• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাল্টে যাবে কুয়াকাটা সৈকত


কলাপাড়া প্রতিনিধি আগস্ট ৩১, ২০২০, ০৪:২৫ পিএম
পাল্টে যাবে কুয়াকাটা সৈকত

ঢাকা : প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্টি জঞ্জাল সরিয়ে ভোরে সূর্যোদয় দেখতে দেখতে সৈকতে হেঁটে চলা। দুপুরে সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে জলকেলি। শেষ বিকালে বিকালে সূর্যাস্ত উপভোগ, কিংবা রাতে চাঁদের আলোতে সৈকতে বেঞ্চিতে বসে সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ পার্টি উপভোগ। পর্যটকদের এ সব স্বপ্নই পূরণ হতে চলেছে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায়। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে সাগরের ভাঙ্গনে কুয়াকাটা সৈকত শ্রীহীন হয়ে পড়ার পর নেদারল্যান্ডের পর্যটন স্পটের আদলে কুয়াবাটা সৈকত সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে এমন আসার কথা শোনালেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি। তবে পর্যটকসহ স্থানীয়দের দাবি শুধু আশ্বাস নয়, কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক।

পর্যটকদের স্বপ্নের কুয়াকাটা সৈকতের সেই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য সবটুকুই বিলীন হয়েছে সাগরের ভাঙ্গনে। এক দশক আগে যে সৈকতের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত যেতে পর্যটকদের দম ফুরিয়ে যেতো, সেখানে জোয়ার হলেই এখন সৈকতে হাটার উপায় নেই। পূর্বের ঝাউ বাগন থেকে পশ্চিমের সান সেট পয়েন্টের সৈকত, সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রকৃতি ও স্থাপনা ধ্বংসের জঞ্জাল। যেখানে দিনের আলোতেই পায়ে হাঁটা কষ্ট, ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা। কোথাও বালুর বস্তা, কোথাও ভেঙ্গে পড়া গাছের গুঁড়ি। এ ধ্বংসস্তুপের উপর দাড়িয়ে এখন উপভোগ করতে সাগরের ঢেউ। আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন চাপা পড়েছে জঞ্জালে। এতে ক্রমশ হতাশ হচ্ছে পর্যটকরা।

কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা পর্যটক নীলা আফরিন, সৃষ্টি তামান্না ও অয়ন্তীকা মেীসুমী বলেন, ছবিতে দেখা কুয়াকাটা, আর বাস্তব কুয়াকাটা যেন আকাশ পাতাল পার্থক্য। কুয়াকাটার সর্বত্রই ভাঙ্গছে। কিন্তু সৈকত রক্ষার কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। আর যাও নেয়া হয়েছে সেই উন্নয়নের জঞ্জাল এখন পর্যটকদের দূর্ভোগের কারন।

কুয়াকাটা সৈকতের এ ভাঙ্গন রক্ষায় কলাপাড়ার বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন সৈকতে মানববন্ধন কর্মসূচীসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে প্রতি বছর। কিন্তু সৈকত প্রতিবছর ভাঙ্গলেও নেয়া হচ্ছে না কোন পদক্ষেপ। গত ৩০ আগষ্ট পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সৈকত রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন করে পাঁচটি সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামীলীগ নেতা অনন্ত মুখাজী ও মো. মাহবুব বলেন, যে প্রকল্পই নেয়া হোক তা দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই। তা নাহলে আগামী বর্ষা মেীসুমে কুয়াকাটা সৈকতের অনেক স্থাপনা সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। কারন জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে যেভাবে সাগরে পানির উচ্চতা বাড়ছে সেভাবে প্রটেকশনের উদ্যোগ না নেয়ায় বছর ঘুরতেই সেই উন্নয়ন জঞ্জালে পরিনত হচ্ছে।

ট্যুরিজম ব্যবসায়ী ইব্রাহিম ওয়াহিদ, আমির হোসেন বলেন, কুয়াকাটার সৈকত রক্ষার প্রাথমিক কোন প্রকল্প গ্রহন না করে গ্রোয়েন বাঁধের মতো স্থায়ী প্রকল্প গ্রহন করা হোক। যাতে রক্ষা পাবে কুয়াকাটা সৈকত। রক্ষা পাবে প্রান ও প্রকৃতি। পর্যটকরা আবার কুয়াকাটার সৌন্দর্যের আকর্ষনে ছুটে আসবে। কারন সৈকতের প্রতিটি ভোরের সূর্যোদয় ও সন্ধায় সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য কুয়াকাটায় বসেই উপভোগ করা সম্ভব।

কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, গত অমাবশ্যার জোয়ারে কুয়াকাটা সৈকতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কুয়াকাটার মুল সৈকত রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। এখনই সৈকত রক্ষার উদ্যোগ না নেয়া হলে আগামী পূর্ণিমার জো’তে সৈকতের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

গত ২৭ আগষ্ট কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ বলেন- কুয়াকাটা সৈকতকে রক্ষায় প্রাথমিক সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য একটি ডিপিপি( উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরি করা হয়েছে।

কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের পূর্ব ও পশ্চিম দিকের ২৭০ মিটার সৈকত প্রটেকশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে আপাতত ৩২’শ জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এ সপ্তাহেই জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হবে।

কুয়াকাটা পরিদর্শনে এসে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি বলেন, কুয়াকাটা সৈকত নিয়ে সরকারের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য মন্ত্রনালয়ে সচিব এবং অতিরিক্ত মহা পরিচালক দুই বছর আগে নেদারল্যান্ড ঘুরে এসেছেন। নেদারল্যান্ডের সীবীচ যেভাবে তৈরি করা হয়েছে ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য সেভাবে ভাঙ্গন ঠেকানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। এখন ডিপিপি প্রনয়ন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডিপিপি একনেকে অনুমোদন হলেই কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার কাজ শুরু হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!