• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাপার চাপে অতিষ্ঠ বিএনপি!


বিশেষ প্রতিবেদক মার্চ ৩০, ২০১৯, ০১:১০ পিএম
জাপার চাপে অতিষ্ঠ বিএনপি!

ঢাকা : বিএনপিতে জামাত-মুসলিম লীগ নেতাদের যোগদানকারীর সংখ্যা যেমন কম নয়, তেমনি বিভ্রান্ত বাম থেকেও যোগ দিয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগ থেকেও বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন অনেকে। জাতীয় পার্টি থেকেও বিএনপিতে আসা অনেক নেতাকর্মী রয়েছে। বিএনপি হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে যোগ দেওয়া একটি মিশেল দল।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিতে সাবেক জাপার নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এবং তাদের চাপে অতিষ্ঠ মূল বিএনপি। বিএনপির মূল নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টি থেকে আগতরা এখন মূল বিএনপির জন্য আপদে পরিণত হয়েছে। তারা দলের মধ্যে হতাশা ছড়ানোর পাশাপাশি দলকে বিভক্ত করার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, বিএনপিতে জাপা থেকে আসা নেতার সংখ্যা নেহায়তই কম নয়। কিন্তু জাতীয় পার্টি থেকে আসা কয়েকজন নেতা এখন দলের মধ্যে বিঁষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে বলে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় একাধিক নেতার অভিযোগ। কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় জাপা থেকে আগত শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বিএনপির মহাসচিবের কঠোর সমলোচনা করেছেন। তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তীব্র সমলোচনা করে বলেছেন যে, এ ধরনের ফ্রন্ট দরকার নেই। ঐ অনুষ্ঠানে তিনি এটাও বলেন যে, ‘আমাদের নেতা খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য কাউকে নেতৃত্ব দেওয়াটা ঠিক হয়নি। এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন দরকার নেই।’

ওই অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন। তিনি সেখানেই শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের সমলোচনার জবাব দেন। তিনি বলেন যে, তিনি যা কিছু করেছেন সবকিছু বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে যাদেরকে পাই না। তারাই এরকম সমলোচনা করে।’ অনুষ্ঠানের পর মির্জা ফখরুল তীব্রভাবে আক্রমন করেন শাহ মোয়াজ্জেমকে। তিনি বলেন, ‘দলের মধ্যে আপনারা বিভক্তি সৃষ্টি করেছেন। দলের হতাশা বাড়াচ্ছেন। হাত তালি দেওয়ার জন্য অনেক দামি দামি কথা বলা যায়। কিন্তু কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের জন্য লোক পাওয়া যায় না।’

শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন নব্বই পর্যন্ত স্বৈরাচারী এরশাদের অন্যতম আস্থাভাজন ছিলেন এবং অন্যতম চাটুকার ছিলেন। তিনি তার বিভিন্ন বক্তৃতায় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগকে তীব্রভাবে সমলোচনা করতেন। ‘দুই নেত্রী মিলিত হলে কিছুই উৎপাদিত হয় না’- এমন অশালীন কথার জন্মদাতা এই শাহ মোয়াজ্জেম। তার বক্তব্যকে দুর্ঘন্ধময় বলেও উল্লেখ করতেন রাজনীতিবিদরা। সেই শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এখন বিএনপিতে এসে দলটির আপদে পরিনত হয়েছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে সবচেয়ে প্রথম যিনি দল পুনর্গঠন এবং নেতৃত্বের ব্যর্থতার কথা বলেন তিনি হলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। তিনি এরশাদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। জাতীয় পার্টির অন্যতম নীতিনির্ধারক ছিলেন তিনি। নব্বইয়েও এরশাদের ছেড়ে দেওয়া রংপুরের একটা আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি সংসদে এসেছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে ডিগাবাজিতে যারা বিখ্যাত তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন এই মওদুদ আহমেদ। তিনি বিএনপির এখন অন্যতম নীতি নির্ধারক এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য। এই নেতা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন। দলকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রায় অনুপস্থিত। কোন কর্মসূচীতে তাকে দেখা যায় না।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ফোরামে বিএনপিরই কঠোর সমলোচনা করছেন। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ যখন বলছেন তখন দলের ভিতর অনৈক্য তৈরী হচ্ছে। ব্যারিস্টার মওদুদের আরেকটা পরিচিতি হলো তিনি খালেদা জিয়ার আইনজীবি ছিলেন এবং নাইকো দুর্নীতি মামলার অন্যতম কুশলী।

বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন যে, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা। খালেদা জিয়ার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হওয়া এই সবকিছু হয়েছে মওদুদের কারসাজিতেই। মওদুদকে দলের কেউই যেমন বিশ্বাস করেন না, তেমনি এখন থাকে দলের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য এবং দলের বিভক্তি সৃষ্টির জন্য দায়ী করা হচ্ছে।

বিএনপির আরেক নেতা হলেন নিতাই রায় চৌধুরী। তিনিও হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের ঘনিষ্ঠ নেতা ছিলেন। তিনিও পরে বিএনপিতে যোগদান করেন। যারা দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরী করতে চাইছেন এবং দলের বর্তমান নেতাদের সমলোচনা করছেন অথচ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করছেন না তাদের অন্যতম হলেন নিতাই রায় চৌধুরী। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি বিভিন্ন বক্তব্যে সরকারের সমলোচনা করার বদলে বিএনপির সমলোচনা করছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে মূল ধারার বিএনপি যারা তারা এক বৈঠকে মিলিত হয়ে জাপা থেকে আগতদের অতিকথনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন যে, এখন দায়িত্ব হলো সরকারের সমলোচনা করা, সরকারের ভুলত্রুটিগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা। আন্দোলন সংগ্রামের জন্য কর্মী নেতাকর্মীদেরকে উজ্জীবিত করা। কিন্তু তা না করে যারা বিএনপির মধ্যেই সমলোচনা ও দলকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন, তাদের নিশ্চয়ই অন্যকোন মতলব আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, জাপা থেকে যারা বিএনপিতে এসেছেন বা অন্য দল থেকে যারা বিএনপিতে এসেছেন, তাদেরকে কেনাকাটা করা সহজ। তারা সরকারের ইশারায় এটা করছেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বলেছেন, ‘যারা সরকারের সমলোচনা না করে বিএনপিকে সমলোচনা করছে এবং  বিএনপির মধ্যে হতাশা ছড়াচ্ছে, তাদের নিশ্চয়ই অন্যকোন মতলব আছে। তারা দলের শুভাকাক্সিক্ষ নন।’ তার এই বক্তব্যের পরই বিএনপিতে জাপা নেতাদের অতিউক্তিতে অস্বস্তি বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাপার নেতারা কেন এত বাড়াবাড়ি কথাবার্তা বলছেন, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তবে বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, শিগগিরই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হবে। সে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যদি বিএনপি নিয়ে কোন সমলোচনা থাকে বা বিএনপির জন্য যদি কোন পরামর্শ থাকে তাহলে দলীয় ফোরামে দিতে হবে। প্রকাশ্য সভায় বা সেমিনারে এ ধরনের মুখরোচক বক্তব্য দিয়ে হাততালি নেওয়ার যদি চেষ্টা করা হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!