• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া


ফিচার ডেস্ক মে ১৯, ২০১৯, ০৩:৩৯ পিএম
ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া

ঢাকা: এখন গ্রীষ্মকাল। প্রখর রোদ আর তপ্ত দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ। এরই মধ্যে শহরে বিভিন্ন স্থানে ফুটেছে গ্রীষ্মের ফুল কৃষ্ণচূড়া। কৃষ্ণচূড়া রক্তবর্ণ ফুল। কৃষ্ণচূড়ার সবুজ পাতার ওপর রক্তবর্ণা ফুল যেন সবুজের বুকে লাল পতাকার প্রতিবিম্ব। গ্রীষ্মের ঝকঝকে রোদে চোখ ধাঁধানো আলোর মাঝে এই দৃশ্য যে কারো হূদয় কাড়বে। এ কারণেই হয়তোবা কবিগুরু রবিঠাকুর বলেছেন- ‘গন্ধে উদাস হওয়ার মতো উড়ে/ তোমার উত্তরী কর্ণে, তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরি।’ কৃষ্ণচূড়ার কথা উঠে এসেছে অমর একুশের চেতনায় রচিত কবি শামসুর রাহমানের কবিতায়। তিনি লিখেছেন— ‘আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে/ কেমন নিবিড় হয়ে। কখনো মিছিলে কখনো-বা/একা  হেঁটে  যেতে  যেতে মনে হয়- ফুল নয়, ওরা/শহীদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর।’

কৃষ্ণচূড়া অতি সুপরিচিত এবং ঢাকার প্রধানতম ফুলের গাছ। গ্রীষ্মে আকাশের নিচে প্রচণ্ড তাপ ও রুক্ষতায় এই অবাক সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। সৌন্দর্যবর্ধক গুণ ছাড়াও কৃষ্ণচূড়া গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় সাধারণত ১২/১৫ মিটার হলেও শাখা-পল্লবে এটির ব্যাপ্তি বেশ প্রশস্ত। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়িযুক্ত। মুকুল ধরার কিছু দিনের মধ্যে পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। পাতাহীন শাখায় প্রথমে কুঁড়ি ধরার অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই সারা গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। কৃষ্ণচূড়া ফুলের বর্ণ-বৈচিত্র্য লক্ষণীয়। এত উজ্জ্বল রং, এত অক্লান্ত প্রস্ফুটন তরুরাজ্যে দুর্লভ। গাঢ় লাল, লাল, কমলা, হলুদ এবং হালকা হলুদের এক দীর্ঘ বর্ণালিতে বিস্তৃত এর পাপড়ির রং। প্রথম  ফোটার উচ্ছ্বাস আস্তে আস্তে স্তিমিত হয়ে এলেও বর্ষার শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়ার গাছ থেকে ফুলের রেশ হারিয়ে যায় না।

‘তুমি আমার আলোর নেশা বিভোর ভোরময়/কৃষ্ণচূড়া তুমি আমার প্রেমের পরিচয়’— কবিতায় যথার্থই বলেছেন কবি। কারণ শুধু ফুল নয়, পাতার ঐশ্বর্যেও কৃষ্ণচূড়া অনন্য। এই পাতার কচি সবুজ রঙ এবং সূক্ষ্ম কারুকর্ম আকর্ষণীয়। নম্র, নমনীয় পাতাদের আন্দোলন দৃষ্টিশোভন। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রেমিক কবি বলেছেন- ‘গন্ধে উদাস হাওয়ার মত উড়ে তোমার উত্তরী, কর্ণে তোমার কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরি।’ ‘কৃষ্ণচূড়া আগুন তুমি আগুন ঝরা বাণে/খুন করেছ শূন্য তোমার গুণ করেছ গানে।’ কৃষ্ণচূড়ার অন্যান্য নাম- গুলমোহর, গুলমোর, রক্তচূড়া। ইংরেজি নাম : Royal Poinciana, Flamboyant, Flame tree, Peacock Flower।  কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। ডেলোনিক্স গ্রিক শব্দ, অর্থ দৃশ্যমান থাবার মতো। সম্ভবত কৃষ্ণচূড়া ফুলের পাপড়ির বৈশিষ্ট্যেই নামটি অর্থবহ। কেননা ‘রেজিয়া’ অর্থ রাজকীয়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, পৃথিবীতে তিন রঙের কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখা যায়। লাল, হলুদ ও সাদা। লাল বা হলুদ কৃষ্ণচূড়া ফুলের আকার বা গঠন প্রায় একই রকম। লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের পাপড়ির রং লাল ছাড়াও বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। কিন্তু হলুদ কৃষ্ণচূড়া ফুলের পাপড়ির রং শুধুই হলুদ, তবে কখনো কখনো পাপড়ির রং আংশিক সাদা হয়ে থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন। যেমন, দক্ষিণ  ফ্লোরিডায় জুনে, আরব আমিরাতে সেপ্টেম্বরে, ক্যারাবিয়ানে মে থেকে সেপ্টেম্বর, ভারতে এপ্রিল থেকে জুন, অস্ট্রেলিয়ায় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। এই ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট এবং উজ্জ্বল সবুজ। প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০টি উপপত্র বিশিষ্ট। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ।

পরিবেশ ও প্রকৃতিবিষয়ক গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান ‘বারসিক’ সূত্রে জানা যায়, বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি আর অনেক বহু আন্দোলনের পটভূমির সাথে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিবিড় সম্পর্ক। ছড়া-কবিতা-গানে উপমা হিসেবে নানা ভঙ্গিমায় এসেছে এই ফুলের সৌন্দর্য বর্ণনা। কৃষ্ণচূড়া আমাদের দেশে সহজপ্রাপ্য হলেও এর আদিনিবাস মাদাগাস্কারে। ১৮২৪ সালে সেখান  থেকে প্রথমে মৌরিসাস, পরে ইংল্যান্ড এবং শেষে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বিস্তার ঘটে। গাছটিকে অনেকে রক্তচোর বলার পক্ষপাতী। বলা প্রয়োজন কৃষ্ণচূড়া ছাড়াও গ্রীষ্মকালে ফোটে পলাশ, জারুলসহ নানা ধরনের ফুল। যদিও এগুলো ঢাকা শহরে খুব একটা  দেখা যায় না। তবে কমবেশি দেশের সব জায়গাতেই কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখা যায়। বিশেষত শহরাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। তবে হলুদ কৃষ্ণচূড়া জাতের গাছের একমাত্র গাছটির অবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডস্থ ব্রিটিশ কাউন্সিল ভবনে। ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধু দক্ষিণ  ফ্লোরিডা, দক্ষিণ-পশ্চিম  ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এস

Wordbridge School
Link copied!