সার্জেন্ট জহুরুল হক, শামসুজ্জোহা প্রমুখের রক্তে। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে গতিবেগ দিয়েছে মিথ্যা মামলা থেকে বঙ্গবন্ধুর কারামুক্তির দাবি। অবশেষে ছাত্রজনতার গণসংর্বধনায় ১৯৬৯-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি প্রদানের মাধ্যমে যেন আসন্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক হিসেবে জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়। জাতির সে প্রত্যাশা তিনি পূরণ করেছেন। বাংলার বন্ধু হয়ে বাংলার মানুষের জন্য হাজার বছরের প্রতীক্ষিত স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন মাকিদ হায়দার এবং ইকবাল আজিজ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মাহমুদা আখতার। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, ইয়াকুব আলী খান, লীনা তাপসী খান এবং ক্যামেলিয়া সিদ্দিকা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন স্বরূপ হোসেন (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশী), রবিনস চৌধুরী (কী-বোর্ড), ফিরোজ খান (সেতার)। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের সাহিত্যকর্ম বিষয়ে আলাপনে অংশ নেন জাকির তালুকদার, নাসিমা আনিস, বিধান রিবেরু, তিথি আফরোজ এবং গিরিশ গৈরিক।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে গতকাল গ্রন্থমেলায় নতুন বই এসেছে ১৪১টি। গল্প ২৬, উপন্যাস ২৫, কাব্যগ্রন্থ ৪৫, প্রবন্ধ ৭ ও অন্যান্য বিষয়ক গ্রন্থ ৩৮টি।

এর মধ্যে অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে ইকবাল খন্দকারের কিশোর থ্রিল ‘নাইট গ্যাং’, হাওলাদার প্রকাশনী থেকে শহীদ কাদরীর কাব্যগ্রন্থ ‘কোথাও কোনো ক্রন্দন নেই’, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘বিষণ্ন শহরের দহন’ ও শওকত আলীর উপন্যাস ‘যাত্রা’, নাগরী থেকে আবু হাসান শাহরিয়ারের কাব্যগ্রন্থ ‘বিমূর্ত প্রণয়কলা’ এবং অন্যপ্রকাশ থেকে ইমদাদুল হক মিলনের গল্পগ্রন্থ ‘ফেলে যাওয়া রুমালখানি’, নাসরীন জাহানের উপন্যাস ‘সিসেমের দ্বিতীয় দরজা’ ও শাহাবুদ্দীন নাগরীর কাব্যগ্রন্থ ‘নিলাম হবে এক কোটি চুম্বন’ অন্যতম।

আজকের অনুষ্ঠান : মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) গ্রন্থমেলার পঞ্চম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘কবি সিকান্দার আবু জাফর : জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কবি নাসির আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান, ড. শিরীন আখতার এবং কবি বায়তুল্লাহ কাদেরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!