• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যানজট নিরসনে প্রস্তাবনা


মো. রেজাউল করিম (সোহাগ) আগস্ট ২৭, ২০১৯, ০৩:৪২ পিএম
যানজট নিরসনে প্রস্তাবনা

ঢাকা : আমাদের নিত্যদিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে সমস্যা এবং বিড়ম্বনা তার নাম হলো যানজট। সরকারের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও এ সমস্যার কার্যকরী সমাধান এখনো অনিশ্চিত। সমাজের একজন সচেতন ব্যক্তি এবং ভুক্তভোগী হিসেবে এ সমস্যার সমাধানে নিম্নলিখিত ভাবনা একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। আশা করি সমাজের সচেতন ব্যক্তি ও সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচিত হবে।

যানজটের কারণ :

১) রাস্তার স্বল্পতা, ২) প্রতিদিন অসংখ্য গাড়ি ও জনগণের চলাচল, ৩) অপরিকল্পিত পার্কিং ব্যবস্থা), ৪ ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের অভাব, ৫) হকার ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলা আনয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের অভাব, ৬) শহর এলাকার অভ্যন্তরে আন্তঃজেলা বাসের প্রবেশ ও বহির্গমন।

প্রধান কারণ :

১) একটি নির্দিষ্ট সময়ে (অফিস সময়) সীমিত রাস্তায় প্রচুর গাড়ির চলাচল, ২) সারা দিন বিরামহীনভাবে প্রচুর লোকজনের চলাচল (অফিস যাত্রী, ছাত্রছাত্রী, দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোক)।

নিরসনে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বা ভাবনা :

উল্লিখিত সমস্যাবলির স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রক্রিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যমান আছে। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু সময়সাপেক্ষ, সুতরাং নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ব্যাপকহারে যানজটের বিড়ম্বনা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

মূল পরিকল্পনা :

অফিস বা বাণিজ্যিক কার্যাবলির সময়সূচি ২টি শিফটে চালু করা :

সকাল ৮.০০-বিকাল ৪.০০, সকাল ১১.০০-সন্ধ্যা ৭.০০।

১ম শিফটে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ইত্যাদি।      ২য় শিফটে বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক, বীমা, মার্কেট অন্তর্ভুক্ত থাকবে, এবং মার্কেট রাত ১০.০০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

রমজানের সময়সূচি : সকাল ৮টা-২টা পর্যন্ত (রমজানে বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে)।    

মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিম্নবর্ণিত সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন :

ক) অফিস টাইম কড়াকড়ি ভাবে পালন করার নিমিত্তে কোন ওভার টাইমের সুযোগ থাকবে না এবং এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংযোগ সব প্রতিষ্ঠানের ৪.০০টা এবং ৭.০০টার পর বন্ধ হয়ে যাবে।

খ) প্রত্যেক এলাকায় ট্র্যাফিক পুলিশের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল এবং ট্র্যাফিক নিয়ম পালন করার ক্ষেত্রে যথাযথ শৃঙ্খলা

 বজায় রাখার বিষয়টি বাধ্য করা যেতে পারে। (যেটা এখন অনেক এলাকায় বিদ্যমান আছে)।

গ) আন্তঃজেলা বাস স্টেশন কাঁচপুর, টঙ্গী এবং অন্যটি বুড়িগঙ্গার ওপারে অবস্থিত হবে। শহর এলাকায় কোন আন্তঃজেলা বাস প্রবেশ ও বাহির হতে পারবে না। দূরের জেলার যাত্রীরা টঙ্গী, কাঁচপুর এবং বুড়িগঙ্গার ওপার থেকে সিটি বাস, উবার, ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্যাক্সি, সিএনজি, বিআরটিসি ইত্যাদির মাধ্যমে শহর এলাকা থেকে বহির্গমন ও প্রবেশ করবে।

ঘ) এক্ষেত্রে সরকারের স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যা ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে তা বিদ্যমান থাকবে।

ঙ) ভূ-গর্ভস্থ পার্কিং ব্যবস্থা শহরের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। (নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলীদের উপদেশ অনুযায়ী)।   

চ) হকারদের জন্য বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ছুটির দিনে বা প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বসার ব্যবস্থা করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে, তবে কোনক্রমে ফুটপাতে নয়।

সুফল :

ক) দুটি শিফটের কারণে ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে রাস্তায় গাড়ির পরিমাণ বর্তমানের চেয়ে অর্ধেকের বেশি কমে যাবে এবং সাথে সাথে জনগণের চলাচল ব্যাপকভাবে সীমিত হয়ে আসবে। অর্থাৎ তিন ঘণ্টার ব্যবধান যানজট পরিস্থিতিকে বিভাজিত (ঝঢ়ষরঃ) করবে।

খ) মানুষ নিত্য দিনের অফিসের কাজ ব্যতীত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজ করার ক্ষেত্রে সময় পাবে। যেমন— সকালের শিফটের মানুষ বিকালের যাবতীয় কাজ করার সুযোগ পাবে এবং বিকালের শিফটের মানুষ সকালে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজ সম্পন্ন করে অফিসে যেতে পারবে।

গ) অতিরিক্ত সময় অফিসে ব্যয় না করার কারণে (ওভার টাইম নিষিদ্ধ) বিদ্যুতের খরচ কম হবে।

ঘ) নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করার তাগিদে কর্মদক্ষতা ও শৃঙ্খলাবোধ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

ঙ) পারিবারিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত কর্মস্থলে শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ বিদ্যমান থাকবে। পরিবার যেহেতু কর্ম প্রেরণার উৎস সেই কারণে মানুষ এই প্রক্রিয়ায় পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারবে। হাজার হাজার শ্রমঘণ্টা সাশ্রয়ের পাশাপাশি জ্বালানী তেলও সাশ্রয় হবে।

চ) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে যে হিমশিম খাওয়ার মতো অবস্থা তা অনেকংাশে লাঘব হবে দুটি শিফটের কারণে ।

ছ) স্কুল-কলেজের ছাত্র/ছাত্রীরা নিজেদের অনেক সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োগ করতে পারবে।

জ) দূরবর্তী জেলার যাত্রীদের কিছুটা সমস্যা হবে কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে এবং শহর এলাকায় কিছু বিআরটিসি ও অনন্য উন্নত বাস চালু করলে এ অবস্থা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।

ঝ) অফিস সময় দুটি শিফটে ১ ঘণ্টা আগে (বর্তমানে ৯.০০ টার পরিবর্তে ৮.০০টা) ও ১ ঘণ্টা পরে (বর্তমানে ১০.০০ টার পরিবর্তে ১১.০০টা) করা হলে এটা জনমনে কোন বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। এর প্রভাব বা সুফল হবে ব্যাপক।

ঞ) এদেশের বিপুল জনগণ ও যানবাহন চলাচল শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে ট্র্যাফিক আইন পালনে বাধ্য করার মাধ্যমে সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। একটি সিষ্টেম (প্রস্তাবিত দুটি অফিস টাইম) চালু করার মাধ্যমে এবং সহায়ক পদক্ষেপগুলি কঠোরভাবে পালনের মাধ্যমে পুরো যানজট ব্যবস্থা সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা এই সমস্যার সার্বিক সমাধান সম্ভব নয়।

সুতারাং অবিলম্বে দুটি শিফটে অফিস সময় চালুর পাশাপাশি সহায়ক পদক্ষেপগুলির বাস্তব প্রয়োগের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গ্রহণ করার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষক

 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!