• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে পানি-ডুবছে বসতভিটা


নিউজ ডেস্ক জুন ২৯, ২০২০, ০৫:৫৫ পিএম
বাড়ছে পানি-ডুবছে বসতভিটা

ঢাকা : যমুনার নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে দ্রুতগতিতে বাড়ছে। আর পানি বাড়ার সাথে সাথে বসতভিটাসহ ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ। স্বপ্নের ফসল পাট, বাদাম, সজ, কাউন, তিল ও শাকসব্জি নষ্ট হয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে কৃষক।

আগামীদিনগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে কিভাবে দিন কাটবে এ দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষকরা। অন্যদিকে, পানি বাড়ার সাথে সাথে যমুনার অরক্ষিত তীরে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে বাপ-দাদার পৈত্রিক ভিটাসহ ফসলি জমি। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে ভাঙ্গন কবলিতরা। অনেকে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এ অবস্থায় একদিকে যেমন বন্যার সংকট কাটাতে সরকারের কাছে বিশেষ বরাদ্দ অন্যদিকে ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, উজান থেকে পাহাড়ী ঢল ও ভারী বর্ষনের ফলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বর্তমানে যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১২ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এতে সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরের চরাঞ্চলের প্রায় ৩০টি ইউনিয়ন তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব অঞ্চলের কৃষকের ফসল পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। একদিকে করোনায় কর্মহীন অন্যদিকে বন্যা দুই মহাদুর্যোগে পানিবন্দী মানুষগুলো দুর্বিসহ অবস্থায় পড়ে গেছে।

এছাড়াও শহরের বাঁধের পুর্বপাশের খোকসাবাড়ী ইউনিয়ন ও কাটাওয়াপদাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বসতভিটা তলিয়ে গেছে। এসব মানুষ ওয়াপদা বাঁধের উপর টিনের চালা তুলে আশ্রয় নিয়েছে। কর্মহীন এসব মানুষের কাছে এখনো কোন সহায়তা পৌছেনি।

এছাড়াও পানি বাড়ায় চৌহালী উপজেলার বিস্তীর্ন অঞ্চল ও এনায়েপুতপুরের আড়কান্দি থেকে পাঁচিল পর্যন্ত ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটাসহ ফসলি জমি। ভাঙ্গনকবলিত মানুষে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এছাড়াও প্রবলস্রোতের কারণে নদী তীর সংরক্ষন বাঁধগুলো ঝুকিপুর্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে, যমুনার পাশাপাশি আভ্যন্তরীন ফুলজোড় ও করতোয়া নদীর পানিও ফুলে ফেটে উঠায় শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও তাড়াশের বির্স্তীন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

কৃষক আলহাজ্ব মিয়া ও তাহেল মন্ডল জানান, বন্যা শুরু হয়ে গেছে। পানিতে আমাদের চরাঞ্চলের তিল, শাকসবজি, পাট ও কাউনসহ ফসল তলিয়ে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। করোনা দুর্যোগের মধ্যে ফসল নষ্ট হওয়ায় আমরা চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি।

কাওয়াকোলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন ঠান্ডু জানান, জুন মাসের শুরু থেকে যমুনার পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সব ধরনের ফসল তলিয়ে একেবারে নস্ট হয়ে গেছে। মানুষজন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।

তিনি জানান, প্রতিবছর বন্যায় চরাঞ্চলের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। এজন্য সরকার যদি বন্যাকালীন সময়ে চরাঞ্চলের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়, তবে চরাঞ্চলের মানুষের অনেকটা সংকট কেটে যাবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, আগামী ৭২ ঘন্টা যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। বড় ধরনের না হলেও মাঝারি ধরনের বন্যার কবলে পড়বে সিরাজগঞ্জ। পানি উন্নয়ন বোর্ড সার্বক্ষনিক তীর সংরক্ষন বাঁধগুলো নজরদারিতে রাখছে। কোথাও কোন সমস্যা হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.ফারুক আহমেদ জানান, সবেমাত্র পানি বাড়তে শুরু করেছে। বন্যা হলে তা মোকাবেলা করতে আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।

যমুনায় বিপদসীমার উপরে পানি, অব্যাহত ভাঙনে দিশেহারা কৃষক : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টির কারণে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনায় প্রতিদিনই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে পানি।  

এতে উপজেলার প্রায় চারটি ইউনিয়নের অধিকাংশ চরাঞ্চলের ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। শুরু হয়েছে আবারও তীব্র ভাঙন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্ববাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম  জানান, যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে বন্যার আশংকা বাড়ছে। এছাড়াও ভূঞাপুরে ভাঙন এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, সাতদিন ধরে হু হু করে বেড়েই চলছে বন্যার পানি । এতে যমুনার তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের বহু নিম্নাঞ্চল  ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে ভূঞাপুরের চারটি ইউনিয়ন গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে  অবনতি হয়েছে  বন্যা পরিস্থিতি। দেখা দিয়েছে দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র ভাঙন।

বিশেষ করে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, এছাড়াও  অর্জুনা, কুটিবয়ড়া এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির।

কষ্টাপাড়া গ্রামের মো.রফিকুল ইসলাম বলেন, যমুনার নদীরগর্ভে ইতিমধ্যে আমার বসতভিটা চলে গেছে। তাই এই ভাঙন থেকে এলাকাকে বাঁচাতে হলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।

এ ছাড়াও  বন্যার পানি প্রবেশ করায় চারটি ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষি জমির সমস্ত ফসল এখন পানির নিচে। এতে  বহু কৃষকের পাট, আউশ ধান, তিল, তিশি, কাউন, বাদাম, ধনে সজ  পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে  বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকটও।

জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি : যমুনা নদীর পানি বাড়তে থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিরি আরও অবনতি হয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সকাল ৯ টা পর্যন্ত গত ২১ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানিস্তর ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। অন্যদিকে বাহাদুরাবাদ ঘাট ৫২ সেন্টিমিটার উপরে উঠে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়,ইসলামপুর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ২ টি ইউনিয়ন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

কৃষি বিভাগের সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর সদর, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও মাদারগঞ্জ উপজেলায় বিপুল সংখ্যক স্থাযী ফসল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এতে ১৩০ হেক্টর আউশ ধান, টি-আমান বীজতলা ১ ১৭ হেক্টর, ১৫৭৫ হেক্টর পাট, ১৭৮ হেক্টর উপর শাকসবজি, ৬ হেক্টরের বেশি তিল এবং ২ হেক্টর উপর চিনাবাদাম ডুবে গেছে।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার,সুলতানা রাজিয়া জানান,করোনার ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশনা বজায় রেখে তিনটি আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যাকবলিত ১৫০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, বন্যার সময় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সরকার থেকে জেলার সাতটি উপজেলায় ৩৪৭ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!