• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব ঘুম দিবস ও কুম্ভকর্ণের ঘুম


নিউজ ডেস্ক মার্চ ১৪, ২০২০, ০৪:১১ পিএম
বিশ্ব ঘুম দিবস ও কুম্ভকর্ণের ঘুম

ঢাকা : ঘুম নিয়ে বঙ্গদেশে মজার মজার ঘটনা আছে। স্কুলে পণ্ডিত মশাইয়ের নাসিকা গর্জনের গল্প তো সাহিত্যিকদের রচনায় হামেশাই পাওয়া যায়। এ কালের শিক্ষকরাও সুযোগ পেলেই ঘুমিয়ে পড়েন ক্লাসরুমে। আমার প্রাইমারি স্কুলের অঙ্ক শিক্ষক ওহাব স্যারকেও নাক ডাকতে দেখেছি। তাতে বিদ্যা আহরণে খুব বেশি ঝামেলা হয়নি। দুটো আস্ত বেত রাখা থাকত টেবিলে। ঘুমন্ত ওহাব স্যারের বদলে ওই দু’খানা বেত্রশলাকা আমাদের পাহারায় রাখত।

এদেশে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা প্রজাতন্ত্রের গরিব কর্মচারী। নুন আনতে তাদের পান্তা ফুরায়। সংগত কারণে স্কুলে পাঠদানের বাইরেও রোজগারের ফন্দি-ফিকির করতে হয়। সেসব ফন্দি-ফিকিরের মধ্যে সকালে হালচাষ থেকে শুরু করে রাতভর ধান মাড়াই পর্যন্ত রয়েছে। সুতরাং ক্লাসরুমে তাদের ঘুমিয়ে পড়া নগণ্য অপরাধের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু দেশের মন্ত্রিপরিষদের শীর্ষ ব্যক্তিরাও যখন জনসমাগমে ঘুমিয়ে পড়েন, তখন একটু নড়ে বসতে হয় বৈকি!

আমরা নড়েচড়ে বসি। আর ভাবি, আহা রাজনীতিক! আহা আমাদের অভিভাবক, দেশের মাঝিমাল্লা! দেশের কথা, জনগণের কথা ভাবতে ভাবতে বেচারারা ঘুমের সময়টুকুই পান না। জনসমাগমে ঝিমিয়ে পড়েন। এই দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা কতই না ভাগ্যবান। এই অঞ্চলে একদা রাম-রাবণ যুদ্ধ হয়েছিল। হিন্দুপুরাণ রামায়ণে বর্ণিত সে যুদ্ধে কুম্ভকর্ণ নামের এক যোদ্ধার বীরগাথা লেখা আছে। কুম্ভকর্ণ ছিল রাবনের ছোটভাই। দৈত্যের মতো শক্তি নিয়ে জন্মানো কুম্ভকর্ণ দেবতা ইন্দ্রের ঈর্ষার পাত্র হয়েছিল তার অজেয় বীরত্বের কারণে। সে কারণে ইন্দ্রের অনুরোধে দেবী সরস্বতী কুম্ভকর্ণের জিহবা আড়ষ্ট করে দেন। ফলস্বরূপ প্রজাপতি ব্রহ্মাকে তুষ্ট করে কুম্ভকর্ণ যখন ‘ইন্দ্রাসন’ বর চায়, ব্রহ্মা সেটাকে ‘নিদ্রাসন’ ভেবে বসেন। তারপর থেকে কুম্ভকর্ণ টানা ছয় মাস ঘুমিয়ে থাকত। অল্প সময়ের জন্য ঘুম ভাঙত। তারপর আবার ঘুম।

এমন বিশাল এক বীর জীবনভর কাটিয়ে দিল ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে। ভাবা যায়? রামায়ণের বর্ণনামতে, রামের সঙ্গে রাবণের কুলিয়ে উঠতে না পারার কারণ ওই কুম্ভকর্ণের ঘুম। কালের পরিক্রমায় বাংলা বাগধারায়ও ঢুকে গেল ঘুম। কারো ঘুম ভাঙতে দেরি হলেই আমরা বলি— কুম্ভকর্ণের ঘুম। বেচারা কুম্ভকর্ণ! কী দারুণ পরিহাসে এমনতরো অজেয় বীর আমাদের বাগধারায় হয়ে আছে পরিহাসের পাত্র।

তবে, কুম্ভকর্ণের ঘুম নিয়ে ভারতীয় সভ্যরা যতই তাচ্ছিল্য করুক, এই ঘুমের প্রয়োজন নিয়ে বিস্তর কথা হচ্ছে আধুনিক সমাজে। ঠিক শুনেছেন— প্রয়োজন। কুম্ভকর্ণের ঘুমের যদি প্যাঁচানো-ঘোচানো ইংরেজি করা হয় তাহলে মানে দাঁড়ায়— সাউন্ড স্লিপ। এটা এমন এক ঘুম, যাতে কোনো বিরতি নেই। গভীর ঘুম। প্রশান্তির ঘুম। দেহ-মন ঝরঝরে করে দেওয়া ঘুম।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন বয়সভেদে সাত থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমোতে হবে। সেটাও হতে হবে সাউন্ড স্লিপ। নিরবচ্ছিন্ন ঘুম। না হলে দেহ-মন সুস্থ থাকবে না। আর এই ব্যাপারটাকেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে প্রতি বছর পালন করা হয় বিশ্ব ঘুম দিবস। বসন্তের যে সময়ে দিন-রাত সমান হয়ে যায়, তার ঠিক আগের শুক্রবারই এই দিনটির জন্য নির্ধারিত। গতকাল ১৩ মার্চ ছিল এ বছরের বিশ্ব ঘুম দিবস।

বিশ্ব ঘুম সংস্থা (ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটি) দিনটির আয়োজক। ২০০৮ সাল থেকে এই ঘুম দিবস নিয়মিত পালন হয়ে আসছে।

আধুনিক জীবনযাত্রা মানুষের কর্মঘণ্টা বাড়িয়েছে। মানুষ তার শারীরিক সক্ষমতার কথা বিবেচনা না করে রোবটের মতো কাজ করে যাচ্ছে। বিত্ত-বৈভব গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় তারা ভুলে যাচ্ছে মানবজীবন খুব ছোট। কচ্ছপের চেয়েও ঢের ছোট। সুতরাং দেহঘড়ি আরো কিছুদিন সচল রাখতে হলে ওটাকে বিশ্রাম দিতে হবে নিয়ম করে। বিশ্রাম হচ্ছে ঘুম। ঘুম মানে যেনতেন ঘুম নয়; কুম্ভকর্ণের ঘুম।

তবে, কথা আছে। যেকোনো কিছুর বাড়াবাড়িই ক্ষতিকর। ঘুমের বাড়াবাড়িও ক্ষতিকর। কোন বয়সের মানুষের জন্য কতঘণ্টা ঘুমানো দরকার, তার সুনির্দিষ্ট হিসাব আছে। দেহঘড়ি নিয়ে যারা নাড়াচাড়া করেন অর্থাৎ চিকিৎসকরাই সেটা বলে দিতে পারবেন। আপনার বয়স, শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই আপনার ঘুমঘণ্টা নির্ধারণ হবে। সুতরাং আর দেরি কেন, জিজ্ঞেস করে ফেলুন আপনার চিকিৎসককে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!