• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তাহলে কন্যাকে কী করবো?


হাসিনা আকতার নিগার জুলাই ৭, ২০১৯, ০৬:২৫ পিএম
তাহলে কন্যাকে কী করবো?

নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাতে যখন দেশ তোলপাড় তখন-
“দিনের আলোয় কাটুক
সব অন্ধকার রাত
এই বাংলায় চাই না
আর কোন ভিকটিম নুসরাত।”

পুলিশের এ শ্লোগানটি মানুষের কাছে হয়েছিল স্বপ্ন জাগানিয়া বাঁশি। সামাজিক মাধ্যমে শ্লোগানটি ভাইরাল হয়ে পুলিশের মতই সবার চাওয়া ছিল, আর কোন পরিবার তার কন্যাকে নুসরাতের মত মরতে দেখবে না। কিন্তু শপথের শ্লোগানটি কেবল শ্লোগান হয়ে রইল। বরং নুসরাতের সাথে আরো অনেক নাম যুক্ত হয়েছে। একই সাথে ধর্ষকদের লজ্জাহীন চেহারাগুলো দেখে মনে হয় এদের জন্য বিচারবহির্ভূত মৃত্যুই শ্রেয়। যদিও আইনকে এভাবে নিজের হাতে তুলে নেয়া অন্যায়। কিন্তু উপায়হীন এ সমাজ ও রাষ্ট্র।

খবরের পাতায় ধর্ষণের ঘটনার ভয়াবহতা দেখে শঙ্কা জাগে ঘরের মেয়েটিকে নিয়ে। কারণ ৭ বছরের সামিয়ার উপর পাশবিক নির্যাতন করে থামেনি। বরং নিজেদের অপরাধ ঢাকতে ফুটফুটে মেয়েটিকে চিরতরে শেষ করে দিতে দ্বিধা করেনি পাষণ্ড মানুষরূপী অমানুষগুলো।

সারা দেশে নিত্যদিনের ঘটনাতে পরিণত হয়ে উঠছে নারীর উপরের এ অত্যাচার। নারীর নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারছে না কেউ। ঘরে বাইরে সকল স্থানে একই অবস্থা। শিক্ষককে বলা হয় দ্বিতীয় জন্মদাতা। কিন্তু জ্ঞানের আলো দিয়ে মানুষ গড়ার কতিপয় কারিগর এখন ধর্ষক। স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ বিকৃত মানসিকতার ব্যাখ্যা নেই। একজন মাদ্রাসার শিক্ষক যখন ১২টি মেয়ের সাথে ব্যাভিচার করাকে শয়তানের কাজ বলে সাফাই গায়, তখন ধর্মের দোহাই দেয়া শয়তানরূপী শিক্ষকের এ সমাজে বাঁচার কোন অধিকারকে মেনে নেয়া যায় না। তার শয়তানকে বধ করতে হারকিউলিসেরই দরকার। এ শয়তানদের কারণেই ক্রসফায়ারে ধর্ষকের মৃত্যুতে উল্লসিত হয় মানুষ। বিবেকের চোখে এ উল্লাস যদিও রাষ্ট্র-সমাজের জন্য লজ্জার। আইন ও বিচার ব্যবস্থার জন্য পরাজয়। তবু একজন ধর্ষক সমাজ থেকে কমেছে এটাই হয় স্বস্তির কথা।

নুসরাতের ঘটনা দেখে আশা ছিল অত্যন্ত দেশে নারীর উপর পাশবিক বর্বরতা কিছুটা হলেও কমবে। মানুষ শিক্ষা নিবে। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটেনি। বরং ঘরের মা-বোন-স্ত্রীকে নিয়ে শঙ্কার জায়গাটি এমন অবস্থায় চলে যাচ্ছে যা নারীর অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে ক্রমশ। তবে কি অলিখিতভাবেই নারীর জীবন শৃঙ্খলের বেড়ি পড়ছে?

আইনি সাজার কঠোরতা বা ক্রসফায়ারে থামছে না পাশবিক এ মনোবৃত্তি। এ অবস্থায় ব্যক্তি মানসিকতা পরির্বতন করা খুবই জরুরি। আর এর জন্য কাউন্সেলিং করতে হবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সমাজের সকল স্তরে। কারণ যৌন জীবনের বিকৃত মানসিকতা বাহিক্যভাবে বোঝা যায় না। আর কোন ব্যক্তি নিজে থেকে তার এ মানসিকতা নিয়ে কথা বলবে না এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। সুতরাং নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে সচেতনতা করার মাধ্যমে কাউন্সেলিং করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না ধর্ষক ব্যক্তিটি এ সমাজে স্বাভাবিক রূপেই বসবাস করে। সেই সাথে এর অন্তরালের কারণগুলো বিশ্লেষণ করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের উপযুক্ত না হবার আগেই মানুষের হাতে সারা বিশ্ব। নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি মানুষের অধিক আকর্ষণ সহজাত প্রবৃত্তি। আর এ প্রবৃত্তির কারণে ষড়রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এতে করে ব্যক্তি আচরণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে।

বর্তমান সময়ের ঘটনাগুলোতে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় হলো ধর্ষণের মেত ঘটনাগুলো যারা ঘটাচ্ছে তারা বয়সের দিকে অপরিপক্ক নয়। ন্যায়-অন্যায় বোঝার মত বোধ তাদের আছে  সুতরাং এমন ব্যক্তিরা নিজের কু-রিপুর বিভৎস খেলাতে হত্যা করেছে রূপা, তনু, নুসরাত আর ছোট সামিয়াকে। আর তাদের এ বিকৃত মানসিকতা এখন দেশের কন্যা সন্তানের মা-বাবার কাছে কবির ছড়ার ‘বর্গী এলো দেশে’র মতো আতঙ্ক।

সোনালীনিউজ/এইচএন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!