• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশে শনাক্তের অর্ধেকই সুস্থ


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৭, ২০২০, ০২:৫৮ পিএম
দেশে শনাক্তের অর্ধেকই সুস্থ

ছবি: ইন্টারনেট

ঢাকা: গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৫৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল দুই হাজার ১৫১ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ২৭ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৪৫ জনে।

মঙ্গলবার (৭ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইনে বুলেটিন উপস্থাপন করেন অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। 

এ সময় তিনি জানান, নতুন যুক্ত একটিসহ মোট ৭৪টি ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার করা হয়েছে। করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ হাজার ৪৯১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৩ হাজার ১৭৩টি। 

এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো আট লাখ ৭৩ হাজার ৪৮০টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ২৭ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৪৫ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৫৫ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ১৫১ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৯৫৩ জন। এতে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৭৮ হাজার ১০২ জনে।

গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৫৫জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ ৪৬ জন এবং নারী নয়জন। এদের মধ্যে ১০ বছরের বেশি বয়সী একজন, ত্রিশোর্ধ্ব দুজন, চল্লিশোর্ধ্ব ছয়জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৮ জন, ষাটোর্ধ্ব ২১ জন, সত্তরোর্ধ্ব ছয়জন এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী একজন রয়েছেন। 

তাদের ২৭ জন ঢাকা বিভাগের, ১২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুজন রাজশাহী বিভাগের, সাতজন খুলনা বিভাগের, দুজন রংপুর বিভাগের, দুজন সিলেট বিভাগের, দুজন বরিশাল বিভাগের এবং একজন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। ৩৯ জন মারা গেছেন হাসপাতালে, ১১ জন বাসায় এবং একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সুস্থতার হার বাড়ছে। এ পর্যন্ত আক্রান্তের প্রায় অর্ধেকই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। শুরু থেকে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৮ জন। এদের মধ্যে করোনামুক্ত হয়েছেন ৭৬ হাজার ১৪৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের চেয়ে বেশি মানুষ করোনা জয় করেছেন। এদিন শনাক্ত ৩২০১ জন, সুস্থ হয়েছেন ৩৫২৪ জন। করোনামুক্তির এ হারকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

তারা বলেন, গত কয়েকদিনে আশানুরূপ রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। ভালো হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়লে কমবে মৃত্যুর ঝুঁকি।

সরকারি হিসাবে, দেশে সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে জুন মাসে। সুস্থও বেশি হয়েছেন ওই মাসেই। সোমবার পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৮ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৭৬ হাজার ১৪৯ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এদের মধ্যে জুন মাসেই করোনামুক্ত হয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৪৪ জন, যা মোট সুস্থতার ৬৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

১ জুলাই থেকে সোমবার পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২০ হাজার ১৩৫ জন। আরোগ্যলাভ করেছেন ১৬ হাজার ৫২৫ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনায় সবচেয়ে বেশি সুস্থ হয়েছেন ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে সুস্থতার হার ৭৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। এরপর যথাক্রমে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুর বিভাগ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরুতে বিশ্বের কোথাও এ সংক্রান্ত চিকিৎসাসেবা গোছানো ছিল না। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মানুষ কী করবে-বুঝে ওঠার আগেই অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রথমদিকে তাদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হয়েছে। হাসপাতালগুলো সেভাবে তৈরি ছিল না। ভেন্টিলেশন, অক্সিজেন, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা তেমন জোরদার ছিল না। কাজেই নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে।

দেশে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিল খুবই সীমিত। এ সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রটোকলসহ ধীরে ধীরে সব তৈরি হয়েছে। এগুলো তৈরি করতে করতেই সংক্রমণের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুও ছাড়িয়েছে দুই হাজারের ফলক। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসাসেবা জোরদার হওয়ায় সুস্থতার সংখ্যা বাড়ছে। করোনামুক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ায় মৃত্যুর হারও কমে আসবে। ধীরে ধীরে আক্রান্তের হারও কমতে থাকবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৯৬ জন। এ সময় নতুন করে ৩ হাজার ২০১ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ ৩ হাজার ৫২৪ জন।

জানতে চাইলে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, কয়েকদিন শনাক্ত কম দেখে সংক্রমণের হার কমেছে, তা বলা যাবে না। বিভিন্ন কারণে সংক্রমণের হার কম হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৮২ শতাংশ রোগীর লক্ষণ-উপসর্গ মৃদু থাকে। তারা বাসায় চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। আর বাকি ১৮ শতাংশ রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে। যারা বাড়িতে চিকিৎসা নেবেন তাদের পুরো বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নজরদারি করা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণের প্রথম দুই মাসে মার্চ ও এপ্রিলে আক্রান্ত হয়ে যারা বাসায় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন, তাদের সব তথ্য-উপাত্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে ছিল না। এ কারণে মার্চ ও এপ্রিল মাসে প্রতিদিন ১ থেকে সর্বোচ্চ ১১ জন পর্যন্ত রোগী সুস্থ হওয়ার তথ্য জানিয়ে আসছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় চলতি বছরের ৮ মার্চ। ওইদিন থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সুস্থ হয় ২৫ জন। ১ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩৫ জন সুস্থ হয়েছেন। অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ১৬০ জন। এরপর মে মাসের ১ তারিখে ১৪ এবং ২ তারিখে ৩ জন সুস্থ হয়ে ওঠায় সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭৭ জনে।

হঠাৎ করে ৩ মে সুস্থতার তালিকায় নাম যুক্ত হয় ৮৮৬ জন। এক লাফে সুস্থতার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৬৩ জনে। এর পর থেকে প্রতিদিন সুস্থতার তালিকায় যুক্ত হতে থাকে ১৫০-৩০০ রোগীর নাম। জুন মাসের প্রথম থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত ৫০০-৯০০ জনের নাম সুস্থতার তালিকায় যুক্ত হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ১৫ জুন একদিনে সুস্থতার তালিকায় যুক্ত হয় ১৫ হাজার ২৯৭ জনের নাম। ফলে সুস্থ রোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৩০ জন থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ হাজার ২৬৪ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সুস্থতার মাসভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, জুন মাসে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯৮ হাজার ৩৩০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৪৩ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার ৫০ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা মোট সুস্থ রোগীর ৬৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মে মাসে রোগী শনাক্ত হয় ৩৯ হাজার ৪৪৬ জন।

এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৬২১ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এপ্রিলে শনাক্ত হয় সাত হাজার ৬১৬ জন, সুস্থ হয়েছেন ১৩৫ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। করোনা শনাক্তের চার দিনের মাথায় ১২ মার্চ রোগী সুস্থতার কথা জানায় আইইডিসিআর। ওইদিন থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত করোনামুক্ত হয়েছেন ২৫ জন। রোগী শনাক্ত হয় ৫১ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৯ দশমিক ১০ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিন : স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুলেটিনে জানানো হয়, দেশে ৭৩টি পরীক্ষাগারের মধ্যে ৬৮টির পরীক্ষার ফল পাওয়া গেছে। দুটি সরকারি পরীক্ষাগার কারিগরি ত্রুটির কারণে রিপোর্ট দিতে পারেনি। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ হাজার ২০১টি। এর মধ্যে পরীক্ষা হয়েছে ১৪ হাজার ২৪৫টি।

এর আগের দিন ১৩ হাজার ৯৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজার ৩০৭টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারী।

এখন পর্যন্ত মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ এক হাজার ৬৫৭ জন, যা ৭৯ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং নারী ৪৩৯ জন, যা ২০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১-৯০ বছরের মধ্যে একজন, ৭১-৮০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৬১-৭০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে ২ জন এবং ২১-৩০ বছরের মধ্যে একজন।

অঞ্চল বিবেচনায় ঢাকা বিভাগে ১৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১ জন, বরিশাল বিভাগে ৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩ জন, খুলনা বিভাগে ২ জন, সিলেটে ৩ জন, রংপুরে ২ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৫ জন এবং বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৯ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৬৭৭ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৬ হাজার ৭৯৪ জন। বর্তমানে মোট আইসোলেশন করা হয়েছে ৩১ হাজার ৫৪৯ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম মিলিয়ে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ২ হাজার ১৭৮ জনকে। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৩ হাজার ৮০১ জন।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!