• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির তিনশ কোটি টাকাই জলে


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯, ১২:০১ পিএম
বিএনপির তিনশ কোটি টাকাই জলে

ঢাকা : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। একাদশে অংশগ্রহণ করেছে। গ্রহণ-বর্জনে দলটির লাভ-ক্ষতি কী হলো- এ বিশ্লেষণ বিএনপির ভেতরে বাইরে। বিশ্লেষক ও নেতাকর্মীদের মতে, পরিমাণটা কমবেশি হলেও বিএনপির প্রার্থীদের অন্তত তিনশ কোটি টাকা নির্বাচনী ব্যয়ের নামে জলে গেল।
নির্বাচনে লড়াই করতে কারো কারো সহায় সম্বল বিক্রি করতে হয়েছে আবার কারো কারো ব্যাংক হিসাবে যোগ হয়েছে বিপুল অঙ্ক। নেতাকর্মীদের মন্তব্য এমনতর যে, গত নির্বাচনে ঘর পুড়েছে অনেকের, আলু খেয়েছে কেউ কেউ।

বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, দলটি এক যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে। যে নির্বাচন বর্জন করেছে তাতে কর্মসূচি পালন করতে কিছু ব্যয় হয়েছে। কিন্তু গত নির্বাচনে কমপক্ষে তিনশ কোটি টাকাই জলে গেছে। বর্তমানে অর্থসঙ্কটে ভুগছে দল ও নেতারা। আগামীর কর্মসূচি সফল করতে হিমশিম খেতে হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এই নেতা।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে ভোটের আগে-পরে নেতাকর্মীদের ব্যয়ভার বহনের জন্য কেন্দ্র থেকে যে অর্থের জোগান দেওয়া হয়েছে তা পকেটস্থ করেছে দলের বেশিসংখ্যক প্রার্থী। তছরুপকারী প্রার্থীর তরফ থেকে কেন্দ্রকে জানানো হতো পুলিশ-আওয়ামী লীগ তাদের মাঠেই নামতে দেয় না, কর্মীদের মাঠে নামাতে মোটা অঙ্ক গুনতে হচ্ছে। আর নির্বাচনী এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের বলা হতো কেন্দ্র থেকে কোনো সুবিধাই মিলছে না, যা ব্যয় করছি তা নিজের পকেটের।

গত নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যজোট সংসদীয় ২৯৯ আসনের মধ্যে শরিক গণফোরাম ২টিসহ মোট ৮টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। জামানত হারিয়েছে বেশিসংখ্যক। দলটির অতীতে এমন চিত্র ছিল না। তবে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ এনে ফল প্রত্যাখ্যান করেছে তারা।

নির্বাচন মানেই খরচ, আর সে বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্বাচন কমিশন প্রতিটি প্রার্থীর জন্য খরচের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু নির্বাচনের সময় দেখা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণার নানা উপকরণ হরহামেশাই দৃষ্টি কাড়ে। বলা হয় ভোটের আমেজ, ভোটের উৎসব। প্রতিটি আয়োজনেই টাকা খরচ করতে হয়। প্রার্থীদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের আগে-পরে কোটি টাকার বেশিই খরচ হয়। কিছু কিছু প্রার্থীকে কেন্দ্র থেকে সহযোগিতাও করা হয়।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের দলের আয়-ব্যয়ের যে হিসাব বিএনপি নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে সেখানে তারা উল্লেখ করেছে তাদের মোট আয় প্রায় সাড়ে নয় কোটি টাকা এবং মোট ব্যয় চার কোটি টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মতো ব্যাংকে জমা রয়েছে।

দফতরের দায়িত্বে থাকা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন, যে লিগ্যাল চ্যানেলগুলো থেকে আমরা টাকা সংগ্রহ করি, দলের ফান্ড তৈরি হয়, তার একটি হলো দলের নেতাকর্মীদের চাঁদা। আরেকটি হচ্ছে নির্বাচনী মনোনয়ন ফরম বিক্রি। এ ছাড়া কেউ যদি ডোনেট করে। তাদের দলের প্রার্থীরা সাধারণত নিজের অর্থ ব্যয় করে নির্বাচনে লড়েছেন।

দলের তথ্যমতে, গত নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৪২টি আসনে নিজ দলীয় প্রার্থী ছিল। বাকি ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের। এসব প্রার্থীর মধ্যে অনেকেই আর্থিকভাবে সচ্ছল এমনটি উল্টো কেন্দ্রকে অনুদান দিয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্তত ৬০টি আসনে দলীয় প্রার্থীকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ঐক্যজোটের প্রার্থীরাও রয়েছে। প্রার্থীর আর্থিক সামর্থ্য বুঝে জনপ্রতি ১০ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত জোগান দেওয়া হয়েছে হাইকমান্ড থেকে। এ ছাড়া প্রার্থীকে সহযোগিতা করতে স্থানীয় ডোনারদের প্রতি নির্দেশনা গেছে কেন্দ্র থেকে।

বাস্তব চিত্র তুলে ধরে ঢাকা-১২ আসনের বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, এই আসনে বিএনপির প্রার্থীর কোনো লিফলেট বা পোস্টার চোখে পড়েনি। বিএনপির কোনো এজেন্টও কেন্দ্রে ছিল না। প্রচারণার জন্য কোনো মিছিলও দেখা যায়নি। তাদের মতে, বিএনপির প্রার্থী যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের খরচের খাতা শূন্য। দুয়েক দিন নিজে লিফলেট বিলি করে ফটোসেশনে অংশ নিলেও ভোটের দিন নেতাকর্মীদের কেন্দ্র খরচ সরবরাহ করেনি প্রার্থীরা।

নির্বাচনের আগে-পরে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশেও দাঁড়াচ্ছে না অনুদানপ্রাপ্ত নেতারা। বিএনপির দফতরের তথ্যমতে, গত ১২ বছরে ৯৮ লাখ মামলায় ২৭ লাখ নেতাকর্মী মামলা-হামলার শিকার হয়েছে। শুধু জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আগে-পরে ৪ হাজার ৪২৯ মামলায় ৪ লাখ ৩৪ লাখ ৯৭৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই গ্রেফতার ও জেলে পাঠানো হয়েছে। অনেক পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তিটিই কারাগারে বা ফেরারি। ফলে পরিবার পড়েছে ভীষণ সঙ্কটে। এদের পাশে নেই দল থেকে মনোনয়ন ও সহযোগিতা পাওয়া নেতারা। ফলে একদিকে দল আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে অন্যদিকে প্রচারণা চালিয়ে ব্যয় সমর্থন করে বিএনপির নেতাকর্মীরা অভিভাবক শূন্যতায় পড়েছে।

ঢাকা-৬ আসনে ধানের শীষ নিয়ে লড়েছেন গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা-৭ এ মোস্তফা মহসীন মন্টু, ঢাকা ১৬-তে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, ঢাকা-১৮ আসনে আ স ম রবের জেএসডি মনোনীত শহীদ মাহমুদ স্বপন- সারা দেশে এমন অনেক প্রার্থী ছিলেন যাদের ব্যয়ের পরিমাণ স্বল্প।  

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকাশ্য আয়-ব্যয়ের বাইরেও অনেক লেনদেন রয়েছে। প্রার্থীদের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্ধারণ করা টাকার অনেক গুণ বেশি খরচ করা হয়।

২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন পিরোজপুর-২ আসনে। তার দাবি জোট থেকে তাকে আর্থিকভাবে কোন সহযোগিতা করা হয়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!