• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা এখনো ফাঁকা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৯, ২০১৯, ০৮:০০ পিএম
ঢাকা এখনো ফাঁকা

ঢাকা : ঈদের ছুটি শেষ হলেও রাজধানী ঢাকা এখনো ফাঁকা রয়েছে। প্রাণ ফিরে পেতে আরো দু-একদিন সময় লাগতে পারে। মানুষের ভারে ন্যুব্জ ঢাকা ঈদের ছুটিতে বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। বৃষ্টিতে ঝকঝক করছে রাস্তাঘাট। রাজধানীর প্রকৃতিও সেজেছে নতুনরূপে। গাছে গাছে ফুটেছে ফুল, পাতাতেও সবুজের ঝলকানি। চারপাশ ফুলের গন্ধে একাকার।

রাজধানীর পান্থপথ থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে যেতে রাস্তা-বিভাজন (রোড ডিভাইডার) অংশে বেড়ে উঠেছে বকুল, বটসহ বেশকিছু গাছপালা। এর মধ্যে রয়েছে বকুলের আধিক্য। এক বছর ধরে চলাচল করলেও শনিবার (৮ জুন) শমরিতা হাসপাতালের কাছে এ রাস্তায় উঠতেই নাকে আসে বকুলের সুবাস। অথচ এর আগে কখনো বকুলের সুবাস মেলেনি। যানবাহনের ধোঁয়া, দূষিত বায়ু, শব্দ ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের আধিক্য ভেদ করে হয়তো বকুলের সুবাস পৌঁছতে পারত না।

এ রাস্তা-বিভাজনের প্রায় পুরো অংশজুড়েই যে রয়েছে বকুল গাছের ছড়াছড়ি, তা কর্মব্যস্ততার কারণে হয়তো মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করা হয়নি।

বর্ষার আকাশ; কখনো মেঘ, কখনো রোদের দেখা মিলছে। মাথার ওপরে থাকা সূর্যে রাস্তার মাঝখান পর্যন্ত এসে পড়ছে বকুলের ছায়া। তবে রাস্তার মাঝখান পর্যন্ত নেই বকুলের পাতা, ফুল ও ফুলের বোঁটা। যদিও রাস্তা-বিভাজন ঘেঁষে পাতা, ফুল ও বোঁটার দেখা মেলে। রাস্তায় যানবাহনের চাপ কমলেও অল্প-বিস্তর চলাচলই হয়তো এর কারণ।

কোটি মানুষের বাস রাজধানী ঢাকায়। ঈদুল ফিতরের আগের দিন পর্যন্ত লাখো মানুষ রাজধানী ছেড়েছেন। ফলে কমেছে মানুষ, যানবাহন ও দূষণ। নেই অস্থির কর্মব্যস্ততা। বাস অযোগ্য শহরের শীর্ষে থাকা ঢাকা তিন থেকে চার দিনের জন্য যেন হয়ে উঠেছিল বাসযোগ্য একটি শহর।

রাজধানীর রাস্তা-বিভাজনে, রাস্তার পাশে, বাসার পাশে, বাসার ছাদে, ফাঁকা জায়গায়, বিনোদনকেন্দ্রে গাছপালার সংখ্যা কিন্তু একেবারে কম নয়। তবে এ শহরের যানবাহন ও মানুষের তুলনায় তা নিতান্তই কম।

মানুষ ও যানবাহন কমে যাওয়ায় সেসব গাছের অক্সিজেন দেওয়া যেন কিছুটা টের পাওয়া যাচ্ছিল। ফুল, লতাপাতার সুবাস পাওয়া যাচ্ছিল। বৃষ্টি ছিল। এ বৃষ্টি তাকে দিয়েছে আরো সজীবতা। এ ক’টা দিন যেন গাছ, লতাপাতা, অক্সিজেন আর বৃষ্টির দখলে ছিল ঢাকা।

গতকাল শনিবারও যেন বাসযোগ্যই ছিল। ইতোমধ্যে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়াদের অনেকেই। শনিবার অফিসও করেছেন কেউ কেউ। রোববার থেকে বড় একটা অংশ অফিস করবেন। এ সপ্তাহের মাঝামাঝি হয়তো পুরোদমে অফিস শুরু হয়ে যাবে। বেড়ে যাবে মানুষ, যানবাহনের উপস্থিতি ও দূষণ। সেই সঙ্গে ঢাকা হারাবে বর্তমান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতা।

রাজধানীর রাস্তাঘাট হেঁটে দেখা যায়, কিছু কিছু দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। বসুন্ধরা শপিংমলেও লোকজনের যাতায়াত দেখা গেছে। অপর পাশের ফার্নিচারের দোকানগুলোও খোলা। তবে কারওয়ানবাজারের ওই এলাকাতেই বেশকিছু দোকানপাট বন্ধ দেখা যায়। ফুটপাতের কিছু কিছু দোকানপাটও খুলতে দেখা গেছে।

কলাবাগানের মুদির দোকানি মো. মমিনুল হক ঈদের মধ্যেও ঢাকাতেই ছিলেন। তিনি বলেন, লোকসমাগম এখনো সে রকম হয়নি। আগামীকাল থেকে হয়তো লোকজন বেড়ে যাবে। বেসরকারি লোকজন আইতে দেখছি, কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেইভাবে দেখি নাই। ঈদের দিন যে কয়েকটা দোকানপাট খোলা দেখছি, এখন তার চেয়ে একটু বাড়ছে।

মমিনুলের সঙ্গে কথা বলার সময় তার পূর্বপরিচিত এক গ্রাহক আসেন। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ওই ব্যক্তি ক্ষোভ থেকে এ মুদি দোকানিকে বলতে থাকেন, কোম্পানি পারলে ঈদের দিনও ছুটি দিত না। ঈদের আগেও কয়েক শুক্রবার কাজ করিয়ে নিয়েছে। ছুটির সময় আবার বলে দিছে, ঈদের পরের কয়েক শুক্রবারও বন্ধ দেবে না। তাইলে আমি ঈদে ছুটি পাইলাম কই, আমার তো আরো বেশি কাজ করতে হলো।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বৃষ্টি নেই। বাড়তে শুরু করেছে যান চলাচলও। এ রকম অবস্থায় শাহবাগের ব্যস্ততম রাস্তা-বিভাজনের ওপর বেড়ে ওঠা গাছপালাগুলোয় পড়তে শুরু করেছে ধুলাবালির স্তর।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের চা বিক্রেতা মো. আকবর হোসেন ঈদ করেছেন ঢাকায়। চাঁদপুরের আঞ্চলিক সুরে তিনি বলেন, মনে হচ্ছিল গ্রামে ঘুমাচ্ছি। বৃষ্টি ছিল। গাড়ির আওয়াজ ছিল না। কিচ্ছু ছিল না। আবার গাড়ি-ঘোড়া বাড়তাছে, আরো বাড়বে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!