• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নেপালে বন্যার কারন ভারত


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুলাই ২০, ২০১৯, ০৩:৫৭ পিএম
নেপালে বন্যার কারন ভারত

ঢাকা : পানি নিয়ে সম্পর্ক কখনই ভালো ছিল না প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও নেপালের। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক বছরের সেই দা-কুমড়া সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যেতে শুরু করেছে।

প্রতি বছর বর্ষা এলেই শুরু হয় ঝগড়া-মনোমালিন্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গেছে দেশ দুটির বহু অঞ্চল। সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক এলাকাও। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা এই বন্যায় এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। পানিবন্দি ও ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে ৩০ লাখের বেশি।

ভয়াবহ এই পরিস্থিতি, ভোগান্তি ও প্রাণহানির জন্য একে অপরকে দায়ী করছেন দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা।

কিন্তু নেপালসহ এ অঞ্চলের বন্যার পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বছরের পর বছর ধরে নদী নিয়ন্ত্রণ বা পানির রাজনীতির মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ‘বন্যার খেলা’ চালিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিবিসির এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ভারত ও নেপালের মধ্যে অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে প্রায় এক হাজার ৮০০ কিলোমিটার। ভারতের উত্তরাঞ্চলে প্রবাহিত হওয়া প্রায় ৬ হাজার নদ-নদী ও জলধারার উৎপত্তি নেপাল। শুষ্ক মৌসুমে ভারতের গঙ্গা নদীর প্রায় ৭০ শতাংশ পানিই আসে নেপাল থেকে। এসব নদীতে পানি বাড়লেই নেপাল ও ভারতে সৃষ্টি হয় আগ্রাসী বন্যা।

ভারত পানি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে বাঁধ নির্মাণ করায় কয়েক বছর ধরে নেপালে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ২০১৬ সালে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়। নেপালের অভিযোগ, ভারতের ১০টি বাঁধের কারণে প্রতি বছর নেপালে কয়েক হাজার হেক্টর জমি প্লাবিত হচ্ছে। তবে ভারতের দাবি, সীমান্তে বাঁধ নয় রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।

দুই দেশের কর্মকর্তাদের আলোচনায় ইতিবাচক ফল না আসায় পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিবিসির অনুসন্ধানও বলছে, ভারতের নির্মিত এসব স্থাপনা পানি আটকানোর বাঁধ ছাড়া আর কিছু নয়। নেপাল থেকে ভারতের বিহারে পানি প্রবেশ করা কোসি ও গনডাকি নদীতে যে ব্যারাজ আছে ১৯৫৪ ও ৫৯ সালের চুক্তি অনুযায়ী তা নিয়ন্ত্রণ করে ভারত।

নেপালের অভিযোগ, বন্যা, সেচ সুবিধা ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্মিত বাঁধটি নিজেদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করে দিল্লি। গত সপ্তাহে নেপালের দক্ষিণাঞ্চলে গাউর নামক এলাকা বেশ কিছুদিন ধরে বন্যাকবলিত ছিল এবং এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। নেপালে পুলিশ সুপার কৃষ্ণ ধাকাল জানান, অনেক ভোগান্তির পর ভারতীয় বাঁধের দুটি গেট খুলে দেয়া হয় এবং এতে আমাদের বেশ উপকার হয়।’ বন উজাড়, খনি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশের সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ বাধতে পারে এমন আশঙ্কা নেপালের। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।

এ কোসি নদী দীর্ঘ সময় ধরে ‘বিহারের দুঃখ’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এর আগে কয়েকবার এ নদীর পানিতে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

২০০৮ সালে যখন এ নদীর বাঁধ ভেঙে যায়, তখন কয়েক হাজার মানুষ মারা যান এবং ভারত ও নেপালে ৩০ লাখ মানুষ গৃহহীন হন। যেহেতু এ নদীতে নির্মিত বাঁধ ৭০ বছরের পুরনো সেজন্য এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

নেপালের অনেক নদী চুর পর্বতমালার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ পর্বতমালার প্রতিবেশ এরই মধ্যে হুমকির মধ্যে পড়েছে। এক সময় এ পর্বত নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করত এবং ভারত ও নেপাল অংশে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনত।

ভারতে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫০ : ভারতের আসাম ও বিহারে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। আগামী ১২ ঘণ্টায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করবে বলে জানিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ।

এদিকে, নেপালে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ জনে। নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৩০ জন। বন্যা অব্যাহত রয়েছে চীনেও।

ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ভারতের আসামের এ ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এনডিটিভি বলছে, রাজ্য জুড়ে চলমান বন্যায় লোকালয় ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় মানুষ। এই সুযোগে কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্কের ক্লান্ত বাঘটি লোকালয়ে চলে আসে। বন্যায় ঐ পার্কের অন্তত শতাধিক প্রাণী মারা গেছে।

ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে এখনো। তাই আসামের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি নেই। তবে, পানি খুব দ্রুত নেমে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষ বলেন, পানি ৪৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে, আগের তুলনায় এখন পানি কমছে। যা ১২ ঘণ্টার মধ্যে ২০ সেন্টিমিটারে নামতে পারে।

একই পরিস্থিতি বিহারেও। রাজ্যটিতে বন্যায় মৃতের সংখ্যা প্রায় একশ'র কাছাকাছি। ব্যস্তচূত হয়েছেন অন্তত ৬৫ লাখ মানুষ। বন্যায় মৃত প্রত্যেককে চার লাখ রুপি করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিতিশ কুমার।

বিহারের কৃষিমন্ত্রী প্রেম কুমার বলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গৃহপালিত পশুদেরও সরিয়ে নেয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে।

নেপালে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। পানি কমতে শুরু করায় নিখোঁজদের উদ্ধারে শুরু হয়েছে অভিযান।

বন্যা অব্যাহত আছে চীনের বেশ কয়েকটি প্রদেশে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে একসঙ্গে চলছে বন্যা। তবে, সবচেয়ে করুণ অবস্থা ভারতের আসাম ও বিহারে। রাজ্য দু'টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তাদের পাশে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

বন্যায় বাঘ মানুষ এক বিছানায় : বন্যাবিধ্বস্ত ভারতের আসাম প্রদেশে গৃহহীন হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন তারা। মানুষের সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ ও শুকনো জায়গা খুঁজছে গণ্ডার ও বাঘের মতো বনের পশুরাও।

এমনিভাবে বৃহস্পতিবার একটি বাঘ প্রাণ বাঁচাতে এক বাড়িতে ঢুকে পড়ে। শুধু ঢোকা নয়, বাড়ির কর্তার মতো বাড়ির বিছানাতেই আয়েশ করে ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেয় বাঘটি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের বন্যপ্রাণী সুরক্ষা দফতরের শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটতে কাটতে ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত রয়েল বেঙ্গল টাইগারটি আপাতত আরামেই রয়েছে বাড়ির ভেতর।

বাড়িতে বাঘ ঢুকতে দেখে বাড়ির মালিকের প্রাণ যায় যায় দশা। প্রতিবেশীরাও দৃশ্য দেখে হাউমাউ করে চিৎকার জুড়ে দেন। তাদের সবাইকে শান্ত এবং সজাগ থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। সূত্র : বিবিসি

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!