• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্রলীগের ‘ভবিষ্যৎ নির্দেশনা’ আজ


বিশেষ প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯, ০২:৩৪ পিএম
ছাত্রলীগের ‘ভবিষ্যৎ নির্দেশনা’ আজ

ঢাকা : ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিষয়ে শনিবার ‘ভবিষ্যৎ নির্দেশনা’ আসতে পারে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠনের হারানো ঐতিহ্য ও সুনাম ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জানা যেতে পারে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে।

সংগঠনটির কমিটি কখন ভেঙে দেওয়া হবে, বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভুল শোধরানোর কোনো সুযোগ পাবেন কি না, পরবর্তী কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি কখন থেকে নিতে হবে এবং নতুন কমিটিতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের ঠাঁই দিতে কোন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব খুঁজতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে আজকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দেশ পেতে পারেন বলে ধারণা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের। সরকারি দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য জানায়।

সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সাধারণত ছাত্রলীগের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না। ওই বৈঠকে সংগঠনটিকে নিয়ে আলোচনার তেমন সুযোগ নেই।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সংগঠনের গঠনতন্ত্রবিরোধী ও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে মূল দল এবং কখনো কখনো সরকারকেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। বর্তমান কমিটি নির্বাচিত হওয়ার মাত্র ১৩ মাসের মাথায় যত অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে, অতীতের কোনো কমিটিকে নিয়ে এত বেশি বিতর্ক হয়নি।

মূল দলের গুরুত্বপূর্ণ সভার আলোচনায়ও বিশেষভাবে স্থান করে নিচ্ছে সংগঠনটির নেতাদের শৃঙ্খলাবিরোধী আচরণ। গত শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের স্থানীয় সরকার ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় বিশেষ আলোচনায় ছিল ছাত্রলীগের শৃঙ্খলাবিরোধী ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড।

চলমান নানা ইস্যু ছাপিয়ে নেতিবাচক আলোচনায় থাকা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে সংগঠনের সাংগঠনিক নেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে ক্ষুব্ধ। ফলে শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিতব্য কার্যসংসদের সভার আলোচনায় বর্তমান নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডের প্রতিকার ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সংগঠনটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সংগঠনটির বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের চার নেতাকে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিতে পারেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে গড়া ছাত্রলীগের ভবিষ্যৎ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নানা পরিকল্পনা আছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরেই ইমেজ (ভাবমূর্তি) সংকটে ভুগছি। এ সংকট থেকে বের হতে আমরা তাদের সংশোধন করি। তাদের সুন্দর পথে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকি। পরামর্শগুলো নেত্রীর (শেখ হাসিনা) পক্ষ থেকেই আসে। ছাত্রলীগ নিয়ে দলের কার্যনিবাহী সংসদে আলোচনা হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। তবে এটা নিজস্বই আমাদের নেত্রীর বিষয়। তিনি যা ভালো মনে করবেন, তা-ই করবেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের প্রবীণ দুই সদস্য এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও বর্তমান নেতৃত্ব ভুল শোধরানোর জন্য আরো কয়েক মাস সময় পেতে পারে কি না, সেটাও আলোচনায় আছে। ভুলত্রুটি শুধরে আবারো সংগঠনের হারানো সুনাম ফিরিয়ে আনতে তাদের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। সংগঠনটির অভিভাবক হিসেবে শেখ হাসিনা চাইলে ভুল শোধরানোর সুযোগ পাবেন তারা। প্রধানমন্ত্রী সে সুযোগ দিতে চাইলে আজকের সভায় এর ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে।’

সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর সংগঠনটিকে ঘিরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। একই সঙ্গে গুঞ্জন উঠেছে, বর্তমান কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১১ মাস আগেই সংগঠনটির আগাম সম্মেলন হতে পারে। সংগঠনটির জন্য নতুন নেতৃত্বের খোঁজও চলছে।

কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের হিসাবে সংগঠনটির দুই বছরমেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ৩০ জুলাই অর্থাৎ আরো প্রায় ১১ মাস পরে। তবে সংগঠনের বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানা অভিযোগসহ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগাম সম্মেলনের দাবি উঠেছে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্য থেকেই।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের রেশ ধরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংগঠনটির নেতাদের ঢুকতে না দিতে এবং দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগঠনটিকে আমন্ত্রণ না জানানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এরপরও থেমে নেই সংগঠনটির বিতর্কিত কর্মকাণ্ড।

নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর দায় সংগঠনটিকে নিতে হবে এবং জবাবও বর্তমান নেতৃত্বকেই দিতে হবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠনের নেতাদের বিতর্কিত কাণ্ডের দায় কেন্দ্রীয় নেতারা নিতে রাজি নন।

গত শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উপস্থিত নেতাদের সমালোচনার এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দিতে বলেন শেখ হাসিনা। সে সময় ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে বিরক্তিও প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই সভায় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সম্পর্কে নানা অভিযোগ তোলেন উপস্থিত নেতারা। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে বিতর্কিত ব্যক্তিদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়া, দুপুরের আগে ঘুম থেকে না ওঠা ও অনৈতিক আর্থিক লেনদেন ইত্যাদি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি সাত দিনের মধ্যে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে গত ১৫ এপ্রিল নির্দেশ দিলেও নির্ধারিত সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে সংগঠনটির বর্তমান নেতৃত্ব ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্বই এর মূলে বলে অনেকের ধারণা। নানা আলোচনা ও সমালোচনার পর পুরো কমিটি করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের চার নেতাকে। সম্মেলনের এক বছরেও সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে কমিটি করতে না পারায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ওই চার নেতাকে এ দায়িত্ব দেন।

কেন্দ্রীয় সম্মেলনের এক বছর পর গত ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ।

এ কমিটিতে বিতর্কিতদের রাখার অভিযোগ ওঠে। বিতর্কিতদের বাদ দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের ১৩ দিনের মাথায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মাত্র ১৯ জনের পদ শূন্য ঘোষণা করার কথা জানায় ছাত্রলীগ।

২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আড়াই মাস পর গত বছরের ৩১ জুলাই শোভনকে সভাপতি ও রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত হয়। গত বছরের ১১ ও ১২ মে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!