• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হতভাগা শিশু কাঁদাচ্ছে মানুষকে


ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি অক্টোবর ২০, ২০১৮, ০৭:৫৮ পিএম
হতভাগা শিশু কাঁদাচ্ছে মানুষকে

ঢাকা : সন্তানের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো মায়ের কোল। কিন্তু সেই মা-ই যখন সন্তানের মৃত্যুর কারণ হয় তখন? ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকের ছাদ থেকে চার দিনের নবজাতককে ফেলে দেয়ার ঘটনার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।

অনেকেই ছবিটি নিজের টাইমলাইনে দিয়ে আবেগাপ্লুত হচ্ছেন। বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে মর্মান্তিক ছবিটি। এই ছবিটি শুধুমাত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়াকেই কাঁদায়নি। সামাজিক মাধ্যমে শোকের মাতম তুলেছে ছবিটি।

ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে- হাসপাতালের সামনের সড়কে পড়ে আছে প্রাণহীন শিশু। নিথর ছোট্ট দেহকে ঘিরে রয়েছে হতভম্ব জনতা।

উল্লেখ্য, হৃদয়বিদারক শিশুহত্যার এ ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে। সীমা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের ফুলচং গ্রামের মনির মিয়ার স্ত্রী। লেবানন প্রবাসী মনিরের সঙ্গে পারিবারিকভাবে গত এক বছর আগে তার বিয়ে হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকের ছাদ থেকে মাত্র চার দিনের নবজাতককে ফেলে দেয় সীমা আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূ। পরে নিজেও লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

শহরের পুরনো জেলরোডের দ্য ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্পেশালাইজড হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। মা-সন্তানের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই।

এ নিয়ে সৈয়দ মো. মহসিন নামে একজন তার ফেসবুক ওয়ালে লিখিছেন, ‘এমন মৃত্যু কারো কাম্য নয়। আয়লান কুর্দির মৃত্যু দুনিয়ার বিবেককে নাড়া দিয়েছিলো। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিস্পাপ শিশুকে নিয়ে দি ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের ছাদ থেকে পরে গৃহবধূর মৃত্যর ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা বাংলার মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়ে গেল। এমন মৃত্যু কারও কাছেই প্রত্যাশিত নয়। পরপাড়ে ভালো থেকো প্রয়াত মা ছেলে।’

ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে প্রকাশ দাস নামে একজন লিখেছেন, ‘জীবন চলার টাকা নামক কাগজের কাছে পরাজিত নবজাতকের মরদেহ। নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ, নিথর। যেখানে সকল শব্দেরাই ইতি টানলো। জীবনের কাছে কতটাই না অসহায় আত্মসমর্পণ ছিল সেই মায়ের, যে মা তার চার দিনের নবজাতককে বহুতল ভবন থেকে ফেলে দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিল। পরে নিজেও সেই ভবন থেকে ঝাঁপ দিয়ে জীবনের শেষ অধ্যায়ের রচনা করে গেল। পেছনে রেখে গেল নানা প্রশ্নের ঝুলি।’

মনিরুজ্জামান পলাশ নামে এক সংবাদকর্মী শিশুটির ছবি দিয়ে লিখেছেন, আজ যে শিশুর থাকার কথা ছিল পরম আদরে, বাবা-মায়ের মান-অভিমান তাকে নিয়ে গেল লাশকাটা ঘরে।

এভাবেই অনেকে ফেসবুকে শিশুটির ছবি নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিচ্ছেন। তারা জানিয়েছেন ছবিটি শুধু মানুষকে কাঁদিয়েছে না। হার মানিয়েছে মানবতাকে।

ঘটনাটির ভিডিও আপলোড করেছেন কেউ কেউ।

মা-সন্তানের মৃত্যু ঘটনায় সদর মডেল থানায় একটি অপমৃত্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়নি। মামলার তদন্তে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এই বিষয়ে হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ কোন গাফলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন জানান, ‘শিশুর ছবিটি দেখে আমরাও মর্মাহত। এ ঘটনায় সদর মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এই বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত পর জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা। তবে ধারণা করা হচ্ছে স্বামীর সাথে অভিমান করেই সীমা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার প্রসব বেদনা নিয়ে ল্যাব এইড হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী লাইফ কেয়ার শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন সীমা আক্তার। এদিন রাতেই সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে সন্তান প্রসব করেন তিনি। গতকাল শুক্রবার সকালে সীমা ও তার সন্তানের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এদিন সাকাল সাড়ে ৮টায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!