• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আমদানি মূল্য তিনগুণ করেছে ভারত

পেঁয়াজে অশনিসংকেত!


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯, ০২:৩৯ পিএম
পেঁয়াজে অশনিসংকেত!

ঢাকা : বন্যার কারণে শীর্ষ উৎপাদনকারী এলাকা মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে পেঁয়াজের উৎপাদনে বড় ধাক্কা খেয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। ফলে ওই দেশেই গত কয়েক সপ্তাহ হু হু করে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করেছে দেশটি। ওই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা শুক্রবার এ দর নির্ধারণ করে।

কিন্তু এ খবর বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজারের জন্য বড় ধরনের অশনিসংকেত। কারণ এ দেশের পেঁয়াজের বাজার ভারতের ওপর নির্ভরশীল। গত সপ্তাহেও যেখানে বাংলাদেশ ভারত থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ ডলারে পণ্যটি আমদানি করেছে, সেটা এখন বেড়ে দাঁড়াল প্রায় তিনগুণ। অর্থাৎ গতকাল শনিবার থেকে ৮৫০ ডলারের নিচে এলসি খুলতে পারছেন না বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

এদিকে কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওই নতুন নির্দেশনা ইতোমধ্যে এ দেশের বন্দর কাস্টমসগুলোর কাছে পৌঁছেছে। এ কারণে শনিবার প্রথম দিন ব্যবসায়ীরা নতুন এ বর্ধিত দরে এলসি খোলেননি। ফলে বন্ধ রয়েছে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি।

এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর পাইকাররা বলছেন, এর আগে ২০১৭ সালের শেষ দিকেও একবার ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য ৮৫০ ডলার করেছিল। তখন ঢাকার খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকা পেরিয়ে গিয়েছিল। এ বছরও এমন পরিস্থিতি হতে পারে। এ নিয়ে পাইকারি বাজারে ইতোমধ্যে আতঙ্কের উদ্বেগ হয়েছে।

যদিও কয়েকজন ব্যবসায়ী এ-ও বলছেন, দেশের বাজারে এখনই দাম চড়া থাকায় ভারত ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। এর সঙ্গে দেশের উৎপাদন মিলিয়ে ঘাটতি খুব বেশি হবে না। ফলে খুচরা বাজারে দাম বাড়লেও পরিস্থিতি ততটা মারাত্মক না-ও হতে পারে।

তবে হঠাৎ করেই ভারতের এ আমদানি মূল্য বৃদ্ধি শুরু থেকেই বাংলাদেশের সরবরাহে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন আমাদের দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি শাহাদৎ হোসেন।

তার পাঠানো তথ্যে, ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিকারকরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন, মূল্য বৃদ্ধির কারণে তারা আর কম মূল্যের এলসির পেঁয়াজ রপ্তানি করবে না। এতে করে গতকাল শনিবার হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল।

ওই এলাকার আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাক বলেন, গত শুক্রবার আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল, আজও (শনিবার) বন্ধ। ফলে ইতোমধ্যে সরবরাহ সংকটের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

তিনি জানান, গত সপ্তাহে ভারত থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ ডলারে পেঁয়াজ আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। সে সময় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আভাস দিয়েছিলেন রপ্তানিমূল্য কিছুটা বৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু সেটা তিনগুণ হবে সেটা কেউই ধারণা করেনি।   

এমনিতেই ঢাকার বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিকের থেকে বেশি। প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় এবং দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে গতকাল। যা সাধারণ সময়ে ৪০ টাকার নিচে থাকে। আর রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধির কারণে সামনের সপ্তাহেই দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম আরো বেড়ে যাবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাবে বাড়বে দেশি অথবা অন্য দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও। এমন পরিস্থিতিতে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনেকের ধারণা।

বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৯ লাখ টন। কিন্তু চাহিদা ২৫ লাখেরও বেশি। ফলে চাহিদা পূরণে ৭ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। আর সহজলভ্যতার কারণে আমদানির বেশির ভাগ আসে ভারত থেকে। এর আগে তুরস্ক, মিসর, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা বলা হলেও বাস্তবে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ ফলশূন্য হয়েছে।

এসব বিষয়ে শ্যাম বাজারের ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, মিসর, পাকিস্তানেও পেঁয়াজের দাম কম নয়। সেখান থেকে পেঁয়াজ এনে খুব বেশি পরতা হবে না। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরে দেশের বাজারে আগাম পেঁয়াজ উঠতে শুরু করবে। তার আগে দাম কমার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!