• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
খালেদা জিয়া নাকি তারেক রহমান?

কে আসছেন বিএনপি আগামীর নেতৃত্বে


বিশেষ প্রতিবেদক জুলাই ১৬, ২০২০, ০৫:৩৩ পিএম
কে আসছেন বিএনপি আগামীর নেতৃত্বে

ঢাকা : নভেল করোনাভাইরাসের কারণে থমকে যায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। আগামী ১৬ জুলাই থেকে সীমিত আকারে দলীয় কর্মকাণ্ড শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেলমুক্তির পর গুলশানের বাসায় আছেন। মামলার সাজা নিয়ে আইনি জটিলতার কারণে সহসাই রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারছেন না তিনি। তাই আগামীদিনে বিএনপির নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে?

এ নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে চলছে আলোচনা পর্যালোচনা। আগামীদিনে খালেদা জিয়া নাকি তারেক রহমান নেতৃত্ব দেবেন এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় নি।

তবে, কারবন্দি থাকাবস্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাংগঠনিক দক্ষতা মূল্যায়ন করছেন খালেদা জিয়া। সরকারের সবধরনের ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে দক্ষভাবে সাংগঠনিক দায়িত্ব করায় তারেক রহমানের প্রতি খুশি হয়েছেন খালেদা জিয়াসহ দলের বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা।

তবে, তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে দলের কিছু সিনিয়র নেতা এখনো নাখোশ। তাদেরকেও তারেকমুখি করার জন্য খালেদা জিয়া কাজ করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতের রায়ে জেলে যান খালেদা জিয়া। এর পরদিনই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান। এরপর পাল্টে যায় বিএনপির সাংগঠনিক কাজের ধরন।

দলের সিনিয়র নেতা, মধ্যমসারির নেতা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলা শুরু করেন তারেক রহমান। দলের স্থায়ী কমিটির মিটিংসহ গুরুত্বপূর্ণ সভা সেমিনার স্কাইপিতে করেন। এর ফলে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মনোবল শক্ত হয়। সাংগঠনিক শক্তিও চাঙ্গা হয়। যার ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচিতে সক্রিয় হয় সিনিয়র নেতারাও।

বিগত দিনের কর্মসূচিতে পুলিশের হয়রানি হামলা মামলার ভয়ে রাজপথে নামেনি ওই সিনিয়র নেতারা। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠক হতো অনিয়মিত। রাতের ১০ টার পর বসতো মিটিং শেষ হত গভীর রাতে। দলের গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকেও নীতিনির্ধারণী ফোরামের অনেক সদস্যই উপস্থিত হতেন না।

কিন্তু তারেক রহমানের নেতৃত্বে প্রতি শনিবার বিকেলে খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হত। তারেক রহমান স্কাইপিতে ওই বৈঠকে যোগ দিতেন।  বৈঠকগুলোতে নীতিনির্ধারণী ফোরামের প্রায় সব নেতাই উপস্থিত হতেন। একই সঙ্গে দলের অন্যান্য মিটিংগুলো করতেন নয়াপল্টনে দলের প্রধান কার্যালয়ে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর তত্বাবধানে ওই মিটিংয়েও স্কাপিতে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দিতেন তিনি।

বিশেষ করে দক্ষতার পরিচয় দেন ছাত্রদলের কমিটির গঠনের ক্ষেত্রে। এই কমিটি গঠনের বিষয়ে তারেক রহমান ছিলেন আপোষহীন। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পকেট কমিটি করতে রাজী হন নি তিনি। ছাত্রদলের নেতৃত্বে অপেক্ষাকৃত কম বয়স, বিবাহিত ও অছাত্রদের বাদ দিয়ে কমিটি করার সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি ছাত্রদলের ২৭ বছরের ইতিহাস পাল্টে দিয়ে জাতীয় কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে নতুন নেতৃত্ব হাতে তুলে দেন ছাত্রদল।

একাজ সফল করতে গিয়ে ছাত্রদলের নেতাদের বিদ্রোহ আর সিনিয়র নেতাদের ষড়যন্ত্র ঠেকাতে অনেকটা বেগ পেতে হয় তাকে। তবুও হাল ছাড়েননি। বিভিন্ন সময়ে সরকারের ষড়যন্ত্রকে কৌশলে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করেছেন তারেক রহমান। কারাবন্দি খালেদা জিয়ার দুই বছরে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব কোন্দ্বলও অনেকটা নিরসন করেছেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধরে রাখেন। এতে খুশি হয়েছেন খালেদা জিয়া।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকাবস্থায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দক্ষভাবে দল পরিচালনা করেছেন। তিনি  রাত দিন সব সময় সঠিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। দলের দুর্দিনে তারেক রহমানের নেতৃত্ব দলকে সুসংগঠিত ও  শক্তিশালী করেছে।

সূত্র মতে, বিএনপির কিছু সিনিয়র নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্ব মানতে নাখোশ। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন গত জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে গড়ে ওঠা ঐক্যফ্রন্টের কিছু সিনিয়র নেতা। তারা চান না তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্বে আসুক। এমনকি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যেও এ নিয়ে বিভাজন রয়েছে।

খালেদা জিয়া জেলমুক্তির পর গুলশানের বাসায় আছেন। ওই বাসায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ বেশ কয়েকজন নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু  বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষনেতা খালেদা জিয়ার সাক্ষাত পান নি। তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে কয়েকবার চেস্টাও করেছেন তারা। এতে তারা আরও ক্ষুব্ধ হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের চেয়ে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দকে বেশি মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।

এ বিষয়ে জোটের একাধিক শরিকদলের সিনিয়র নেতারা বলেন, খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর ২০ দলীয় জোটের কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়ে যায়। জোটের শরিকরাও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রেও শিকার হন। অনেক টানাপোড়েনের পরেও টিকে আছে জোট। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় নি।

সূত্র মতে, বিএনপির আগামীর নেতৃত্বে তারেক রহমানকে চায় দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। কারামুক্তির পর খালেদা জিয়া বাসায় বসে বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে এ তথ্য নিশ্চত হয়েছেন। আগের চেয়ে বর্তমান তারেক রহমান অনেক পরিণত হয়েছে।

তবে, বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা তারেকের নেতৃত্বে প্রতি নাখোশ। কারণ তারা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সংগঠনে কাজ শুরু করেছেন তারা। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন। তাই অপেক্ষাকৃত তরুণ তারেক রহমানের নেতৃত্ব মেনে নিতে তাদের কষ্ট হচ্ছে।

তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আপাতত তারেক রহমানকে নেতৃত্বে আসতে হবে কেন? চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেবেন। তিনি সুস্থ হয়ে এসে দলের হাল ধরবেন। তার নেতৃত্বেই চলবে বিএনপি। আমরা তার নেতৃত্বে কাজ করছি। আগামীতেও কাজ করব।

এদিকে, কোনো কোনো নেতা তারেক রহমানের প্রতি নাখোশ তাদের সর্ম্পকে জানতে পেরেছেন খালেদা জিয়া। তবে, তাদেরকে নিয়ে আলাপ আলোচনা করলে তারাও তারেকমুখী হবেন বলে আশাবাদী খালেদা জিয়া। এ কারণে আপাতত ভারমুক্ত করছেন না তারেক রহমানকে। খালেদা জিয়া চেয়ারপাসন থাকবেন। আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলের সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন তারেক রহমান।

দলের কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় গত বৃহষ্পতিবার ময়মনসিংহ বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারেক রহমান। ওই দিন বিকেলে শুরু হওয়া বৈঠক চলে চার ঘন্টারও বেশি সময় ধরে। এতে বিএনপি নেতাদের বিভিন্ন অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শোনেন। পরে নেতকর্মীদের উদেশ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!