• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
নিত্যসঙ্গী ফাতেমাও আছেন ফিরোজায়

মনোবল বেড়েছে, অসুস্থতা কমেছে


বিশেষ প্রতিনিধি মার্চ ২৯, ২০২০, ০১:০২ এএম
মনোবল বেড়েছে, অসুস্থতা কমেছে

ঢাকা : খোলা আকাশ আর মুক্ত বাতাস না পেলেও পারিবারিক পরিবেশে মানসিকভাবে স্বস্তিতে আছেন, মনোবল বেড়েছে বেগম খালেদা জিয়ার। অসুস্থতা কমেছে। ফ্যাকাশে চেহারায় আনন্দের ছাপ। দুদিন আগে কারাপ্রকোষ্ট থেকে তিনি ঘরে ফেরেন। ১৫ দিনের জন্য ‘ফিরোজা’য় আছেন সেলফ কোয়ারেন্টাইনে।

বাসার দোতলায় কখনো শুয়ে, কখনো বসে এবং বইপত্র পড়ে দিন কাটাচ্ছেন চার দেয়ালের ভেতরেই। বন্দি ও মুক্ত অবস্থায় নিত্যসঙ্গী ফাতেমাসহ পাশে আছেন আরো কয়েকজন। চিকিৎসার জন্য দূরত্ব বজায় রেখে কথা হচ্ছে ডাক্তারদের সঙ্গে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কূশলবিনিময় করছেন ফোনে। অন্যদের প্রবেশাধিকার নেই। দলীয় নেতাদের সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না, কথাও বলছেন না। নিরাপত্তাকর্মীরা সব সময় গেট বন্ধ রেখে পাহারা দিচ্ছেন। পরিবার ও চিকিৎসকদের মাধ্যমে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিএসএমএমইউর মেডিকেল বোর্ডের ব্যবস্থাপত্র ও পরীক্ষার কাগজপত্রসমূহের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

গত বুধবার বিকালে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুলশানের ফিরোজায় আসেন খালেদা জিয়া। বাসায় আসার পর ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে দেখে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন। ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া রিউমাটিজ আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখ ও দাঁতের নানা রোগে আক্রান্ত।

শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, কোয়ারেন্টাইনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার পুরো কার্যক্রম তদারকি করছেন লন্ডন থেকে তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘কোয়ারেন্টাইনে ম্যাডামের চিকিৎসা চলছে। উনি শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ হলেও ঘরোয়া পরিবেশে এখন স্বস্তিবোধ করছেন। ওনার মানসিক শক্তিটা বেড়ে গেছে। আগে যে বিপর্যস্ত চেহারা ছিল সেটাও অনেকটা কমে আসছে। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. জোবাইদা রহমান ম্যাডামের পুরো চিকিৎসার কার্যক্রম সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন।’

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘ম্যাডাম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এই সময়ে সোশ্যাল ডিসটেন্স অর্থাৎ একজন থেকে অপরজনকে যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলার নিয়ম, তা যথাযথ মেনেই ম্যাডামের সেবা প্রদানকারীরাও সেবা দিচ্ছেন।’

খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ইতোপুর্বে লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করে সেখানেই শারীরিক চেকআপসহ হাঁটুর অপারেশন করান। সে থেকেই লন্ডনের ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনেই ওষুধ চলছে। মাধ্যম হিসেবে ডা. জোবাইদা রহমান দেখাশোনা করছেন। বন্দিদশায়ও তিনিই চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।

গুচ্ছ শর্ত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার দিয়েই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেছে তার পরিবার। প্রধানমন্ত্রীর দরজায় পর্যন্ত যেতে হয়েছে। তার দল বিএনপি ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পরিবারের তরফ থেকেই। নেতারা যেন এমন কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য না দেন যাতে সরকার রুষ্ট হয়। দোষারোপটা বিএনপির কাঁধে না পড়ে। এর অংশ হিসেবেই বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় ত্যাগ করেছেন।

আর মুক্তির দিন ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সামনাসামনি হলেও দলের স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ অন্যদের সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি বিএনপি প্রধান।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও মনে করেন, দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তারেক রহমানই যথেষ্ট। ইতোমধ্যে সিনিয়রদের সঙ্গে মানানসই হয়েছেন তিনি। পরস্পরের বোঝাপড়ার দিকটি মিটমাট হয়েছে। সামনের দিনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে খালেদা জিয়ার ভূমিকা দরকার হবে না বলেই ধারণা জন্মেছে নীতিনির্ধারকদের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!