• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নববর্ষে দশটি চাওয়া


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১, ২০১৬, ০৯:৪৯ এএম
নববর্ষে দশটি চাওয়া

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল : ইংরেজি নববর্ষের দিনটি কোনোভাবেই অন্য কোনো দিন থেকে আলাদা নয়। বাংলা নববর্ষের তবু একটা অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল যোগাযোগ আছে। নক্ষত্রপুঞ্জের অবস্থান দিয়ে আকাশকে যে বারোটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, সেগুলো উদয়ের সময় দিয়েই বাংলা মাসগুলো ঠিক করা হয়েছে। তাই বাংলা নববর্ষ মোটেও জোড়াতালি দেওয়া কিছু নয়। ইংরেজি মাসগুলোর বিভাজনে কিংবা ইংরেজি নববর্ষে আমি এখনও সে রকম কিছু খুঁজে পাইনি।

ইংরেজি নববর্ষ যদি জুন মাসের ২১ তারিখে কিংবা ডিসেম্বরের ২১ তারিখ হত, তবু একটা কথা ছিল। কারণ তাহলে বলতে পারতাম, সূর্য তখন ঠিক কর্কট ক্রান্তির উপর কিংবা ঠিক মকর ক্রান্তির উপর এসে হাজির হয়। কাজেই ইংরেজি নববর্ষ আসলে অন্য যে কোনো একটা দিনের মতো, তার আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই।

তারপরও যেহেতু একটা ইংরেজি নববর্ষ, সেটা নিয়ে সারা পৃথিবীতেই নানা ধরনের বাড়াবাড়ি হয়। আমাদের দেশেও হয়েছে, পুলিশকে লাঠিপেটা করে নববর্ষের পার্টি ভাঙতে হয়েছে। আমার পরিচিত একটা সংগঠন, ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ রাতে সবাই যখন উদ্দাম পার্টি করার প্রস্তুতি নেয়, তখন সংগঠনের সদস্যরা কিন্তু কম্বল কিনে পথে-ঘাটে-স্টেশনে শীতের রাতে কুণ্ডুলি পাকিয়ে শুয়ে থাকা মানুষদের জীবনে একটু উষ্ণতার সুযোগ করে দিয়ে আসে। আমার মনে হয়েছে একটা নববর্ষ পালনের জন্যে এটা খুবই চমৎকার একটা উপায়।

যেহেতু আমাদের সবাইকেই ইংরেজি নববর্ষ নিয়ে অনেক হইচই করতে হবে, তাই আমিও তার প্রস্তুতি নিয়েছি। ইংরেজি নববর্ষে আমি কী চাই তার একটা তালিকা করেছি। আমি যখন কোনো কিছুর তালিকা করি, সেটা অনেক বড় হয়ে যায়। সেই বিশাল তালিকা থেকে আমি দশটি বেছে নিয়ে আজকে এই লেখাটি লিখতে বসেছি। এই নববর্ষে আমি কী কী চাই সেগুলো এ রকম:

১. ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর বিচার:
১৯৭১ সালের বিজয় দিবসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার পর সেখান থেকে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে আলাদা করা হয়েছিল (তার ভেতরে আমার বাবার হত্যাকারীও একজন)। নূতন স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ তাদের বিচার করার জন্যে যখন প্রস্তুতি নিয়েছিল, তখন জুলফিকার আলী ভুট্টোর পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানোর জন্য আটকে-পড়া প্রায় চার লাখ বাঙালিকে জিম্মি করে ফেলেছিল। শুধু তাই নয়, তারা ২০৫ জন বাঙালির পাল্টা বিচার করার হুমকি দিতে শুরু করেছিল।

এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশ যখনই জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছিল, তখনই পাকিস্তান চীনকে দিয়ে ভেটো দেওয়াতে শুরু করে। পাকিস্তান নিজেরাই এই ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে অঙ্গীকার করার পর, বাংলাদেশ আর কোনো উপায় না দেখে তাদেরকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে দেয়।

পাকিস্তান কখনও তাদের বিচার করেনি। শুধু তাই নয়, এত বছর পর তারা আস্ফালন করে ঘোষণা করেছে, পাকিস্তান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে কোনো গণহত্যা করেনি! কাজেই আমাদের সামনে এখন এই ১৯৫ জনের বিচার করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। বিচার করে গ্লানিমুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা পৃথিবীকে দেখানো যাবে যে, পাকিস্তান নামক বর্বর রাষ্ট্রটি এই দেশের উপর ১৯৭১ সালে কী ভয়ংকর একটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।

কাজেই এই নববর্ষে আমার প্রথম চাওয়া পাকিস্তানের ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে বাংলাদেশের মাটিতে বিচার করা।

২. হেনরি কিসিঞ্জারের প্রতীকী বিচার:
আমি যতটুকু জানি, পাকিস্তানের যুদ্ধাপরাধীদের এই দেশের মাটিতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব। কিন্তু হেনরি কিসিঞ্জারকে হয়তো সত্যিকারভাবে এই দেশের মাটিতে বিচার করা সম্ভব নয়। এই মানুষটি বাংলাদেশের জন্য একটি অভিশাপ। সে যে শুধু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের গণহত্যার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিল তা নয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সেটাকে একটা তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশের যে মানুষগুলো এই দেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, আমরা তাদের সবাইকে গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছি। আর যে মানুষগুলো আমার দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, তাদের কেন প্রতীকী বিচার করতে পারব না? ক্রিস্টোফার হিচেঞ্চের লেখা ‘ট্রায়ালস অব হেনরি কিসিঞ্জার’ বইটিতে তাকে বিচার করার জন্যে প্রয়োজনীয় যথেষ্ট মাল-মশলা রয়েছে।

কাজেই এই নববর্ষে আমার দ্বিতীয় চাওয়াটি হচ্ছে হেনরি কিসিঞ্জারের প্রতীকী বিচার!

৩. জামাতমুক্ত বিএনপি:
বাংলাদেশের সরকারি দল এবং বিরোধী দল দুটোকেই হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল। বিএনপি যতদিন জামাতের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধে রাখবে ততদিন সেটা হওয়া সম্ভব নয়। কাজেই আমি মনে করি, জামাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত বিরোধী দল দূরে থাকুক, বিএনপির বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল হওয়ারই নৈতিক অধিকার নেই।

কাজেই এই নববর্ষে আমার তৃতীয় চাওয়া হচ্ছে জামাতমুক্ত বিএনপি। আমার ধারণা, এটি যদি না ঘটে, বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে। বিএনপি যদি জামাতকে পরিত্যাগ করে, সম্ভবত গয়েশ্বর রায় এবং তার মতো মানুষেরাও বিএনপি ছেড়ে জামাতে যোগ দেবে। কিন্তু সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই!

৪. আলাদা সাইকেল লেন:
আমার ছাত্র এবং সহকর্মীরা মিলে আমাকে একটা সাইকেল উপহার দিয়েছে, বাংলাদেশের তৈরি সাইকেল এবং সাইকেলটি দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে গেছে। আজকাল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা সাইকেলে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। আমার মনে হচ্ছে, শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সারাদেশেই সাইকেল নিয়ে এক ধরনের আন্দোলনের মতো শুরু হয়েছে। শুধু আন্দোলন নয়, একে রীতিমতো বিপ্লবে পরিণত করে ফেলা সম্ভব যদি শুধুমাত্র বড় বড় রাস্তার পাশে ছোট এক চিলতে জায়গায় একটা সাইকেলের লেন করে দেওয়া যায়। ঢাকার যে বিশাল ট্রাফিক জ্যাম সেটা দূর করে আমাদের সময় বাঁচানোর এর থেকে সহজ কোনো পরীক্ষিত পথ আছে বলে আমার জানা নেই।

কাজেই এই নববর্ষে আমার চতুর্থ চাওয়াটি হচ্ছে দেশের বড় বড় সড়কের পাশে আলাদা সাইকেল লেন।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা:
দেশে এখন যতগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে তাদের সবগুলোর আলাদা আলাদা ভর্তিপরীক্ষা নেওয়ার মতো দিন খুঁজে পাওয়া যায় না। কাজেই ছাত্রছাত্রীদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্যে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিত্যাগ করতে হয়। দূরের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের হলেও ছেলেমেয়েরা বাধ্য হয়ে কাছাকাছি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জাতীয় চরিত্র ধীরে ধীরে আঞ্চলিক চরিত্রে পাল্টে যাচ্ছে। এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা দেওয়ার অমানবিক বিষয়টা এতদিনে সবাই জেনে গেছে। এটা সম্পর্কে নূতন করে বলার কিছু নেই।

কিন্তু যে বিষয়টা সবাই জানে না সেটি হচ্ছে, একই সঙ্গে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা বেশ কয়েকটাতে সুযোগ পাবার পর মাত্র একটাতে বেছে নেওয়ার কারণে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সিট ফাঁকা থেকে যায়। শেষ মুহূর্তে সেই ফাঁকা সিট বন্ধ করার জন্যে অনেক তোড়জোড় করার পরও কিন্তু সব সিট পূরণ হয় না। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সিটের জন্যে ছেলেমেয়েরা পাগলের মতো চেষ্টা করে, অন্যদিকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট ফাঁকা থেকে যায়– এর চাইতে দুঃখের ব্যাপার আর কী হতে পারে?

সমন্বিতভাবে সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটা ভর্তিপরীক্ষা নিলে এই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। কাজেই এখন এটা হচ্ছে শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার, যখন এই দেশের ছেলেমেয়েরা সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা দেবে, তার কারণ এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

এই নববর্ষে এটি হচ্ছে আমার পঞ্চম চাওয়া, আমি এই বছরেই এটি দেখতে চাই!

৬. দুটি পাবলিক পরীক্ষা:
এই দেশে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করার সময় দুটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ছেলেমেয়েদের এখন চার চারটি পাবলিক পরীক্ষা দিতে হয়। আমাদের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট চৌকস। তারা খুব সহজেই চারটি কেন, আরও বেশি পরীক্ষা দিতে পারত, যদি সেগুলো তারা নিজের মতো করে দিত। কিন্তু আমাদের অভিভাবকরা মোটামুটি উন্মাদের মতো হয়ে গেছেন। এই চারটি পাবলিক পরীক্ষাতেই গোল্ডেন ফাইভ নামক বিচিত্র বিষয়টি পেতেই হবে বলে তারা তাদের ছেলেমেয়েদের এত ভয়ংকর চাপের মুখে রাখেন যে, এই ছেলেমেয়েদের শৈশবটি এখন বিষাক্ত হয়ে গেছে।

যারা ছোট শিশুদের সংগঠন করেন তারা বলেছেন, পঞ্চম শ্রেণি, অষ্টম শ্রেণি বা দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ছেলেমেয়েগুলোকে তারা সাহিত্য-সংস্কৃতি-শিল্প কোনো বিষয়ে আনতে পারেন না। কারণ তাদের বাবা-মায়েরা তাদেরকে প্রাইভেট, কোচিং কিংবা ব্যাচে পড়ানো ছাড়া অন্য কিছুতে তারা সময় দিক সেটা মানতেই রাজি নন।

আমি চাই, এই ছেলেমেয়েগুলো তাদের নিজেদের শৈশব উপভোগ করুক। এই দেশের শিক্ষাবিদেরা মিলে দুটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলেছিলেন। নববর্ষে আমার চাওয়া, দেশের শিশুদের আবার দুটি পাবলিক পরীক্ষার মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা হোক।

৭. পত্রিকায় গাইড বই প্রকাশ বন্ধ করা:
আমাদের দেশে গাইড বই প্রকাশ করার উপর বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু দেশের বড় বড় বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকাগুলো বড় বড় গালভরা নাম দিয়ে নিয়মিতভাবে গাইড বই প্রকাশ করে। দেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর যখন সত্যিকার শিক্ষার জন্যে যুদ্ধ করার কথা, তখন তারা যখন নিজেরাই গাইড বই ছাপায় (এবং অনেক সময় সেটি গর্ব করে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করে)। তখন আমাদের লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।

এই নববর্ষে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলতে চাই না। আমি চাই এই বছরেই যেন সকল দৈনিক পত্রিকাগুলো তাদের গাইড বই প্রকাশ বন্ধ করে সেই পৃষ্ঠাটিতে জ্ঞান-বিজ্ঞান সাহিত্য-সংস্কৃতি-ইতিহাসের চমকপ্রদ গল্প দিয়ে দেশের শিশুদের মুগ্ধ করে।

৮. প্রশ্ন-ফাঁস থেকে মুক্তি:
এই বিষয় নিয়ে যথেষ্ট চিৎকার করা হয়েছে। এটি অবিশ্বাস্য যে, একটি রাষ্ট্র তার লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর জন্যে তৈরি করা প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাওয়া বন্ধ করতে পারে না। পরীক্ষায় প্রশ্নই যদি ফাঁস হয়ে যায়, সেই পরীক্ষার কিংবা সেই শিক্ষার আদৌ কি কোনো অর্থ আছে?

এই নববর্ষে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া হচ্ছে সব রকম পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করে দেওয়া।

৯. ফেসবুক থেকে মোহমুক্তি:
খবরের কাগজের সংবাদ এই দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ দিনে এক ঘণ্টা থেকে বেশি সময় ফেসবুক করে (শুদ্ধ করে বলতে হলে, সামাজিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে)। খবরটার আরও ভয়ংকর অংশটি হচ্ছে, ২৩ শতাংশ মানুষ দিনে ৫ ঘণ্টার থেকে বেশি সময় ফেসবুক করে কাটায়। কী ভয়ংকর ব্যাপার! অল্প কয়দিনের একটা জীবন নিয়ে আমরা সবাই পৃথিবীতে এসেছি। সেই জীবনে কত কী দেখার আছে, কত কিছু করার আছে! তার কিছুই না দেখে, কিছুই না করে ফেসবুকের স্ট্যাটাসের পিছনে কয়টা লাইক পড়েছে সেটা গুনে গুনে জীবন কাটিয়ে দেব?

এই নববর্ষে আমার নবম চাওয়া, তরুণ সমাজ যেন বুঝতে শেখে যে, আমরা প্রযুক্তি ব্যবহৃর করব, প্রযুক্তি কখনও আমাদের ব্যবহার করতে দেব না। ফেসবুকের বাইরেও একটা জীবন আছে। ভার্চুয়াল জীবন থেকে সেই জীবন অনেক আনন্দের।

১০. সবার জন্যে প্রবেশগম্যতা:
একটি দেশ কতটুকু সভ্য হয়েছে সেটা একেক জন একেকভাবে বিচার করেন। আমার বিচার করার মাপমাঠিটা খুবই সহজ। যে দেশে প্রতিবন্ধী মানুষেরা যত বেশি স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন যাপন করবেন, সেই দেশ তত বেশি সভ্য। সেই বিচারে আমরা কিন্তু এখনও সে রকম সভ্য হতে পারিনি। হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয় এ রকম মানুষেরা কিন্তু আমাদের দেশে এখনও পথে-ঘাটে-বিল্ডিংয়ে স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা করতে পারে না। দেশে সে ব্যাপারে আইন হয়েছে। কিন্তু এখনও সেই আইন কার্যকর হয়নি।

কাজেই এই বছরের নববর্ষে আমার শেষ চাওয়াটি প্রতিবন্ধী মানুষদের নিয়ে। আমি চাই এই বছরে আমরা যেন সব জায়গায় সব মানুষের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করি।

এখানে একটা বিষয় আমি একটু পরিস্কার করে নিতে চাই, যদিও আমি ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি, কিন্তু আমি এই শব্দটি বিশ্বাস করি না। যাদেরকে আমরা প্রতিবদ্ধী বলি, আমি তাদের অনেককে খুব কাছ থেকে দেখেছি এবং আবিষ্কার করেছি, তারা কিন্তু মোটেও প্রতিবন্ধী নন। তারা বিশেষ ধরনের মানুষ। একটা বিশেষ সুযোগ দেওয়া হলেই তারা কিন্তু আমাদের পাশাপাশি ঠিক আমাদের মতোই সব কাজ করতে পারেন।

নববর্ষের এই দশটি চাওয়া ছাড়াও আমার আরও অনেক চাওয়া আছে। কিছু নিজের কাছে, কিছু পরিবারের কাছে, কিছু সহকর্মীদের কাছে, ছাত্রছাত্রী বা তরুণ তরুণীদের কাছে এবং বেশ কিছু রাষ্ট্রের কাছে। সবগুলো থেকে আমি এই দশটি বেছে নিয়েছি শুধু একটা কারণে– এই দশটি বাস্তবায়ন করতে কাউকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না।

দরকার শুধু একটুখানি সদিচ্ছার। সেই সদিচ্ছাটুকু কেন আমরা দেখাব না?

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক ও অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

Wordbridge School
Link copied!