• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ লোকসমাগম নেই বইমেলায়


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯, ০২:২৮ পিএম
হঠাৎ লোকসমাগম নেই বইমেলায়

ঢাকা : শুরুর প্রথম দুই দিন শুক্র ও শনিবার থাকায় গ্রন্থমেলা বেশ ভরাট লেগেছিল। রোববার মেলার তৃতীয় দিন লোকসমাগম এতই কম হয়েছে যে মনে হয়েছে— হঠাৎ মেলা শূন্য হয়ে পড়েছে। আদতে এটাই মেলায় ঘটে থাকে। মেলা জমতে একটু সময় লাগে। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলা সাধারণত শুরুর সপ্তাহ পরেই পূর্ণতা পায়।

রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) মেলা শুরু হয় বেলা ৩টায়। প্রথম ঘণ্টায় বিক্রেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া আর কাউকেই দেখা যায়নি। সূর্য নেমে যাওয়ার সঙ্গে কিছু মানুষ মেলায় ঢুকেছে। তবে বেচাকেনা একেবারে ছিল না বললেই চলে।

মেলায় তৃতীয়বারের মতো স্টল পেয়েছেন কালো’র প্রকাশক শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ। গতকাল তিনি বলেন, আজ যে মেলায় দর্শনার্থী থাকবে না, সেটা আমরা জানতাম। শুরুর দুই দিন সরকারি ছুটি থাকায় মানুষ এসেছিল এবং বই বেচাকেনাও হয়েছে। তবে মেলা পুরোপুরি জমতে সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।

তবে সন্ধ্যার পর মেলায় মোটামুটি দর্শনার্থী দেখা গেছে। তাদের বেশিরভাগই বই কেনেননি। নেড়েচেড়ে দেখেছেন। মিরপুরের বাসিন্দা সোহরাব হোসেনকে দেখা গেল শিশু কর্নারে বই উল্টেপাল্টে দেখছেন। তিনি জানালেন, অফিস শেষ করে বাসায় ফেরার পথে মেলায় ঢু দিয়েছেন।

হঠাৎ শূন্যতা : মূলত বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছেন। পরিবারসমেত এক দিন আসবেন। সেদিন বই কিনবেন।

এদিকে বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সুবর্ণজয়ন্তী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। বলা হয়ে থাকে ঊনসত্তর না হলে সত্তরের নির্বাচন হতো না আর সত্তর না এলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধও হতো না। বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা আরো প্রলম্বিত হতো-অধিকারহারা মানুষকে হয়তো জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়াতে হতো। প্রসঙ্গত এ কথা উল্লেখ করাও যৌক্তিক যে ঊনসত্তর হঠাৎ করে আসেনি। ঊনসত্তরের প্রেক্ষাপট তৈরির সংগ্রাম দীর্ঘ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি এবং ছাত্রসমাজের সংগ্রামী ভূমিকার প্রতি আস্থা রেখে সর্বস্তরের মানুষ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল সুন্দর জীবনের আশায়। রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অধিকারের পাশাপাশি সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে এসেছিল অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে। আর সে কারণেই স্কুলছাত্র মতিউর জীবন দেয়, জীবন দেয় শ্রমিক মনু মিয়া।

আলোচকবৃন্দ বলেন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহিদের স্বপ্ন আজও পূরণ হয়নি। এ অভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ সংকেত। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আর্থ-সামাজিক-রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির স্বপ্নে পঞ্চাশ বছর আগে পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামো ও সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল। আজ গণঅভ্যুত্থানের সুবর্ণজয়ন্তী এবং স্বাধীনতার আসন্ন সুবর্ণজয়ন্তীর প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে মানুষের সে স্বপ্নপূরণের দিন এসেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে— গণঅভ্যুত্থানের সুবর্ণজয়ন্তীতে এ আমাদের দৃঢ় প্রত্যাশা।

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান অত্যন্ত গুরুত্ববহ ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের এক বৃহৎ প্রস্তুতিপর্ব এ গণঅভ্যুত্থান। মুক্তিযুদ্ধের মর্ম অনুধাবন করতে হলে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে আমাদের বিশদ বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি রবিউল হুসাইন এবং আলতাফ হোসেন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম ও ঝর্ণা সরকার। সংগীত পরিবেশন করেন ফাহিম হোসেন চৌধুরী, সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, আবদুর রশিদ এবং নুসরাত বিনতে নূর। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন সুবীর চন্দ্র ঘোষ (তবলা), সুনীল কুমার সরকার (কী-বোর্ড), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) এবং অসিত বিশ্বাস (এসরাজ)। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের সাহিত্যকর্ম বিষয়ে আলাপনে অংশ নেন আবুল কাশেম, দিলদার হোসেন, শামীম রেজা, অদিতি ফাল্গুনী এবং কৌস্তুভ শ্রী।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৩৮টি। গল্প ২০, উপন্যাস ২০, কবিতা ২০, প্রবন্ধ ১৫, শিশুসাহিত্য ১০, জীবনী ৬ ও অন্যান্য বিষয়ক গ্রন্থ ৪৭টি।

এর মধ্যে অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে মোহিত কামালের উপন্যাস ‘সত্যজানা সন্দেহপালক’, জলতরঙ্গ পাবলিকেশন থেকে কবি আসলাম সানীর ছড়ার বই ‘পুরান ঢাকার জেল্লা, লালবাগ কেল্লা’, অন্যধারা পাবলিকেশন্স থেকে সৈয়দ রনোর গল্পগ্রন্থ ‘জীবনবোধের নামতা’, আগামী প্রকাশনী থেকে হাসনাত আবুল হাইয়ের মুক্তিযুদ্ধের গল্প ‘ফেসবুকে কয়েক দিন’, ঐতিহ্য থেকে রুদ্র আরিফের কাব্যগ্রন্থ ‘মেনিকিনের লাল ইতিহাস’ ও বিভাস থেকে কবি নির্মলেন্দু গুণের ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থ ‘ভ্রমণ সমগ্র’ অন্যতম।

আজকের অনুষ্ঠান : আজ সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার চতুর্থ দিন। মেলা চলবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বঙ্গবন্ধু উপাধি অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নূহ-উল-আলম লেনিন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সুভাষ সিংহ রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তোফায়েল আহমেদ এমপি। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।


সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!