• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে শিশুশ্রম, ধুঁকছে নীতিমালা


রায়হান উল্লাহ জুন ১৩, ২০১৯, ১২:০০ পিএম
বাড়ছে শিশুশ্রম, ধুঁকছে নীতিমালা

ঢাকা : দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে। ২০১১ সালে সরকারি এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭৯ লাখ। ২০১৩ সালের জরিপে বলা হয়, দেশে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কোনো না কোনো শ্রমে নিয়োজিত। এতে আরো বলা হয়, এ শিশুর অর্ধেকেরও বেশি নিয়োজিত নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। অবশ্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৪ শিশু কাজ করে।  নানা সমীক্ষা বলছে, নদীভাঙনসহ পরিবারে আর্থিক অনটন, অশিক্ষা ও অসচেতনতাসহ নানা কারণ শিশুশ্রমের জন্য দায়ী। যুগোপযোগী নীতিমালার অভাবেই এ সংখ্যা কমানো যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

যদিও শিশুশ্রমিকদের পুনর্বাসনসহ শ্রম নিরসন নিয়ে নানা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছোট পরিসরে কাজ করছে; তবে এ সংক্রান্ত সরকারি উদ্যোগে নেওয়া ২৮৪ কোটি টাকার প্রকল্প দেড় বছরেও শুরুই হয়নি। টাকা বরাদ্দ আছে, প্রকল্প অফিস আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হবে যে এনজিওগুলোর মাধ্যমে, সেগুলোকেই এখনো নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রকল্প পরিচালক বলছেন, এ বছরই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।

এদিকে পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮টি খাতে ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৪ শিশু কাজ করে। তাদের মধ্যে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৬৯০ জন মেয়েশিশু। শিশুশ্রমে নিয়োজিতদের ৫৭ শতাংশের কাজই অস্থায়ী। গবেষণামতে, শিশুশ্রম বেশি কৃষি ও কল-কারখানায়। সেখানে ১০ লাখের বেশি শিশু কাজ করে। এছাড়া দোকানপাটে ১ লাখ ৭৯ হাজার শিশু, নির্মাণশিল্পে ১ লাখ ১৭ হাজার শিশু কাজ করে। বর্তমানে শিশুশ্রমে নিয়োজিত আছে এমন ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু একসময় স্কুলে গেলেও এখন আর যায় না। আর ১ লাখ ৪২ হাজার শিশু কখনোই স্কুলে যায়নি।

২০১৮ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে জড়িত শিশুদের জন্য ২৮৪ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রয়োজনে এসব শিশুর অভিভাবককে ঋণ দেওয়া হবে বা জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন শ্রমমন্ত্রী মুজিবুল হক। কিন্তু এরপরে কাজটি খুব একটা এগোয়নি।

এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু শ্রম বিক্রি করে দিনাতিপাত করছে। তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত।

বাংলাদেশে ‘জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০১৩’-এর জরিপে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কোনো না কোনো শ্রমে নিয়োজিত। তাদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ১২ লাখ ৮০ হাজার। শিশুশ্রম নিরসনে সরকার ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নির্ধারণ করে ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধের অঙ্গীকার করে।

নিচের দুটি খণ্ডচিত্র দেশে শিশুশ্রমের ভয়াবহতা প্রকাশ করে—

রমজান, বয়স ১২ বছর। পরিবারের হাল ধরতে প্রাইমারি শেষ হওয়ার আগেই স্কুল ছাড়তে হয় তাকে। এখন সে ফার্মগেট-পাইকপাড়া ৬০ ফিট রুটে লেগুনায় সাহায্যকারী (হেলপার) হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় তাকে। একই লাইনে রমজানের সমবয়সী আরো ৫০ শিশু কাজ করে। এরা সবাই মাস শেষে বেতন পায় ৫-৭ হাজার টাকা। কেউ কেউ টিপসসহ ১০ হাজারও পায়। রমজানের পরিবারে ব্যয়ের বেশিরভাগ অংশ আসে তার রোজগার থেকে। এই কাজে ঝুঁকি আছে জানিয়ে তাকে কাজ ছাড়তে বললে সে পাল্টা প্রশ্ন করে, ‘আমার পরিবার কীভাবে চলবে তাহলে?’

মোহাম্মদপুরে গার্মেন্ট কোম্পানিতে কাজ করে কিশোরগঞ্জের লাল মিয়া। একই কারখানায় কাজ করেন মা ফুলভানু। লাল মিয়ার বয়স মাত্র ১২। এই বয়সে বই-খাতা-কলম নিয়ে স্কুলে পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকার কথা তার। অথচ এই বয়সেই বিবর্ণ হয়ে গেছে তার জীবন। ভারীসব যন্ত্রের সঙ্গে নিত্য ওঠাবসা তার। আর্থিক অনটন থাকায় পড়াশোনার চেয়ে সন্তানকে নিয়ে কাজ শেখাতেই বেশি আগ্রহ লাল মিয়ার মা ফুলভানুর। মা ফুলভানু বলেন, অভাবের সংসার, ওর বাবা রিকশা চালান। তার অল্প আয় দিয়ে বাসা ভাড়া করে ঢাকায় চলা মুশকিল। তাই আগেই সন্তানকে কাজ করে খাওয়া শিখাচ্ছি। বাসায় থাকলে নষ্ট হতে পারে। এজন্য কাজ শেখাচ্ছি যেন ভবিষ্যতেও ছেলেটা কিছু করে খেতে পারে।

ওপরের দুটি চিত্র প্রকাশ করে কতটা ঠেকায় পড়ে শিশুশ্রমে বাধ্য হয় সংশ্লিষ্টরা।

এর মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে সব শ্রেণির শিশুশ্রম বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও পরিবহন সেক্টরসহ ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা। শিশুদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর মন্তব্য, সংশ্লিষ্ট মহলের সঠিক নজরদারির অভাবেই ঝুঁকির মুখে শিশুর ভবিষ্যৎ।

কষ্টের খবর, দেশে ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে কাজ করছে ১৩ লাখ শিশু। এদের মাথাপিছু প্রতিদিন আয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। ২০০৩ সালে শিশুশ্রমে নিয়োজিত ছিল ৩৪ লাখ শিশু। ২০১৩ সালে তা কমে ১৭ লাখে দাঁড়ালেও গত ৫ বছরে শিশুশ্রম যেভাবে হ্রাস পেয়েছে, তা মোটেই আশানুরূপ নয় বলে জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। শিশুশ্রমের ঝুঁকিপূর্ণ ১১টি সেক্টর হচ্ছে- তামাক-বিড়ি, অ্যালুমিনিয়াম, সাবান, প্লাস্টিক, কাচ, স্টোন ক্রাসিং, স্পিনিং, সিল্ক, ট্যানারি, শিপ ব্রেকিং ও তাঁত।

বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবসে এবার আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে শিশুশ্রম বন্ধের দাবি উঠেছে বেশ জোরেশোরে। এ দাবিতে কঠোর অবস্থানে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলও। এ দাবি জোরালো হয়েছে বাংলাদেশেও। তবে শিশুশ্রম বন্ধে সরকারের উদ্যোগ অপ্রতুল। যদিও গত মঙ্গলবার শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান শিশুশ্রম বন্ধে সরকার কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেন, ‘সবার সহযোগিতা পেলে ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

তবে এসব ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাক অনেক। রাজধানীসহ সারা দেশে শিশুশ্রম এখন অপ্রতিরোধ্য। শিশুশ্রম বন্ধের লক্ষ্য নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিশুশ্রম কল্যাণ পরিষদের সঙ্গে কাজ করছে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলও, ইউসেপ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।

সর্বশেষ গত মাসে শিশুশ্রম বন্ধ করা নিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এসব প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে বর্তমান শিশুশ্রম হ্রাস পাওয়া তথ্য আশানুরূপ নয় বলে মতামত দেয়। এ বৈঠকেও অভিভাবকদের সচেতন করার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পায়।

সরকারি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিন পর্যায়ে মোট ৯০ হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে প্রত্যাহার করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাসহ দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ এবং তাদের পিতা-মাতাকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঝুঁকিপূর্ণ এই ১১টির ৬টি সেক্টরের ২৩৪টি কারখানা থেকে ৩৭৫ জন শিশুকে শিশুশ্রম থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এ সময় শিশুশ্রমে নিযুক্ত করা শিল্প মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ সংক্রান্ত ১৮৬টি মামলার মধ্যে ৫১টি নিষ্পত্তি করা হয়। চলমান রয়েছে ১৩৫টি মামলা।

এমন বাস্তবতায় পুনর্বাসন ছাড়া শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব নয় বলে জানান শিশুদের নিয়ে কর্মরত দেশি-বিদেশি নানা সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা।

সেভ দ্য চিলড্রেনের চাইল্ড রাইটস গভর্ন্যান্স অ্যান্ড চাইল্ড প্রোটেকশন সেক্টরের পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে গাড়ির হেলপারি করা সবচেয়ে ঝুঁকির কাজ হলেও এতে টাকা বেশি। তাকে যখন পুনর্বাসনের কথা ভাবা হবে, তখন তার পরিবারের জন্য আর্থিক প্রণোদনার অবশ্যই ব্যবস্থা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক শিশুকে গ্যারেজ, রেস্টুরেন্ট জাতীয় জায়গায় কেবল সারা দিন সুরক্ষিত থাকবে ভেবে বাবা-মায়েরা কাজে দেন। এজন্য তারা কোনো টাকাও নেন না। কর্মজীবী বাবা-মা তার শিশুটিকে একটি জায়গায় রেখে যেতে চান মাত্র। এসব ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আর্থ-সামাজিক পুনর্বাসনের কথা যেমন চিন্তা করতে হবে, তেমনি আর একটি শিশুও যেন আজ থেকে কাজে নতুন করে যুক্ত না হয়, সে বিষয়েও বিস্তারিত কাজ করার আছে। গ্রামাঞ্চল থেকে যে যে কারণে শিশুরা শহরে চলে আসছে এবং কাজে বাধ্য হচ্ছে, সেই কারণগুলো চিহ্নিত করে গোড়াতেই নির্মূল করার উদ্যোগও থাকতে হবে।’ তিন বছরের সরকারি প্রকল্প দেড় বছরেও কাজ শুরু করতে না পারার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটিতে এক লাখ শিশুর ব্যবস্থা হওয়ার কথা আছে। এখনো এনজিও নির্বাচন না করতে পারা হতাশাজনক।’

শিশু অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন গওহার নঈম ওয়ারা। তিনি মনে করেন, এ ধরনের প্রকল্প দিয়ে কাজ হবে না। তিনি বলেন, ‘প্রকল্প মানে বিদেশ ভ্রমণ, গাড়ি আর পয়সা। যে কোনোভাবে শিশুদের অধিকারের বিষয়টি মূলধারার পরিকল্পনা অর্থাৎ রাজস্বের ভেতর আনতে হবে। ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের সংখ্যা যেহেতু মোট জনসংখ্যার ৪৭ ভাগ, তাই তাদের অ্যাড্রেস না করে কিছু করা সম্ভব নয়। ফলে ভেবে দেখতে হবে, পুনর্বাসন বলতে তারা যেটা বোঝাচ্ছে, সেটা কি শিশুবান্ধব? আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কিন্তু শিশুবান্ধব নয়।’ উপকূলের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যে কোনো দুর্যোগে সেখানকার শিশুরা বাবা হারায়, ক্ষতিপূরণ পায় না এবং পরিবারগুলো শিশুর ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। তাদের জন্য সরকার কী করবে?’

শিশুশ্রম নিরসনে সরকারের নেওয়া প্রকল্প পরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এক লাখ শিশুর পুনর্বাসনের কাজ যে এনজিওগুলোর মাধ্যমে করা হবে বলে পরিকল্পনায় আছে সেই এনজিও বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়নি। এই মাসে শেষ হবে। এরপর বাকি কাজ শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি ২০১৮-২০২০ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যে এনজিও বাছাই হয়ে গেলে বাকি কাজটা এ মাসেই শুরু হবে।’

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন-এর সিনিয়র প্রকল্প পরিচালক রাজিয়া শাহীন বলেন, পরিবারকে বুঝতে হবে, আজকে যে শিশু আয় করছে ভবিষ্যতে তার অবস্থা আরো খারাপ হবে, যার নেতিবাচক ফল ভোগ করবে রাষ্ট্র ও সমাজ। শিশুশ্রমিকের সংখ্যা হ্রাসে যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি শিশুবিষয়ক আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনের পরামর্শ তার।

এসডিআরএস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, শিশুদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় নেই। নেই সঠিক নীতিমালা। এখানে এই সমস্যাটা রয়েই গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ মাইনউদ্দিন মোল্লা সম্প্রতি এক গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল- ঢাকা শহরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকদের কর্ম ও জীবন। তার অনুসন্ধানমূলক গবেষণায় উঠে এসেছে নানা তথ্য।

তিনি গবেষণা করে দেখেছেন, ঢাকা শহরকেন্দ্রিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে ৫২ দশমিক ২৬ শতাংশ শিশু পায়ে আঘাত পায় বা ভেঙে গেছে। চোখে আঘাত পাচ্ছে ৩২ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিশু। ৩১ দশমিক ৫৮ শতাংশ মাথায় আঘাত পেয়েছে। ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ ঘাড়ে আঘাত, ২০ দশমিক ১৮ শতাংশ আগুনে পুরো শরীর বা শরীরের অংশবিশেষ পুড়েছে এবং ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু বুকে আঘাত পেয়েছে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকদের গড় বয়স ১৪ দশমিক ৭ বছর।

অধ্যাপক মোল্লার গবেষণায় দেখা গেছে, সর্বাধিক সংখ্যক (৪৪ দশমিক ১৭ শতাংশ) শিশুশ্রমিকের বয়স ১৪-১৬ বছরের মধ্যে। সবচেয়ে কমসংখ্যক (৫ শতাংশ) শিশুশ্রমিকের বয়স ৮-১০ বছরের মধ্যে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুশ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগই (৭১ দশমিক ৬৭ শতাংশ) গ্রাম বা অন্য শহর থেকে ঢাকায় এসেছে।

দেখা গেছে, দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার শিকার শিশুশ্রমিকদের মধ্যে ৮৭ দশমিক ৭২ শতাংশ চিকিৎসার সুযোগ গ্রহণ করলেও ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ কোনো ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করেনি।

সামগ্রিক বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘শিশুশ্রম বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে। সেই অনুযায়ী কাজ করছে সরকার। সবার সহযোগিতা পেলে ২০২৫ সালর মধ্যে শিশুশ্রম শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।’

দেশের মধ্যে শিশুশ্রমের এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়।

শিশু অধিকার সুরক্ষা ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০০২ সাল থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতি বছর দিবসটি পালন করে আসছে। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘চিলড্রেন শুড নট ওয়ার্ক ইন ফিল্ড, বাট অন ড্রিমস।’

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!