• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
কমিশনসহ বিকল্প ব্যবস্থায় সুদের আড়াইগুণ আয় সম্ভব

ব্যয়ের চাপ, বিকল্প আয়ে মনোযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০, ০৯:০১ পিএম
ব্যয়ের চাপ, বিকল্প আয়ে মনোযোগ

ঢাকা : ঋণের সুদ হার কমানোর আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চলছে। মন্দা পুঁজিবাজার থেকে বিনিয়োগ আয় কমছে। খেলাপি ঋণ গিলে খাচ্ছে মুনাফা। কিন্তু ব্যাংকগুলোর পরিচালনা ব্যয় রাতারাতি কমানো যাচ্ছে না। বেতনভাতা পরিশোধে চলে যাচ্ছে বড় ব্যয়। কিন্তু সুদ থেকে আয় কমে যাচ্ছে। ফলে নন ব্যাংকিং উৎসের দিকে মনোযোগ বাড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো। কমিশন, এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ চার্জের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

ব্যাংকাররা বলছেন, মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে দিতে চায় সরকার। এ জন্য বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। তবে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে কেউ বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন না। ফলে বিনিয়োগ অনেকটা স্থবির হয়ে গেছে। কমে গেছে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি।

তারা বলছেন, আমাদের সরকারের নীতি বাস্তবায়নে অংশ নিতেই হবে। তবে এই দক্ষতার প্রকাশ ঘটাতে হবে তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের। তারা কতটা সফলভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন সেটির ওপর নির্ভর করে নয়-ছয় সুদ হার বাস্তবায়ন।

আলাপকালে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ঋণ ও আমানতের সুদ হার নিয়ে বড় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি দেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ দরকার। আর সেটি হতে হবে সহনীয় সুদে। এত উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। পৃথিবীর কোথাও এত বেশি সুদ নেই। উৎপাদন খরচের বড় অংশ চলে যাচ্ছে সুদ পরিশোধে। তাই প্রধানমন্ত্রী সঠিক দিক নির্দেশনা দেন। আমানতের সুদ হার হবে ৬ শতাংশ, ঋণের ৯ শতাংশ। এর ফলে অর্থনীতি নতুন উচ্চতায় যাবে।

তিনি বলেন, তবে এখানে আমার কিছু পরামর্শ রয়েছে। ছয়-নয় সুদ হার কার্যকর করার দায়িত্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দক্ষতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৯ শতাংশ সুদ আমরা দ্রুতই কার্যকর করেছি। কারণ আমাদের তহবিল ব্যয় অনেক ব্যাংকের থেকে কম। তবে অনেক ব্যাংকের জন্য সময় লাগতে পারে।

যাদের খেলাপি ঋণ বেশি, আমানত কম, মূলধন ঘাটতি ও তহবিল ব্যয় বেশি তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এজন্য সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। কেবল সুদ থেকে আয়ের ওপর নির্ভর করলে হবে না। কমিশন আয় কীভাবে বাড়ানো যায় সেই পরিকল্পনা নিতে হবে। সুদের থেকে আড়াইগুণ আয় সম্ভব কমিশন থেকে।  

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ঋণের সুদ হার কমাতে চাইলে খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তার সঙ্গে ব্যাংকগুলোর বিলাসী ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কেবল একদিকে মনোযোগ দিয়ে এটি কার্যকর করা যাবে না।

জানা গেছে, তফসিলি ব্যাংকগুলোর বিলাসী ব্যয় কমাতে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগেও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সম্মানীসহ সুযোগ-সুবিধা নির্দিষ্ট করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় একাধিক।

ব্যাংকাররা বলছে, ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয়ের বড় অংশ যাচ্ছে জনবল ব্যবস্থাপনায়। কর্মীদের বেতন, ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বিপুল অর্থ চলে যায়। ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে কর্মীর সংখ্যা কমাতে হবে। এতে আবার ব্যাংকগুলোর ভেতরে শঙ্কা বাড়বে। কর্মীরা চাকরি হারানোর ভয়ে থাকবেন। তাই রাতারাতি ব্যয়ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত ব্যাংক খাত। বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সচল রাখতে ব্যাংক খাতের গুরুত্ব অনেক। অন্যদিকে, আমাদের দেশে এখনো বিকল্প অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি।

কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি হতাশা তৈরি করছে। খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি, আমানত ও ঋণের উচ্চ সুদ হারসহ অগ্রাধিকার সব সূচকে নিম্নমুখী ব্যাংক হতাশা বাড়াচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বার বার আশার কথা শোনালেও অবনতি ঠেকানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ৪৫ হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণ বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত করার কার্যক্রম চলছে।

সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যমান পরিস্থিতি ব্যাংকিং খাতের জন্য ‘অশনিসংকেত’- এমন মন্তব্য করেছে বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ায় ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ সমস্যার সমাধানে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!