• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
নতুন অর্থমন্ত্রীতে আশার আলো

ব্যাংক খাতের চ্যালেঞ্জ অনেক


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ৯, ২০১৯, ০১:৫২ পিএম
ব্যাংক খাতের চ্যালেঞ্জ অনেক

ঢাকা : নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা দুই মেয়াদে যে দায়িত্ব পালন করেছেন সেই দায়িত্ব এবার চেপেছে বিদায়ী সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রীর ওপর। কুমিল্লার এই সাংসদ অর্থিক খাতের নতুন অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় আগেই ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়কে নতুন করে সাজাবেন তিনি। তার এই ঘোষণায় ইতোমধ্যে ব্যাংক খাতে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

কারো কারো মতে, তিনি আগের চাইতে ভালোভাবেই দেশের আর্থিক খাতকে সামাল দিতে পারবেন। আবার কারও মতে, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে নতুন এই অর্থমন্ত্রীকে। গত দুই দিনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) বিভিন্ন স্তরে বড় পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা হয়।

তারা সকলেই বলছেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা দশ বছর এই খাতের অভিভাবক ছিলেন। ফলে সরকারের বাজেট নীতি থেকে সার্বিক অর্থনীতিতে তার দিক নির্দেশনা প্রতিফলিত হয়েছে। এখন নতুন মন্ত্রী পেল এই খাত। আ হ ম মুস্তফা কামাল একজন স্বনামধন্য হিসাববিদ। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও এক জন সফল উদ্যোক্তা। ফলে ব্যবসায়িক সমস্যা ও অর্থনীতির সব দিকই তার কাছে অনেক স্পষ্ট। কাগুজে হিসাব দিয়ে কেউ বেরিয়ে আসতে পারবেন না।

তাছাড়া আংশিক তথ্য দিয়ে কেউ কোনো ফায়দাও লুটতে পারবে না। ফলে একটি সতর্ক বার্তা এরই মধ্যে চলে এসেছে। তবে সরকারের প্রশাসনে অনিয়ম ও দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। এখানে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও জড়িয়ে পড়েন। সেটি না হলেও আর্থিক খাত আরো গতি পাবে। তারা জানিয়েছেন, আগামী ৫ বছর এমনিতেই অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। বিনিয়োগ বাড়বে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যাংকার বলেছেন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফেরানো নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। টালটালাম ব্যাংক খাত সামাল দিতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় এখন যেভাবে চলছে। সেভাবে আর চলবে না। নতুন পরিসরে অর্থ মন্ত্রণালয় যাত্রা শুরু করবে। এখানে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমি ব্যর্থ হব না।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বলছে, বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদে ব্যাংক খাতের ১০টি বড় জালিয়াতির মাধ্যমে লোপাট হয়েছে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। তবে এসব জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে মূলত সরকারি ব্যাংকগুলোতে। সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক গ্রুপ দিয়ে শুরু। জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে অন্য সরকারি ব্যাংকগুলোতে।

বেসরকারি খাতের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ফারার্মস ব্যাংকের ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনাও কম যায়নি।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সিপিডির যে হিসাব তা কমই বলা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে আরো বেশি অর্থ ব্যাংক খাত থেকে বেরিয়ে গেছে। যে অর্থ ফিরবে কিনা প্রশ্ন রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নতুন সরকারের বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ব্যাংকিং খাতকে অনিয়ম ও লুটপাটের হাত থেকে রেহাই দেয়নি। ব্যাংকিং খাতকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এটি বন্ধ করতে হবে। এটাই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংক খাতে জবাবদিহিতা নেই। তার জন্য খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। মূলধন খেয়ে ফেলছে ব্যাংকগুলো। যেসব ব্যাংক এক সময় ভালো ছিলো সেগুলোরও আর্থিক অবনতি হচ্ছে। একটি গোষ্ঠীর কাছে চলে যাচ্ছে পুরো খাত। যা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নতুন সরকারকে এখানে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সংক্রামক ব্যাধির মতো সরকারি ব্যাংকের সমস্যা বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আক্রান্ত করছে। এটা বড় উদ্বেগের বিষয়।

টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে বলছে, অর্থনীতিকে তারা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। বিনিয়োগ, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি), আমদানি-রফতানি বাণিজ্য আগামী ৫ বছরে নতুন রেকর্ড অর্জন করবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!