• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সবুজ দেয়ালে আসুক স্নিগ্ধতার পরশ


নিউজ ডেস্ক জুলাই ২৪, ২০১৯, ০৪:২৬ পিএম
সবুজ দেয়ালে আসুক স্নিগ্ধতার পরশ

ঢাকা: পরিবেশ বিপর্যয়ের খেসারত দিচ্ছি আমরা প্রতিনিয়ত। শহরে তীব্র হচ্ছে অনাবৃষ্টির প্রভাব। খাঁ-খাঁ বিরানভূমির মতো দাঁড়িয়ে আছে অজস্র দালানকোঠা। এসব দালানে আধুনিক ও নান্দনিক ডিজাইন এবং রঙের চাকচিক্য আমাদের আকৃষ্ট করলেও সবুজের দেখা মেলে না। দৃষ্টি সীমানায় সবুজের অভাব কেবল চোখের দ্যুতিকে ম্লান করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। খুবই সীমিত বৃক্ষের উপস্থিতি এসব যান্ত্রিক শহরের বায়ুকে নির্মলতা ও স্নিগ্ধতার পরশ দিতে পারছে না। এ কথা সত্য, মহানগরে ছাদবাগান বা আঙিনায় বাগান করার সুযোগ কম। তবে

আমরা চাইলেই ঢাকাসহ জেলা উপজেলা শহরগুলোকে খুব সহজেই সবুজে রূপান্তরিত করতে পারি। তাই অফিস বা আবাসনে সবুজের আবহ আনতে ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং করা যেতে পারে। ঘরে-বাইরের দেয়াল, বাসার সম্মুখভাগে খোলা পরিসর, বারান্দা-এসব ছোট্ট জায়গায় বাগান সৃজনের একটি বিশেষ পদ্ধতির নাম ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং। ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং বা উল্লম্ব বাগান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে কয়েকটি ধাপ বা তলায় একটি গাছের ওপর আরেকটি গাছ লাগিয়ে একটি উল্লম্ব বাগান করা হয়। এ ক্ষেত্রে অল্প জায়গায় অধিক গাছ রোপণ করে বাড়ির দেয়ালটিকে সবুজের স্নিগ্ধতায় ঢেকে দেওয়া যায়।

বিজ্ঞান সাময়িকী অ্যাটমস্ফেরিক এনভায়রনমেন্টে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শহরাঞ্চলে বড় বড় ইমরাতের ফাঁকে বা রাস্তার পাশে লতাগুল্মের দেয়ালগুলো গাছের চেয়ে ভালো দূষণ প্রতিরোধক। বিজ্ঞানীরা বলছেন, লতা-গুল্মের দেয়াল বাতাসে ভেসে থাকা বিষাক্ত উপাদান শোষণ করে মানুষকে সরাসরি বায়ুদূষণের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাতাসের দূষণকারী উপাদান শুষে নিতে এই লতা-গুল্মের দেয়ালগুলো গাছের চেয়ে ভালো কাজ করে। তবে গবেষকরা উন্মুক্ত স্থানে গাছ লাগানোকেও বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

সিঙ্গাপুর ও প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিল্লি, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরুর ভ্যালিকন সিটি বা খোদ কলকাতার বিভিন্ন জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং বা উল্লম্ব বাগান। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশে ভার্টিকেল গার্ডেনের এই সবুজ দেয়াল ব্যাপক জনপ্রিয়। ভবনের নির্মাণকাজ আড়াল করতে ইট-সিমেন্টে বা ইস্পাতের নির্মিত দেয়ালের পরিবর্তে এটি তৈরি হয় গাছ দিয়ে। এই প্রচেষ্টা পরবর্তী সময়ে ল্যান্ডস্কেপিং ও ভবনের বিভিন্ন স্থানে বাগান তৈরির মাধ্যমে ভবন ও আশপাশেও প্রতিফলিত হয়। শহরের সৌন্দর্যায়নের স্বার্থে ইতোমধ্যে নানা পরিকল্পনা করেছে নিউ টাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ (এনকেডিএ)। এখানকার উপনগরীর ফ্লাইওভার, মেট্রোর পিলারের মধ্যে তৈরি এই গার্ডেনের মাধ্যমে যেমন শহরকে আরো আকর্ষণীয় দেখাবে, তেমনই দূষণ ঠেকাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে এ পরিকল্পনা। দূষণের লাগাম টানতে নিউ টাউনের বেসরকারি সংস্থাগুলোর ওপরে দুটি শর্ত আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনকেডিএ।

প্রথমটি হলো, নিউ টাউনের মধ্যে যাতায়াতের জন্য সংস্থার মোট কর্মীর মধ্যে ২৫ শতাংশকে সাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। আর দ্বিতীয়টি, জোর দিতে হবে বনসৃজনে। পেট্রল-ডিজেলচালিত গাড়ির ব্যবহার না-কমলে দূষণের মাত্রা ঠেকানো সম্ভব নয় বলে মত এনকেডিএ-র কর্তাদের।

বিভিন্ন গবেষণা তথ্য বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, গাছের নরম পাতাগুলো সহজেই কম্পন হওয়ায় শব্দতরঙ্গকে বাধা দেয় মেটাল বা কংক্রিটের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। ঢাকার বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বিশ্বের অধিকাংশ শহরের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। তাই এসব যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং। গাছের শরীরে বা পাতার খসখসে অংশে কিংবা পত্ররন্ধ্রে ধূলিকণা আটকে পড়ে প্রতিনিয়ত। রাস্তার পাশের গাছের পাতাতে নজর পড়লেই দেখা মিলবে এমন বাস্তবতার। তাছাড়া গাড়ির কালো ধোঁয়াও শুষে নেয় সবুজ প্রকৃতি, তার দেহজুড়ে জায়গা মেলে কার্বন পার্টিকেলের। বাগান সৃজনের একটি বিশেষ পদ্ধতি ‘ভার্টিক্যাল গার্ডেন’, যেখানে অল্প জায়গায় অধিক গাছ রোপণ করে স্থানটি সবুজে সাজিয়ে তোলা যায়। যাদের ছাদে বা আঙিনায় বাগান করার সুযোগ নেই, তাদের জন্য ভার্টিক্যাল গার্ডেন বা উল্লম্ব্ব বাগান ইদানীং খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যদিও ভার্টিক্যাল গার্ডেন বাড়ির ছাদে কিংবা যেকোনো পরিসরেই করা সম্ভব, তবু শহরের সবুজপ্রিয় মানুষ বিকল্প জায়গা না পেয়ে বারান্দা ও ঘরের দেয়ালকেই বেছে নিচ্ছে।

ঘরের ভেতরে, লিভিং রুম বা অফিসেও চাইলে ছায়াবান্ধব পাতাবাহারি গাছ দিয়ে ভার্টিক্যাল গার্ডেন তৈরি করা যায়। মানিপ্ল্যান্ট, এলোকেশিয়া, ফার্ন, স্পাইডার, লিলি, এনথোরিয়াম, বোট লিলি, ড্রাসেনা, মেরেন্টা, মনস্টেরা ইত্যাদি গাছ দিয়ে ভার্টিক্যাল গার্ডেন করে অফিস বা বাসাবাড়ির ভেতরের দেয়ালগুলো নান্দনিকভাবে সাজিয়ে তোলা যায়। ইদানীং বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্লাস্টিক, লোহা, স্টিল বা কাঠের ফ্রেম বানিয়ে দেয়ালে সেট করে তাতে পোর্টেবল টব ঝুলিয়ে ভার্টিক্যাল গার্ডেন তৈরি করা হচ্ছে। পাশাপাশি দেয়ালের ধাপে ধাপে সিমেন্টের স্থায়ী বেড বানিয়েও ভার্টিক্যাল গার্ডেন করা যায়। আবার দেশীয় প্রচলিত পদ্ধতিতে বাঁশ, কাঠ ও রডের মতো সহজলভ্য উপকরণ দিয়ে তুলনামূলক কম খরচেও ভার্টিক্যাল গার্ডেন করা সম্ভব। ভার্টিক্যাল গার্ডেনে যেহেতু পরিচিত ও দেশীয় সহজলভ্য গাছগুলোই রোপণ করা হয়, তাই এর যত্ন ও পরিচর্যা-পদ্ধতি খুব একটা জটিল নয়। পরিমিত পানি ও প্রতি এক-দুই মাস অন্তর পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার, সার, ভিটামিন সরবরাহ করলেই গার্ডেন সবুজ ও সতেজ থাকে। এ ছাড়া অটোমেটিক ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম চালু করে তার সঙ্গে টাইমার কিংবা সেন্সর সেট করে সঠিক পানি-ব্যবস্থাপনা করা যায় ভার্টিক্যাল গার্ডেনে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এসএস

Wordbridge School
Link copied!