• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিসা পাওয়া নিয়ে নানা জটিলতা


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৩০, ২০১৬, ০১:৫৭ পিএম
ভিসা পাওয়া নিয়ে নানা জটিলতা

সোনালীনিউজ রিপোর্ট

বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানে কঠোরতা আরোপ করছে বিভিন্ন দেশ। এ কারণে ভিসা প্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়ছে বাংলাদেশের জন্য। সূত্রমতে, যেসব দেশে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা বেশি মূলত সেইসব দেশই ভিসার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ করছে। এছাড়াও দালালদের আধিপত্যের কারণেও বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রাপ্তিতে ভোগান্তি পোহাচ্ছে ভিসা প্রত্যাশীরা।

এদিকে, বাংলাদেশেদের জন্য যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়া নিয়ে সমস্যা অনেক পুরনো। এর সঙ্গে এখন সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের ভিসাও সহজে মিলছে না। জরুরি চিকিৎসার জন্য এখন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ভিসাও সহজসাধ্য নয়। 

কূটনৈতিক সূত্র স্বীকার করেছে, বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করেছে কয়েকটি দেশ। সূত্রানুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় ২৫ হাজার ভিসার আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে মাত্র দেড় হাজার জন ভিসা পেয়েছেন। প্রায় ১০ হাজারের মতো ভিসা দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হয়েছে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই। অনেকের পাসপোর্ট তিন সপ্তাহ থেকে এক মাস আটকে রেখে ভিসা না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্র মতে, গত বছর আগস্টে ব্যাংককে একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার পর ভ্রমণ ভিসার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশনা দিয়েছে থাইল্যান্ড সরকার। এ ছাড়া ঢাকায় দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রদূত না থাকায় সংকট আরও বেড়েছে। একই ধরনের জটিলতায় পড়তে হচ্ছে সিঙ্গাপুরের ভিসার ক্ষেত্রেও। 

সূত্র আরো জানায়, কিছুদিন আগে জঙ্গি সন্দেহে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে সিঙ্গাপুরের পুলিশ গ্রেফতারের পর বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। আগে চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়সূচির প্রমাণপত্র দিলে সহজে ভিসা দেওয়া হতো। এখন চিকিৎসার জন্য ভিসার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। 

জানা গেছে, গত তিন-চার মাসে সিঙ্গাপুরের ভিসা প্রার্থীদের প্রায় ৮০ শতাংশেরই আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় সিঙ্গেল এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসা এয়ারলাইন্সের রিটার্ন টিকিট এবং কোথায় কত দিন থাকবে তার সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়া হচ্ছে। তবে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ব্যাংক ব্যালেন্সের তথ্য এবং অন্যান্য কাগজপত্র সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ফলে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে।

আরেক সূত্রে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারের ভিসা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। ঢাকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সেন্টার খোলা হলেও ভিসা পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া সৌদি আরবে ওমরাহ ভিসার আবেদনের ক্ষেত্রেও ৫০ শতাংশ আবেদনকারী ভিসা পাচ্ছেন না বলে সূত্র জানায়।

ইতালি, ফ্রান্সের ভিসা পাওয়া নিয়েও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। দিল্লিতে ভিসা সেন্টার স্থানান্তরের পর যুক্তরাজ্যের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার বাড়তে শুরু করে। এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে এক মাসের অধিক সময় নিয়ে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে অনেকে পূর্বনির্ধারিত ফ্লাইট সিডিউল অনুযায়ী ভ্রমণ করতে পারছেন না।

অন্য একটি সূত্র জানায়, ইতালির ভিসা নিয়েও বড় ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। ভিসার আবেদনের পর তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত পাসপোর্ট আটকে রাখা হচ্ছে। ভিসাপ্রার্থীরা ভিসা ছাড়া পাসপোর্ট ফেরত চাইলেও দেওয়া হচ্ছে না। ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ভিসার ক্ষেত্রে দালালচক্র কাজ করছে। এই চক্রকে তাদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে ভিসা প্রক্রিয়াধীন আছে জানিয়ে পাসপোর্ট দীর্ঘ সময় আটকে রাখে। প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে হাতেগোনা দু’একজন ছাড়া অধিকাংশই ফ্রান্সের ভিসা পায়নি বলে সূত্র জানায়।

ভারতের ভিসা তো দূরের কথা, ভিসা প্রাপ্তির ই-টোকেনের কথাও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না গমনিচ্ছু কোন যাত্রী বা দালালেরা। ভারতীয় সরকার বন্ধুপ্রতীম দু’দেশের জনগণের জন্য ভিসা প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে অনলাইনে ভিসার আবেদন গ্রহণ শুরু করেন। তাতে সাড়াও মেলে ব্যাপক। কিন্তু ভারতীয় ভিসা পাওয়ার কাজ ভারতীয় দূতাবাসের কাছ থেকে চলে গেছে একটি নির্দিষ্ট দালাল চক্রের হাতে। আগে অনলাইনে ভারতীয় ভিসার ই-টোকেন (ভিসা প্রাপ্তির আবেদনপত্র জমা দেয়ার তারিখসহ) সহজে পাওয়া যেত। দালালদের চাহিদানুযায়ী টাকা দেয়ার পরেও ভিসা মিলছে না।

এমনকি কবে দূতাবাসে গেলে ভিসা পাওয়া যাবে তার তারিখও (টোকেন) জানাতে পারছে না দালালরা। ভারতীয় ভিসা প্রসেসিং কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ই-টোকেন দেয়ার ব্যবস্থা করলেও তা পাওয়া এখন কঠিন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ভিসা প্রত্যাশীরা। এ সুযোগে বিনামূল্যের ই-টোকেনের বাণিজ্যের সুযোগে সংঘবদ্ধ একটি দালাল চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীদের।

তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সংকট সমাধানে চেষ্টা চালাচ্ছে। ভিসা পাওয়া নিয়ে সমস্যা দ্রুতই কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোনালীনিউজ/আমা

Wordbridge School
Link copied!