• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
একাদশ নির্বাচনে অংশ নেয়ার চেষ্টা

খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের হিড়িক


অর্থনৈতিক প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১, ২০১৮, ০৭:৫৩ পিএম
খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের হিড়িক

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হঠাৎ ঋণ পুনঃতফসিল করানোর আবেদন বেড়ে গেছে। চলতি মাসে ঋণ নিয়মিত করার ২০৫টি আবেদন জমা পড়েছে। এত বেশি আবেদন সচরাচর জমা পড়ে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের আগে বরাবর এই ধরনের আবেদনের সংখ্যা বাড়ে। কারণ, খেলাপি ঋণ থাকলে ভোটে দাঁড়ানোর যোগ্যতা থাকে না। আর এ কারণে ঋণ নিয়মিত করার চেষ্টা থাকে।

এরই মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। তিনশ’ আসনে ভোটে আগ্রহী তিন হাজার ৭৯ জন প্রার্থী। আর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই খেলাপি ঋণের বিষয়টি মীমাংসা করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আবেদন আরও বেশি পড়তে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসব চিঠি আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগে।

বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য কারা ঋণ পুনঃতফসিল করাতে চাইছে, সেই তথ্যটি প্রকাশ করতে চাইছে না। তবে একজন কর্মকর্তা জানান, বহু বছর ধরে খেলাপি-এমন ঋণগ্রহীতাও ন্যূনতম টাকা জমা দিয়ে ঋণ নিয়মিত করার আবেদন করেছেন। অতীতে নানা সময় দেখা গেছে, ভোটের আগে পুনঃতফসিল করিয়ে নেয়া ঋণ ভোটের শেষে আর নিয়মিত থাকে না। তাই পুনঃতফসিল হয়ে যাওয়া মানেই যে ঋণ আদায় হয়ে যাবে, এমন আশা করার কোনো কারণ নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখেই সাধারণত খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়ে থাকে। যারা প্রার্থী নয়, তারাও এই সময়টিতে সুযোগ নেয়। তবে ব্যাংকে ভিড় থাকে মূলত প্রার্থীদেরই। কারণ সিআইবি রিপোর্টে যদি প্রার্থীর পক্ষে ক্লিয়ারেন্স না থাকে তবে তিনি হয়তো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’

ব্যাংকাররা জানান, নির্দিষ্ট পরিমাণ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি সনদ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই সিআইবি সনদ পেলে আগের খেলাপিরাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

এছাড়া কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর মনোনয়নপত্র দাখিলকারী প্রার্থীদের ঋণখেলাপি-সংক্রান্ত তথ্য পাঠাতে হবে। তথ্যের সঠিকতা ও হালনাগাদ তথ্য যাচাইয়ের জন্য গত বৃহস্পতিবার থেকে আগামীকাল পর্যন্ত ব্যাংকের সিআইবি সেল খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন আগামী ২ ডিসেম্বর ঋণখেলাপি-সংক্রান্ত তথ্যসহ শাখা ব্যবস্থাপকদের সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে বাধ্যতামূলকভাবে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সব ব্যাংকের সিআইবি সেল খোলা রাখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘গতকাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দুই শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। বুধবার পর্যন্ত আবেদন ছিল ১৭০টি। এক দিনেই ৩০টির বেশি আবেদন জমা পড়েছে। প্রার্থীদের ঋণখেলাপির অর্থ পরিশোধ বা পুনঃতফসিলের জন্য শেষ সময় ছিল বুধবার। যারা  ব্যাংকের নির্দিষ্ট ডাউন পেমেন্ট জমা দিয়েছেন তাদের আবেদনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আসছে। হয়তো  আরও কিছু আসতে পারে।  নতুন করে টাকা জমা দেওয়ার সুযোগ নাই প্রার্থীদের।’

পুনঃতফসিলের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ থেকে কী পরিমাণ অর্থ আদায় হয়েছে বা কারা কারা আবেদন করেছেন তা অবশ্য জানাতে নারাজ সিরাজুল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জুনে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৪৫৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৮৭৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে এর পরিমাণ দাঁড়ায় তিন গুণে।

ঋণখেলাপি ব্যক্তিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে এবার নতুন একটি বিধান হয়েছে। এর আগে, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়ের তিন মাস আগে সিবিএ সনদ নিতে হতো। কিন্তু এবার মনোনয়নপত্র দাখিলের আগ পর্যন্ত পুনঃতফসিলের সুযোগ রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যারা মনোনয়ন পাওয়ার আশায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের চেষ্টা করছিলেন, তারা মনোনয়ন না পেলে আর খেলাপি ঋণ পরিশোধ করবেন না। ফলে অন্য সময়ের চেয়ে এবার খেলাপি ঋণ থেকে অর্থ আদায়ের পরিমাণ কমতে পারে।’

সোনালীনিউজ/এমআই

Wordbridge School
Link copied!