• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্থায়ী জামিন পেলেন খালেদা জিয়া


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১২, ২০২০, ১১:২৯ এএম
স্থায়ী জামিন পেলেন খালেদা জিয়া

ঢাকা : মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে নড়াইলের দায়েরকৃত মানহানির মামলায় স্থায়ী জামিন পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি এস এম মবিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আজ শুনানি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী।

খালেদার আরেক আইনজীবী গোলাম আকতার জাকির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর নড়াইল জেলার নড়াগাতি থানার চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম বাদী হয়ে খালেদা জিয়ার নামে নড়াইল সদর আদালতে মানহানি মামলা করেন।

২০১৬ সালের ২৩ আগস্ট খালেদা জিয়াকে সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। নির্ধারিত সময়ে খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা না হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

এর আগে ওই বছরের ২৫ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন একই আদালত।

মামলার বিবরণে আরও জানা যায়, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে স্বাধীনতাযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বির্তক আছে বলে মন্তব্য করেন।

এ ছাড়া একই সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম উল্লেখ না করে তাকে (বঙ্গবন্ধু) ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, তিনি স্বাধীনতা চাননি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ চাননি। তার এই বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় প্রচার হয়।

মামলার বাদী নড়াইলের চাপাইল গ্রামের রায়হান ফারুকী ইমাম নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে বসে এ খবরটি পড়ে মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ হন। পরে রায়হান ফারুকী বাদী হয়ে ২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নড়াইল সদর আমলি আদালতে মামলা করেন।

অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের অভিযোগে খালেদা জিয়ার নামে নড়াইলের আদালতে ২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে আরও একটি মানহানি মামলা করা হয়।

এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী সম্পর্কে বিতর্কিত বক্তব্যের অভিযোগে একই দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নামেও মানহানি মামলা হয়।

মামলা দুটি করেন শহীদ শেখ জামাল জাতীয় স্মৃতি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কালিয়ার শেখ আশিক বিল্লাহ।

সাময়িক মুক্তির প্রসঙ্গ

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে তাঁর পরিবার। মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে করা ওই আবেদনের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়েও। প্রয়োজন হলে আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অভিমত দেবে।

এদিকে, দলীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার সম্প্রতি ওই আবেদন করেছেন। তবে বিএনপির বেশির ভাগ নেতা এ বিষয়ে অন্ধকারে আছেন। আর কেউ কেউ জেনেও এ নিয়ে লুকোচুরি করছেন।

এদিকে, মুক্তির আবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার রোববার (৮ মার্চ) বলেন, ‘নো কমেন্ট।’ কিন্তু গণমাধ্যমে এসংক্রান্ত যে সংবাদ ছাপা হয়েছে সেটি সত্যি কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়েও কিছু বলব না।’

এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার (৮ মার্চ) বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করলে করতে পারে। আমি জানি না। এটি পরিবারের ব্যাপার।

বিষয়টি নিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমি এবং আমরা কিছুই জানি না। অন্য অনেকের মতো আমিও দু-একটি সংবাদপত্রে নিউজ দেখে অবাক হয়েছি।

বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের আরেক নেতা সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার  বলেন, ‘আমার জানা মতে আবেদন করা হয়নি।’ অবশ্য শামীম এস্কান্দারের ‘নো কমেন্ট’ এর তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মৌনতা সম্মতির লক্ষণ! হয়তো আবেদন করেছে।’ 

এদিকে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী সাজা স্থগিতের আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। রোববার (৮ মার্চ) তিনি বলেন, ‘আবেদন করার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে আমি পথ দেখিয়েছিলাম। তারা (পরিবার) কী করছেন আমাকে জানায়নি।’

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির পরামর্শে কিছুদিন আগে খন্দকার মাহবুব হোসেনই এ ধরনের আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বলে জানা যায়। ওই আবেদনে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বাক্ষরও করেছিলেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনা না পাওয়ায় ওই আবেদন স্থগিত করে আবারও হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়েছিল, যা পরে নাকচ হয়ে যায়।

ফলে খালেদা জিয়ার কারামুক্তির বিষয়ে বিএনপি এবং তার পরিবারের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। কারণ পরিবারের সদস্যদের কাছে বিষয়টি আবেগের এবং যেকোনো মূল্যে তারা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে লন্ডনে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে চান। অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইছে বিএনপি। 

বিষয়টি নিয়ে ভেতরে ভেতরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দু-একজন নেতা ও মন্ত্রীর সঙ্গে তাদের অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও হয়েছে। তবে সাড়া না পাওয়ায় দলগতভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিষয়টি আপাতত পরিবারের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

কারণ পরিবারের সদস্যরাই কেবল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রায় এক বছর ধরে চেষ্টা সত্ত্বেও বিএনপি নেতারা ওই সুযোগ পাননি। ফলে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য আসলে কোন পথে মুক্তি চান তা জানেন না দলের নেতারা।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে বন্দি আছেন খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দণ্ডিত হওয়ার পর তাকে নেয়া হয় পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। কয়েক দফায় সেখান থেকে এনে তাকে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা দেয়া হয়। সর্বশেষ গত বছর ১ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!