• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বাজেট ২০১৬-১৭ অর্থবছর

‘বড় পরিবর্তনের’ বাজেট পেশ আজ


জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি জুন ২, ২০১৬, ০৯:৪১ এএম
‘বড় পরিবর্তনের’ বাজেট পেশ আজ

জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ‘বড় পরিবর্তন’ আর ‘স্বপ্নবিলাসী’ বাজেট পেশ হচ্ছে বৃহস্পতিবার (২ জুন)। আগের মতো কালো টাকা সাদা করার সুযোগসহ নানাবিধ ‘প্যাকেজ’ নিয়ে আসছে আগামীর বাজেট। শেষ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও মাঝি ব্যবসায়ীদের দাবি শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরেও প্যাকেজ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ব্যবস্থা বহাল থাকছে। তবে এর পরিমাণ বেশ বাড়ানো হচ্ছে। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (২ জুন) জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এনবিআরের সূত্রগুলো বলছে, আগামী অর্থবছরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় প্যাকেজ ভ্যাটের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা হতে পারে। বর্তমানে এসব এলাকায় প্যাকেজ ভ্যাট ১৪ হাজার টাকা। আর অন্য সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০ হাজার টাকা এবং জেলা শহরের পৌর এলাকায় ৭ হাজার ২০০ টাকা। এ দুটি এলাকায়ও প্যাকেট ভ্যাটের পরিমাণ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। এ ছাড়া অন্য এলাকায় ৩ হাজার ২০০ টাকার পরিবর্তে ৬ হাজার টাকার প্রস্তাব করা হতে পারে।

আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে শুল্ককর পুনর্বিন্যাসের প্রভাবে বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়তে বা কমতে পারে। এসব পণ্যের স্থানীয় পর্যায়ে ও আমদানিতে শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি হ্রাস-বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া অনেক পণ্য ও সেবা খাতে অব্যাহতি সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট পণ্যের মূল্য বাড়বে। অনেক পণ্য থেকে শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব পণ্যের দাম কমতে পারে।

প্রসঙ্গ প্যাকেট ভ্যাট : প্যাকেজ ভ্যাট থেকে খুব বেশি রাজস্ব পায় না এনবিআর। প্রতিবছর গড়ে ১০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আসে এ খাত থেকে। মূলত ছোট দোকানদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বার্ষিক থোক হিসেবে এ প্যাকেজ ভ্যাট দিয়ে থাকেন। বর্তমানে আড়াই লাখ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন আছে। এর মধ্যে মাত্র ৬৮ হাজার প্রতিষ্ঠান প্যাকেজ ভ্যাট দেয়। নতুন আইনে প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থা বাতিল করে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভারে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থা বহাল রাখার দাবিতে সারা দেশের ছোট ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করছেন। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব বলেন, টাকার পরিমাণ এত বেশি হলে দেয়া সম্ভব নয়। এটা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। এফবিসিসিআইয়ের সুপারিশ অনুযায়ী ঢাকা সিটি করপোরেশনে ১৮ হাজার টাকা হলে ছোট ব্যবসায়ীদের প্রত্যেকেই ভ্যাট দিতে পারবে।

আয়কর : তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের ওপর রপ্তানিকালে উৎসে কর বাড়ানো হচ্ছে। নিট, ওভেন, টেরিটাওয়েল, কার্টন ও সরঞ্জামাদি রপ্তানির ক্ষেত্রে এ হার ১ শতাংশ করা হতে পারে। বর্তমানে এসব পণ্য রপ্তানি করলে দশমিক ৬০ শতাংশ কর দিতে হয়। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকের রপ্তানি মূল্যের (এফওবি মূল্য) এ উৎসে কর দেন, যা চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে বিবেচিত। এ ছাড়া হিমায়িত খাদ্য, পাট, চামড়া, সবজি ও প্যাকেটজাত খাদ্য রপ্তানি করলেও উৎসে কর ১ দশমিক ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব আসছে বাজেটে।

উৎসে কর বাড়ানো হলেও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হার অবশ্য কমানো হচ্ছে। এ হার হতে পারে ১৫ শতাংশ। বর্তমানে ৩৫ শতাংশ হারে তৈরি পোশাক খাতের ওপর করপোরেট কর আরোপ আছে। তবে বিজিএমইএ বলছে, উৎসে কর শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ করা উচিত। যদি বাড়ানো হয়, তবে ছোট ও মাঝারি পোশাক কারখানা শেষ হয়ে যাবে। এমনিতেই তারা ক্রেতাদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের কারখানা পরিদর্শন নিয়ে একধরনের চাপের মধ্যে আছেন। আর করপোরেট কর যদি ১০ শতাংশ করা না হয়, তবে বিনিয়োগ বাড়বে না। 

ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা না বাড়লেও করপোরেট কর হারও পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যবসায় ও উৎপাদক এ দুটি ক্যাটাগরি করা হবে। উৎপাদক কোম্পানিকে কিছুটা ছাড় দিয়ে ব্যবসায় কোম্পানির চেয়ে আড়াই শতাংশ কম করপোরেট কর আরোপ হতে পারে। অন্যদিকে ফ্ল্যাট কিনে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে। এখন আয়তনভিত্তিক নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা যায়। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের উৎস জানাতে হয় না। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে ছোট বিনিয়োগকারীদের কিছুটা ছাড় দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত মুনাফায় কর নেই, এ সীমা কিছুটা বাড়ানো হতে পারে।

শুল্ক : শুল্ক স্তরে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে ১, ৫, ১০ ও ২৫-এ চার স্তরের আমদানি শুল্ক আছে। আগামী অর্থবছরে ১৫ শতাংশের আরেকটি নতুন স্তর তৈরি করা হচ্ছে। এনবিআরের প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন শুল্ক স্তর হবে ১, ৫, ১০, ১৫ ও ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক হার ৪ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হতে পারে। আর আমদানি পর্যায়ে শ খানেক পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক হ্রাস বা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আমদানি শুল্কের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ও ২৫ শতাংশের স্তরে থাকা কিছু পণ্য ১৫ শতাংশ শুল্ক স্তরে নেয়া হবে। আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে শুল্ককর এই পুনর্বিন্যাসের প্রভাবে বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়তে বা কমতে পারে। 

যেসব পণ্যের দাম বাড়বে : প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পণ্যের আমদানি ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে। তাই কিছু পণ্যের আমদানি খরচ বাড়তে পারে, তাই দামও বাড়বে। এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে কর্নফ্লাওয়ার, ফাইবার অপটিক কেবল, ভার্নিশ রিমুভার, ট্যালকম পাউডার, সিগারেট, ওয়াশিং মেশিন, চা পাতা, ট্রাভেল ব্যাগ, আমদানি করা চাল, বই, মশার ব্যাট, অপটিক ক্যাবল। এছাড়া দাম বাড়তে পারে গাম রেজিন, ইউরিয়া রেজিন, ১০ থেকে ১২০ এমভিএ এবং ২০০০ ভিএ জেনারেটর, এলপিজি সিলিন্ডার, পার্টিক্যাল বোর্ড, এডহেসিভ টেপ, ফায়ারডোর, গ্রিজ, লুব্রিকেন্ট অয়েল ইত্যাদি। আমদানি করা এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। 

যেসব পণ্যের দাম কমবে : আমদানি পণ্যের শুল্ক হ্রাসের ভিত্তিক বাজেটের পর কয়েকটি পণ্যের দাম কমতে পারে। এর মধ্যে হাইব্রিড গাড়ি, আমদানি করা সংযোজিত মোটরসাইকেল, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, পাথর, পেট্রোলিয়াম জেলি, কয়লা, এলপিজি সিলিন্ডার (গ্যাস সিলিন্ডার), টায়ার-টিউব শিল্পে ব্যবহৃত গাম রেজিন, ইলেকট্রিক্যাল পণ্যের কাঁচামাল ইউরিয়া রেজিন। এছাড়াও দাম কমতে পারে ওয়াইফাই, ওয়াইম্যাক্স, একসেস পয়েন্ট এবং ফায়ারওয়াল (সিকিউরিটি হার্ডওয়্যার), শিল্পে ব্যবহৃত ফ্রিজ, এলইডি বাল্ব, কর্নফ্লাওয়ার, শিশুখাদ্য সাগু, সয়াকেক ইত্যাদি।

কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চাল আমদানিতে ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তামাক ও তামাকজাতীয় পণ্য (বিড়ি বা সিগারেট) তৈরির যন্ত্রপাতি আমদানিতে আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। এ ছাড়া কিছু পণ্য আমদানির ওপর নতুন করে শুল্ক বসানো হচ্ছে। এর মধ্যে ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, বায়োমেট্রিক স্ক্যানারে ৫ শতাংশ, মশা মারার ব্যাটে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসতে পারে। অন্যদিকে মরদেহ রাখার জন্য মরচুয়ারি আমদানিতে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক তুলে নেয়া হচ্ছে। আর এলইডি ল্যাম্পের ওপর আমদানি শুল্ক তুলে দেয়া হচ্ছে।

তবে আবাসিক হোটেল নির্মাতার জন্য বাজেটে ভালো খবর নেই। অতি বিনিয়োগ প্রবণতা রোধে এসব অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত উপকরণ আমদানিতে শুল্ক দ্বিগুণ হয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য অন্যবারের মতো ডাল, গম, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ওষুধশিল্পের জন্য শুল্ক রেয়াত সুবিধা অব্যাহত থাকবে। নির্মাণ খাতে ব্যবহৃত সিমেন্টের কাঁচামাল ফ্লাই অ্যাশ, বড় পাথর (বোল্ডার) ও ছোট পাথর আমদানিতে শুল্ক কমানো হতে পারে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!