• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুঃসাহসী ড্যানিয়েল ক্রেগ


বিনোদন প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৬, ২০১৯, ০৯:৩০ পিএম
দুঃসাহসী ড্যানিয়েল ক্রেগ

ঢাকা : জেমস বন্ড নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নীল চোখের অভিনেতা ড্যানিয়েল ক্রেগ। জেমস বন্ড পরিচয়ের বাইরেও যে তার পরিচিতির ব্যাপ্তিটা বিশাল। জনপ্রিয় ব্রিটিশ গোয়েন্দা জেমস বন্ড চরিত্রে ড্যানিয়েল ক্রেগের শেষ ছবি ‘নো টাইম টু ডাই’র প্রথম ট্রেলার উন্মুক্ত হলো অনলাইনে। জিরো জিরো সেভেন হিসেবে তার শেষ অ্যাডভেঞ্চারের একঝলক উপস্থাপন করা হয়েছে এতে।

বিশ্ব যখন নতুন কোনো হুমকির মুখে পড়ে, জেমস বন্ড তো আর অবসরে থাকতে পারেন না! তাই আবারো দুঃসাহসী অভিযানে ডাক পড়ে তার। তার এবারের শত্রুর ভূমিকায় আছেন অস্কারজয়ী অভিনেতা রামি মালেক। শরীরের একাংশ বিকৃত ও বিদঘুটে সাজে ট্রেলারে দেখা গেছে তাকে।

বন্ড সিরিজের আগের পর্ব ‘স্পেক্টর’-এর মতো ড. ম্যাডেলিন সোয়ান চরিত্রে ফিরছেন লেয়া সেদু। ওই ছবির ভিলেন চরিত্রে রূপদানকারী ক্রিস্তফ ওয়াল্টজ আছেন এবারের কিস্তিতেও। এছাড়া কিউ চরিত্রে বেন হুইশো, মনিপেনির ভূমিকায় নাওমি হ্যারিস ও এম হিসেবে যথারীতি থাকছেন র্যালফ ফাইনেস। সিআইএ প্রতিনিধি ফেলিক্স লাইটার চরিত্রের মাধ্যমে একযুগ পর বন্ড সিরিজে ফিরছেন জেফ্রি রাইট।

‘নো টাইম টু ডাই’ পরিচালনা করেছেন ক্যারি জোজি ফুকুনাগা। বিশাল ক্যানভাসে রুদ্ধশ্বাস সব অ্যাকশন দৃশ্য রেখেছেন তিনি। ট্রেলারে এগুলো নিশ্চয়ই উপভোগ্য লাগছে ভক্তদের! ট্রেলারে নতুন কয়েকটি চরিত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুই অভিনেত্রী লাশানা লিঞ্চ ও আনা ডি আরমাস। ছবিটি মুক্তি পাবে ২০২০ সালের এপ্রিলে। এটি জেমস বন্ড চরিত্রে ব্রিটিশ তারকা ড্যানিয়েল ক্রেগের পঞ্চম ও শেষ চলচ্চিত্র। আগের চারটি ছবি হলো ‘ক্যাসিনো রয়েল’, ‘কোয়ান্টারম অব সোলেস’, ‘স্কাইফল’ ও ‘স্পেক্টর’।

১৯৬৮ সালের ২ মার্চ ইংল্যান্ডের চেষ্টারে জন্মগ্রহণ করেন জেমস বন্ড খ্যাত এই অভিনেতা। তার পিতা টিমোথি জন ওয়ার্টন ক্রেগ এবং মাতা ক্যারোল অলিভিয়া। মাতা অলিভিয়া ছিলেন একজন আর্ট শিক্ষক। ছোটবেলায় বিভিন্ন স্কুলে কেটেছে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন। এর মধ্যে রয়েছে হলি ট্রিনিটি প্রাইমারি স্কুল, হিলবে হাই স্কুল, ক্যালডি গ্রাঞ্জ গ্রামার স্কুল। অবশেষে ১৯৯১ সালে তিনি বারবিকানের গিল্ঢল স্কুল অব মিউজিক এন্ড ড্রামা থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

শৈশব থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে সখ্য ড্যানিয়েল ক্রেগের। ছোটবেলায় ক্রেগ তার মা ও বোনের সঙ্গে থিয়েটার দেখতে যেতেন। মা অলিভিয়ার থিয়েটারে অভিনয় করে এমন অনেক বন্ধু ছিল। ফলে এই জগৎটাকে আরো কাছে থেকে দেখার সুযোগ পান তিনি। সেখান থেকেই মূলত অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা জন্মায় ক্রেগের। ১৬ বছর বয়স অভিনয়ের টানে ঘর ছাড়েন ক্রেগ। চলে আসেন লন্ডন শহরে, যোগ দেন ন্যাশনাল ইয়ুথ ক্লাব নামক নাট্যদলে। আর এভাবেই থিয়েটারের মাধ্যমে ড্যানিয়েলের অভিনয় জীবনের শুরু।

১৯৯২ সালে ক্রেগ পাওয়ার অব ওয়ান নামক মুভিতে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথম বড় পর্দায় হাজির হন। মুভিটিতে তিনি অভিনয় করেন একজন আফ্রিকান সৈন্যের চরিত্রে। এর পরপর ড্যানিয়েল বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেন। ১৯৯৩ সালে ড্যানিয়েল ছোট পর্দায় হাজির হন জিরো নামক একটি টিভি সিরিজ নিয়ে। তিনি দুটি এপিসোডে অভিনয় করেন। কেননা বড় পর্দার মাধ্যমে অভিষেক হলেও ড্যানিয়েল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন ছোট পর্দার মাধ্যমে। ১৯৯৮ সাল যেন ড্যানিয়েলেরই ছিল। কেননা এই বছরটা তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সাফল্যমণ্ডিত বছর। এ বছরই মুক্তি পায় তার অভিনীত লাভ ইজ ডেভিল চলচ্চিত্রটি। এ যেন এক অভূতপূর্ব অর্জন ড্যানিয়েলের ক্যারিয়ারের!

লাভ ইজ ডেভিলের পর তিনি হেঁটেছেন এলিজাবেথ, দ্য ট্রেঞ্চ, সাম ভয়েসেস, হোটেল সেপ্লনডিড, আই ড্রিমড অব আফ্রিকা নামক চলচ্চিত্রগুলোর হাত ধরে সাফল্যের সাঁকো বেয়ে। এর মধ্যে দ্য ট্রেঞ্চ এবং এলিজাবেথের কথা না বললেই নয়। দ্য ট্রেঞ্চ ড্যানিয়েল ক্যারিয়ারের ব্লকবাস্টার হিট ছবিগুলোর একটি। আর এলিজাবেথ ঐতিহাসিক একটি বায়োপিক যা তাকে একজন মেধাবী অভিনেতা হিসেবে প্রশংসা এনে দেয়।

একাবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই ড্যানিয়েল আসেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সঙ্গে জুটি বেধে লারা ক্রাফট : টম্ব রাইডার মুভিতে। এর পরের বছরই ড্যানিয়েল অভিনয় করেন রোড টু পার্ডিশন নামক মুভিতে। এই চলচ্চিত্রটিও তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে সেই সঙ্গে ড্যানিয়েলও সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে আরেক ধাপ ঊর্ধ্বে উঠে যান।

এছাড়া দ্য মাদার মুভির সফলতা এবং এতে তার অনবদ্য অভিনয় আরো একবার প্রমাণ করে দেয়, ড্যানিয়েলের যে বিজয়রথ এগিয়ে চলেছে তা আর থামার নয়। আর এই রথে চড়ে সামনে যেতে যেতে ক্রেগের সঙ্গী হয় লায়ার কেক, এনডিউরিং লাভ, দ্য জ্যাকেট মুভিগুলো। দ্য জ্যাকেট তো বক্স কাঁপিয়ে ব্লকবাস্টার হিটের কাতারে পৌঁছে যায়। ড্যানিয়েল ক্রেগের অসাধারণ অভিনয় প্রতিভা তাকে জায়গা করে দেয় বিশ্ববিখ্যাত সেই জেমস বন্ড সিরিজে। তা-ও আবার ছোটখাটো কোনো চরিত্রে নয়, স্বয়ং জেমস বন্ড হিসেবে।

২০০৬ সালে তিনি প্রথম জেমস বন্ড হিসেবে আসেন ক্যাসিনো রয়েল মুভিটিতে। এরপর ২০০৮ সালে আবার তিনি জেমস বন্ড হিসেবে আসেন কোয়ান্টাম অব সোলাস নামক চলচ্চিত্রে। দীর্ঘ চার বছর বিরতি নিয়ে ড্যানিয়েল ২০১২ সালে আবার জেমস বন্ড রূপে আসেন স্কাইফল মুভিতে। স্কাইফলের আয় পৌঁছে যায় মিলিয়ন ছাড়িয়ে বিলিয়নের ঘরে। ১.১ বিলিয়ন আয় করে আন্তর্জাতিকভাবে রেকর্ড সৃষ্টি করে ড্যানিয়েলের স্কাইফল।

এরপর আবার তাকে জেমস বন্ড রূপে দেখা যায় ২০১৫ সালে স্পেক্ট্রা চলচ্চিত্রে। সিনেমাপ্রেমীরা হট কেকের মতো লুফে নেয় স্পেক্ট্রাকে। জেমস বন্ড তাকে ব্যাপক সফলতা এনে দিলেও ড্যানিয়েল কিন্তু জেমস বন্ডের গণ্ডিতেই আবদ্ধ থাকেননি। জেমস বন্ডের বাইরেও বিভিন্ন চরিত্রে বিভিন্ন মুভিতে হাজির হয়েছেন তিনি। নিজের মেধা দ্বারা ফুটিয়ে তুলেছেন তার অভিনীত চরিত্রগুলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর কথা বলতে গেলে ফ্লাশব্যাক অব এ ফুল, দ্য গার্ল উইথ দ্য ড্রাগন ট্যাটু, কাউবয়েস অ্যান্ড এলিয়েনস, এ স্টেডি রেইন মুভিগুলোর কথা বলতেই হয়।

সেরা অভিনেতা হিসেবে তিনি নিজের ঝুলিতে সাজিয়েছেন এডিনবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ড, ব্রিটিশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস, লন্ডন ফিল্ম ক্রিটিকস সার্কেল অ্যাওয়ার্ডস, এম্পায়ার অ্যাওয়ার্ডস, ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড ব্রিটিশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, সেন্ট জর্দি অ্যাওয়ার্ডস এবং ক্রিটিকস চয়েস অ্যাওয়ার্ডস।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!