• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যে ভেজাল, মরছে মানুষ!


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯, ১২:১৭ পিএম
খাদ্যে ভেজাল, মরছে মানুষ!

ঢাকা : খাবার নিয়ে এখন মানুষের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, সন্দেহ, আশঙ্কা ও আতঙ্কের যেন শেষ নেই। ভেজাল খাবার ছড়িয়ে দিচ্ছে ডায়াবেটিস, ক্যানসারসহ ভয়ঙ্কর সব মরণব্যাধি। ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অকাতরে মরছে মানুষ।

খাদ্যে ভেজাল আর বিষের ছড়াছড়ির আতঙ্ক নিয়ে দেশবাসী এখন হতবিহ্বল। এরই মধ্য দিয়ে ‘সুস্থ সবল জাতি চাই, পুষ্টিসম্মত নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই’- এই স্লোগানে শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) পালিত হলো জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস।

দিবসটি পালন উপলক্ষে সারা দেশে র্যালি, সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। যেকোনো মূল্যে নিরাপদ ও ভেজালমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর সরকার।

‘শুধু সরকারি কর্মকর্তারাই নয়, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ৪৬৩টি সংস্থা কাজ করছে। ব্যবসায়ীরা ভেজাল খাদ্য যাতে সরবরাহ করতে না পারে সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকার রেস্তোরাঁগুলোর মান অনুযায়ী গ্রেডিং করার কাজ শুরু হয়েছে।’

জানা গেছে, বাংলাদেশে এখন প্রায় ১২টি মন্ত্রণালয় এবং তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন দফতর, সংস্থা, অধিদফতর ও স্থানীয় সরকারের প্রায় ৪৬৩টি প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ ছাড়া আমাদের যেসব খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আছে, তাদের ১২০টিরও বেশি আইন, বিধি, প্রবিধি, নীতিমালা রয়েছে।

তথ্য উপাত্তে দেখা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ খাদ্য ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এর মধ্যে ১৫ লাখ প্রত্যক্ষ ও বাকি ১০ লাখ পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। তবে খাদ্য নিরাপদ রাখার বিষয়ে তাদের জ্ঞানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলায় বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত ও ছয়টি মেট্রোপলিটন সিটিতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯-এর মধ্যে নিরাপদ খাদ্য আইনে তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে একটি আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করে রূপকল্প ২০২১- ২০৪১-এর উন্নত বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

সচেতন মহলের অভিমত, ভেজালবিরোধী অভিযান সারা বছর অব্যাহত রাখা এবং খাদ্যে ভেজালকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে ভেজালের বিষক্রিয়া থেকে জাতি রক্ষা পাবে।

মেধাবী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ খাদ্য : ভেজাল ও অনিরাপদ খাদ্যের প্রভাবে দেশে এক ধরনের নীরব হত্যার মহামারী চলছে। ভেজাল মেশানোটা অনেক ব্যবসায়ীর কাছে রুটিনওয়ার্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও ক্যানসারের মত মরণব্যাধির ছোবলে অকালে জীবন হারাচ্ছে দেশের মানুষ। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য বা খাবার যেমন জরুরি, তার চেয়েও বেশি জরুরি নিরাপদ খাদ্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ খাদ্য কোনো দাবি নয়- সাংবিধানিক অধিকার। কারণ খাদ্য নিরাপদ না হলে সুস্থ, স্বাস্থ্যবান ও মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। অনিরাপদ খাদ্য শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকিরই কারণ নয়, দেহে নানান অসুখেরও কারণ। ভয়ঙ্কর খবরটি হচ্ছে— দরিদ্র জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে অতি বিত্তবান কারোরই রক্ষা নেই ভেজালের প্রভাব থেকে। তাই এ বিষয়ে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে গণজাগরণ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, অনিরাপদ খাদ্যের কারণে ডায়রিয়া থেকে শুরু করে ক্যানসারের মতো দুই শতাধিক রোগে আক্রান্ত দেশের মানুষ। প্রতিবছর প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট তিন বছরের খাদ্যপণ্যের নমুনা পরীক্ষা করে ৫০ শতাংশ খাদ্যে ভেজাল পেয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার ওলিংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের মোট খাদ্যের ৩০ শতাংশে ভেজালের উপস্থিতি রয়েছে। রাজধানী ঢাকার ৬৬ শতাংশ হোটেলের খাবার, ৯৬ শতাংশ মিষ্টি, ২৪ শতাংশ বিস্কুট, ৫৪ শতাংশ পাউরুটি, ৫৯ শতাংশ আইসক্রিম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যেকোনো উপায়ে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। আর এটি করতে ব্যর্থ হলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

সরকার নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ প্রণয়ন করেছে। এই আইনটি ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ থেকে কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আমদানি পর্যায়ে অন্যান্য খাবার পরীক্ষার পাশাপাশি শিশুখাদ্য ও গুঁড়োদুধে সীসার মাত্রা নির্ণয় পরীক্ষা চালু করার চিন্তাভাবনা করছে।

খাদ্যে ভেজাল দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক সরকারি বিভাগগুলো কাজ করছে। প্রত্যেক জেলায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ভেজালরোধে মোবাইল কোর্ট অভিযান চালানো হচ্ছে। আবার বিএসটিআই খাদ্যে ভেজাল রোধে ২ ভাগে অভিযান পরিচালনা করছে। প্রথম পর্যায়ে বিএসটিআই জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট এবং ২য় পর্যায়ে সার্ভিলেন্স টিম পরিচালনার মাধ্যমে কাজ করছে।

রেস্তোরাঁয় গ্রেডিং প্রথা : নিরাপদ খাদ্য অভিযানের অংশ হিসেবে রেস্তোরাঁগুলোর মান অনুযায়ী গ্রেডিং প্রথা চালু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কেবল ঢাকার ৫৭টি রেস্তোরাঁকে এ ব্যবস্থায় গ্রেডিং বা মান অনুযায়ী স্তর বিন্যাস করা হয়েছে।

মান বর্ণনা অনুযায়ী, এ প্লাস মানে উত্তম, এ মানে ভালো, বি মানে গড়পরতা বা মোটামুটি এবং সি মানে- অনিরাপদ। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ হোটেল এবং রেস্তোরাঁর মান অনুসারে স্টিকারের নাম দিয়েছে।

এ প্লাসকে সবুজ, এ গ্রেডকে নীল, বি গ্রেডকে হলুদ এবং সি গ্রেডকে কমলা রংয়ের স্টিকার দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এসব হোটেলকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানিয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!