• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাধ-সাধ্যে সবার জন্য সুখবর


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১১, ২০১৯, ০১:৩৪ পিএম
সাধ-সাধ্যে সবার জন্য সুখবর

ঢাকা : সবাইকে সুখবর দিতে চেষ্টা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদ। এর আগে দুই মেয়াদে অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট দিয়ে গেছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফলে নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালকে একটি চাপ সামাল দিতে হবে। ধারাবাহিক ব্যয় ও আয়ের সঙ্গে তিনি সাধারণ মানুষের জন্য নতুন কী চমক দিতে পারেন সেটি দেখার বিষয়। তবে তাকে সমন্বয় করতে হবে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে। এর মধ্য দিয়েই সবাইকে তুষ্ট করতে চাচ্ছেন মুস্তফা কামাল। তবে কাজটি অনেক কঠিন।

অবশ্য অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একটি কথা বারবার বলে এসেছেন। তিনি কারো বিপক্ষে নন। কেউ তার কাছ থেকে খালি হাতে ফিরে যাবেন না। বাজেট প্রণয়ন-সংক্রান্ত সব আলোচনাতেও তিনি একই কথা বলেছেন। সবার জন্য সাধ্যের মধ্যে ভালো কিছু করবেন তিনি। আর এই কাজে তিনি ব্যর্থ হতে চান না। তবে শুরুতেই হয়তো সবকিছু করতে পারেন এমনটা আশা করেন না। তবে আস্তে আস্তে তার অর্থনৈতিক ভাবনার সুফল পৌঁছে দিতে চান প্রান্তিক মানুষের কাছে। যারা প্রবীণ নাগরিক তাদের কথা মনে রেখেছেন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে যাচ্ছেন। কর মুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ালেও করের হার খুব বেশি বাড়াতে চান না।

সব ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে জাতীয় সংসদে এর অনুমোদন-সংক্রান্ত বৈঠক হবে। আর বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ রোববার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আয়ের নতুন খাত তৈরি করতে হবে। কারণ খরচ বাড়লে তাকে আয় বাড়াতেই হবে। তা ছাড়া সরকারের বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। নতুন বাজেটে সেসব প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।

সূত্রগুলো বলছে, চাপে থাকলেও তা প্রকাশ করবেন না মুস্তফা কামাল। তিনি চেষ্টা করছেন, সবাইকে সুখবর দিতে। অর্থনীতির বড় তিন চালিকা শক্তি হচ্ছে, দেশের কৃষক, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক ও বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকরা। তাদের জন্য অর্থমন্ত্রী ভালো খবর দিতে যাচ্ছেন এবার। অবশ্য কৃষকদের খারাপ সময় যাচ্ছে। বাম্পার ফলন দিয়েছেন এবার তারা। কিন্তু পাচ্ছেন না ন্যায্য মূল্য। কৃষকদের স্বস্তি দিতে হবে আগে।

একইভাবে দেশের ব্যবসায়ী, দিনমজুরসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতে নতুন অর্থমন্ত্রীতে ভরসা পান, সেদিকে সর্তক তুখোড় এই হিসাববিদ। তবে দেশের অর্থনীতিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে সংকট। শেয়ারবাজারের নাজুক পরিস্থিতি। বিনিয়োগে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না আসা। ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটে কমে গেছে বেসরকারি ঋণের হার। বেড়ে গেছে ঋণের সুদ হার। ১৫-১৭ শতাংশ হার সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ফলে বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান হবে না। বাড়বে সামাজিক অস্থিরতা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেট অর্থের পরিমাপে রেকর্ড হলেও উপস্থাপনায় হবে আগের তুলনায় ছোট। প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো তিনি এড়িয়ে যাবেন। বাজেটের মূল লক্ষ্যের দিকে থাকছে নজর। এজন্য ব্যয়ের ব্যাপারে তিনি যেমন সাবধান, আবার আয়ের নতুন নতুন খাত খুঁজতে পরিকল্পনা জানাবেন সাবেক এই পরিকল্পনামন্ত্রী।

অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে তিনি বেসরকারি খাতের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নেবেন। আর এতে সমর্থন রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। আর ব্যবসায়ীরাও চান বেসরকারি খাতে আরো গতি তৈরি হোক। বিনিয়োগে নীতি সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে তিনি ব্যবসায়ীদের পাশে চান। এতে করে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। ব্যাংক ঋণের সুদ হার যাতে কমে, তার জন্য প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ঘোষণা আসতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর দুই দফা নির্দেশনার পরও ব্যাংক মালিকরা সুদের হার কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেননি। ফলে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগ কতটা সুফল দেবে-সেই প্রশ্ন সামনে আসবে।

প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা যাতে উপার্জিত অর্থ বেশি পরিমাণে দেশে পাঠান, তার জন্য আসছে নগদ প্রণোদনা। দেশে প্রেরিত অর্থের ওপর এই প্রণোদনার ঘোষণা করতে যাচ্ছেন তিনি। তবে কৃষকদের লোকসান নিয়ে এবার দেশব্যাপী সমালোচনা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আগের অর্থমন্ত্রীকে পড়তে হয়নি। তাই কৃষকদের জন্য কিছু করতেই হবে। তা নাহলে খাদ্য নিরাপত্তা যারা নিশ্চিত করছেন, সেই কৃষক ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। আর তৈরি পোশাক খাতকে উৎসাহ দিতে কর রেয়াত দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ তাদের উৎসে করে কিছুটা ছাড় দেওয়া হবে।

সমাজ নির্মাণে অবদান রাখেন দেশের শিক্ষকরা। তাদের জন্য বাজেটে বিশেষ প্যাকেজ থাকবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের এমপিওভুক্তকরণে বিশেষ বরাদ্দ থাকবে।

সূত্রে জানা গেছে, এবারের বাজেটের ব্যয়ের আকার দাঁড়াবে ৫ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। আর আয় করতে চান পৌনে চার লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেড় লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি ঘাটতি থাকবে। এই ঘাটতির জোগান আসবে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎসের ঋণ থেকে। তবে এখানেও একটি বিশৃঙ্খলা চলছে। কারণ সঞ্চয়পত্রের উচ্চ সুদের কারণে মানুষ ব্যাংকের আমানত তুলে নিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনছে।

ফলে অনেকেই বলছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমাতে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষের ভোটে নির্বাচিত অর্থমন্ত্রী কী করেন সেটি দেখার বিষয়। অবশ্য সাধারণ মানুষকে মূল্যস্ফীতির জাঁতাকল থেকে বাঁচাতে চান মুস্তফা কামাল। তবে ধারাবাহিকভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য রয়েছে নতুন বাজেটে। মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ মনে করেন, দেশে আয় বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। এজন্য দরকার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। আয় বৈষম্য কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ দিতে হবে অর্থমন্ত্রীকে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে এভাবে বৈষম্য চলতে পারে না। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়তে স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আয় বৈষম্য কমাতে হবে।   

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!