• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোজ হাশরে শাফায়াত


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৮, ২০১৯, ১২:২২ পিএম
রোজ হাশরে শাফায়াত

ঢাকা : হাশরের ভয়াবহ ময়দানে সব মানুষকে যখন একত্র করা হবে, তখন সেদিনের ভয়াবহতায় সবাই অস্থির দিকভ্রান্ত হয়ে ছোটাছুটি করবে। ভয়াবহ যন্ত্রণা ও পেরেশানিতে অস্থির হয়ে তারা দ্রুত বিচার শুরু হওয়ার সুপারিশের জন্য বিভিন্ন নবী (আ.)-এর কাছে ছুটে যাবেন। সবশেষে তারা আমাদের নবী (সা.)-এর কাছে সুপারিশের আবেদন জানাবেন। তখন আল্লাহর অনুমোদনে তিনি বিচার শুরু করার জন্য মহান প্রভুর দরবারে আবেদন করবেন। আল্লাহতায়ালা তার আবেদন মঞ্জুর করে বিচার শুরু করবেন।

আর সেই বিচার দিবসে মানবজাতির জন্য যে শাফায়াত করা হবে, তাকে শাফায়াতে কুবরা বলা হয়। আল্লাহতায়ালা এই শাফায়াতের অধিকার শুধু রসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন। কোন কারণে কে শাফায়াত লাভ করতে পারেন, সে বিষয়ে এ নিবন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো—

তাওহিদের ঘোষণা এবং এর ওপর অবিচল ব্যক্তি : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বিশ্বনবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.)! কেয়ামতের দিন আপনার শাফায়াত দ্বারা কে ভাগ্যবান হবে?

তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি জানি তোমার আগে কেউ এ হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেনি। তোমাকে হাদিসের বিষয়ে বেশি আগ্রহী দেখছি। (তাই তোমাকে বলছি) কেয়ামতের দিন আমার শাফায়াত দ্বারা সবচেয়ে ভাগ্যবান হবে ওই ব্যক্তি, যে অন্তর দিয়ে নির্ভেজাল পদ্ধতিতে বলেছে— আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। (সহিহ বুখারি)

সকাল-সন্ধ্যা দশবার করে দুরূদ শরিফ পাঠকারী : হজরত উম্মে দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল ও সন্ধ্যায় দশবার করে দরূদ শরিফ পাঠ করে, সে কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভ করবে। (সহিহ আত তারগীব)

আজানের পর দোয়া পাঠকারী : হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আজান শুনে (প্রতিবার) একবার দরূদ শরিফ পাঠ করে বলে- ‘আল্লা-হুম্মা রব্বা হা-জিহিদ্দা ওয়াতিত্তাম্মা’। ওয়াসসলাতিল ক্বয়িমা। আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসি-লাতা ওয়ালফাদিলা। ওয়াবআসহু মাক্বামাম্মাহমু-দানিলাজী-ওয়া আততা। ইন্নাকালাতুখলিফুল মি’আদ।’ তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে। (সহিহ বুখারি, তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)

মদিনা মুনাওয়ারায় মৃত্যুবরণকারী : ঐতিহাসিক হাররার ঘটনার সময় আবু সাঈদ মাওলা আল মাহরী আবু সাঈদ খুদরি (রা.)-এর কাছে এসে মদিনা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য পরামর্শ চাইলেন। তিনি অভিযোগ করলেন, মদিনার আসবাবপত্র ও পণ্যের দাম বেশি এবং তার সন্তান-সন্ততির সংখ্যাও প্রচুর। তাও বললেন, মদিনার এই দুঃখ ও কষ্টে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা তার নেই।

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) তাকে বললেন, হায় আফসোস! আমি তোমাকে এ পরামর্শ দিতে পারি না। কারণ আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি মদিনার দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ করে এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করে— কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য শাফায়াতকারী বা সাক্ষী হব যদি সে মুসলিম হয়।’ (সহিহ মুসলিম)

জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী : হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে ওয়াদা করবে যে, সে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ (জিহ্বা) এবং দুই ঊরুর মধ্যস্থিত অঙ্গের (লজ্জাস্থান) হেফাজত করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব। (সহিহ বুখারি)

কারো কাছে হাত না পাতা : হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে এ বিষয়ে জিম্মাদারি দিবে যে, সে কারো কাছে কখনো হাত পাতবে না, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব। (আবু দাউদ)

রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কবর জিয়ারতকারী : হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল। (সুনানে ইবনে মাজা, সুনানে দারা কুতনি, সুনানে বায়হাকি কুবরা, মুসনাদে তায়ালিসি, শুয়াবুল ইমান) অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। নবীয়ে আকরাম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নিষ্ঠার সঙ্গে মদিনা মুনাওয়ারায় হাজির হয়ে আমার কবর জিয়ারত করবে, আমি কিয়ামত দিবসে তার সাক্ষী হব এবং তার জন্য শাফায়াতকারী হব। (বায়হাকি, শিফাউস সিকাম)

বিশেষ দোয়া : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক নবীর রয়েছে কিছু দোয়া, যা অবশ্যই কবুল করা হয়। সব নবী (আ.) এ দোয়াগুলো করার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করেছেন।

কিন্তু আমার উম্মতকে কেয়ামতের দিন শাফায়াত করার জন্য এ দোয়াগুলো আমি ব্যবহার করিনি। ইনশাল্লাহ! সেই দোয়ার মাধ্যমে শাফায়াত পাবে আমার অনুসারীর ওই সব ব্যক্তি যারা কখনো আল্লাহতায়ালার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করেনি। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক

 

Wordbridge School
Link copied!