• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাঁশ-বেতে নির্ভর আদীবাসী জীবন


নওগাঁ সংবাদদাতা সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০, ০৩:৪২ পিএম
বাঁশ-বেতে নির্ভর আদীবাসী জীবন

নওগাঁ : বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে আঁকড়ে রেখেছেন নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আদিবাসী (খ্রিষ্টান) স¤প্রদায়ের কিছু মানুষ। এই বাঁশ আর বেতই বর্তমানে তাদের জীবিকার প্রধান বাহক।

কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন বাঁশ আর বেতের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা। জীবন জীবিকার তাগিদে তবুও বাবা-দাদার এই পেশাকে এখনও ধরে রেখেছে কিছু সংখ্যক পরিবার।

বাঁশ বেতের তৈরি বিভিন্ন সাংসারিক, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আদিবাসী স¤প্রদায়ের কারিগররা তাদের নিপুণ হাতের মননশীলতার ছোঁয়ায় তৈরি করে থাকেন। গৃহস্থালি বাড়ীতে ধান মাড়াই কাজে সহযোগিতায় কুলা, ডালা, সাংসারিক কাজে খৈচালা, মাছ শিকারের খলই সহ প্রভৃতি হস্তশিল্পরা আমাদের প্রদান করে থাকেন। বিনিময়ে কিঞ্চিৎ অর্থ পেয়েই তারা খুশি।

সমাজে মাহালী সম্প্রদায় নামে পরিচিত বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের কদর আর তেমন নেই বললেই চলে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করলেও, এখন বিলুপ্তির পথে এ শিল্পটি।

বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র। এখন সময়ের বিবর্তনে বদলে গেছে চিরচেনা সেই চিত্র। এরপরেও ধামইরহাট উপজেলার আদিবাসী মাহালী নামে পরিচিত কিছু পরিবারের মানুষ ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

বর্তমানে স্বল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় কুটির শিল্পের চাহিদা আর তেমন নেই। তাছাড়াও দ্রব্যমূল্যে বাজারে দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেত। এখন আর আগের মতো বাড়ির আশেপাশে বাঁশ ও বেত গাছ রাখছে না কেউ। সেগুলো কেটে বিভিন্ন চাষাবাদসহ দালান তৈরি করছে মানুষ। তাই কাঁচামাল আর আগের মতো সহজেই পাওয়া যায় না।

দেখতে নজর কাড়া হওয়ায় প্লাস্টিক ও অন্যান্য দ্রব্যের পণ্য টেকসই ও স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় সাধারণ মানুষের চোখ এখন সেগুলোর দিকে।তবে এখনো গ্রামীণ উৎসব ও মেলাগুলোতে বাঁশ ও বেতের তৈরি খোল, চাটাই, খোলই, ধামা, টোনা, পাল্টা, মোড়া, দোলনা, বুক সেলফ কদাচিৎ চোখে পড়ে।

দক্ষিণ চকযদু মাহালী পাড়া গ্রামের আলব্রিকুশ মারান্ডি ও তার স্ত্রী মিলিনা হেমব্রম বলেন, ‘বাপ-দাদাদের রেখে যাওয়া বেত শিল্পের দুর্দিনেও তারা হাতে গোনা কিছু সংখ্যক পরিবার বাঁশ-বেতশিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছেন। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেলেও পূর্ব পুরুষের হাতেখড়ি এই পেশাকে কিছুতেই ছাড়তে পারেননি তারা।

হস্ত ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের কারিগর আলব্রিকুশ মারান্ডি আরও বলেন, ‘দয়ালের মোড়ের এক ব্যবসায়ী তার থেকে গাছের চারার নিরাপত্তায় ব্যবহৃত টোপা কেনার অর্ডার করেছেন, ২৫০ টি টোপার প্রতিটি ৫০ টাকা করে বিক্রি করবেন তিনি।

এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় স্বল্পসূদে ঋণ বা সরকারী প্রণোদনার বিষয়ে আশ্বস্ত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গণপতি রায় বলেন, ‘সরকার সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে, আদিবাসী বা মাহালী সম্প্রদায় হিসেবে যারা পরিচিতি যদিও সরকার এই জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে সম্মানিত করেছেন, আবেদন পেলে আমরা তাদের জন্য স্বল্পসুদে ঋণদানসহ সকল সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!