• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
বাজেট পর্যালোচনা

ব্যাংকনির্ভরতা সংকট বাড়বে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৬, ২০১৯, ০২:১৩ পিএম
ব্যাংকনির্ভরতা সংকট বাড়বে

ঢাকা : তফসিলি ব্যাংকগুলোতে চলছে নগদ টাকার টানাটানি। গত বছরের শুরু থেকে এই সংকট দৃশ্যমান নয়। এরপর সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংক মালিকরা বেশ কিছু উদ্যোগ হাতে নেন। তবে কার্যত পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং সংকট প্রকট হচ্ছে। আগামী দিনে পরিস্থিতি আরো প্রকট হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিচ্ছেন। এমন প্রেক্ষাপটে রুগ্ণ ব্যাংক খাতের দিকেই নজর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিনি ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বড় আকারের অর্থ ধার দেবেন বলে প্রস্তাব করেছেন। এতে সংকট আরো প্রকট হবে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যাবে। বেসরকারি উদ্যোক্তারা ঋণ পাবেন না।

বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অর্থমন্ত্রী আসছে অর্থবছরে এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি ঘাটতি বাজেট দিয়েছেন। এই ঘাটতি দুটি উৎস থেকে মেটাতে হবে তাকে। একটি হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ উৎস, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে বৈদেশিক উৎস। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ২৫ হাজার ২২৯ কোটি টাকা বিভিন্ন উৎস থেকে ধার করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল।

বৈদেশিক উৎস থেকে ধার করবেন ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ ধারের পরিমাণ ৫৪ হাজার ৬৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। অবশ্য এ জন্য অর্থমন্ত্রীকে সক্ষমতা বাড়াতে হবে বৈদেশিক অর্থ ব্যবহারের।

আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আগামী অর্থবছরে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ধার করতে চান মুস্তফা কামাল, যা মোট জিডিপির ২ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ৮ শতাংশ। আর অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেবেন ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা, জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। অর্থমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য যে সংশোধিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন তাতে ব্যাংকঋণের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। অবশ্য প্রস্তাবে এর পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা বা জিডিপির ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ বড় উৎস ভাবা হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থাকে।

সূত্র বলছে, ব্যাংকিং খাতে তারল্য ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কারো কাছে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। অন্যদিকে কোনো কোনো ব্যাংক রয়েছে গভীর তারল্য সংকটে। টাকা না থাকায় অনেক ব্যাংক ব্যবসা করতে পারছে না। তারল্য সংকট থেকে ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে গেছে অর্ধেক।

অবশ্য নানা কারণে ব্যাংকিং খাত নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। সরকারের খোদ অর্থমন্ত্রীও ব্যাংকিং খাত নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। সর্বশেষ বাজেট বক্তৃতায় তিনি ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে ৬ দফা প্রস্তাবও তুলে ধরেছেন। মানুষ ব্যাংকে আমানত রাখতে ভয় পাচ্ছে। ব্যাংক খাতে আমানতের তুলনায় ঋণ বাড়ছে। এতে তারল্যের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। চাপ সামলাতে অন্য ব্যাংক বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করতে হচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংককে। তারল্যের ওপর চাপের কারণে সুদহার বাড়তির দিকে রয়েছে।

২০১৭ সালের শেষ প্রান্তিকে আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণ করায় নগদ টাকার সংকটে পড়তে হয় দেশের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংককে। এর ঢেউ এসে আঘাত করে পরের অর্থবছরে। বর্তমানে নিজ প্রয়োজন মেটানোর মতো অর্থও নেই অনেক ব্যাংকের। টাকা ধার নেওয়ার এ তালিকায় আছে— এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল, অগ্রণী, সিটি, ওয়ান, ইউনিয়ন, এনসিসি, প্রিমিয়ার, প্রাইম, স্ট্যান্ডার্ড, এনআরবি ও উত্তরা ব্যাংক।

বিদ্যমান নিয়মে ব্যাংকগুলোর সব ধরনের তলবি ও মেয়াদি আমানতের একটি অংশ নগদে ও ট্রেজারি বিল ও বন্ড কিনে সরকারকে ঋণ দিয়ে থাকে।

জানতে চাইলে বাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, নতুন আমানত আসছে কম। অনেকে মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমানত ভাঙিয়ে ফেলছেন। অথচ ঋণ দেওয়ার চাপ রয়েছে। এতে অনেক ব্যাংক হয়তো এসএলআরের অতিরিক্ত বিল ও বন্ড নগদায়ন করে ফেলছে। এ ধরনের প্রবণতায় স্বাভাবিকভাবে সুদহার বাড়ছে। তবে কোনো কোনো ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত টাকা রয়েছে। তারা কলমানিতে বিনিয়োগ করে আয় করতে পারছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের ঋণ চাহিদা বাড়লে তারল্য সংকট স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।

অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবুল কাশেম খান বলেন, ব্যাংকগুলো তারল্য সংকট থেকে বেসরকারি খাতে এক ঋণের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে। আমরা বিনিয়োগ করতে ব্যাংকগুলোর দ্বারস্থ হলেও তহবিল পাচ্ছি না। এমন পরিস্থিতির মধ্যে সরকারের উচ্চমাত্রায় ব্যাংকঋণের প্রাক্কলন বেসরকারি খাতে ঋণের জোগানকে টেনে ধরবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!