• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৫ কারণে বিপদে আওয়ামী লীগ


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৪, ২০২০, ০৯:০৪ পিএম
৫ কারণে বিপদে আওয়ামী লীগ

ঢাকা: টানা ১১ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় থাকার যেমন সুফল আছে তেমনি তার কুফলও এখন আওয়ামী লীগ টের পাচ্ছে। নানা রকম অস্থিরতায় অস্বস্তিতে রয়েছে মুজিববর্ষের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ। এই অস্বস্তির ব্যাপারে সবাই তাকিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

বিশেষ করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আশা করছেন শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই এই বিষয়গুলোর লাগাম টেনে ধরবেন। যে সমস্ত বিষয়ে আওয়ামী লীগ এখন অস্থিরতায় ভুগছে তার মধ্যে রয়েছে;

মুজিববর্ষ নিয়ে বাড়াবাড়ি: মুজিববর্ষ উদযাপন প্রত্যেকটি বাঙালির কাঙ্খিত এবং আরাধ্য একটি বিষয়। কিন্তু মুজিববর্ষ নিয়ে যেরকম বাড়াবাড়ি হচ্ছে তা নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এই ক্ষুব্ধতা তিনি প্রকাশও করেছেন। গত সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষের উৎসবের নামে বাড়তি অর্থ অপচয় না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এই নির্দেশনা একটি বড় বার্তা। এর মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, মুজিববর্ষ নিয়ে অনেক অপচয় হচ্ছে এবং বাড়াবাড়ি হচ্ছে। 

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ মুজিববর্ষ নিয়ে যে যার মতো অনুষ্ঠান উদযাপনের আয়োজন করেছে। এরফলে শেষপর্যন্ত মুজিববর্ষের মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য এবং জাতির পিতার প্রতি যে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সেটা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এদিকে, মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে বড় বাজেট বা বাড়তি ব্যয় না করার জন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে সমন্বয় করে দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য বলেছেন তিনি। গত সোমবার (২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

মুজিববর্ষের কর্মসূচি নিয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, আমরা প্রিসাইসলি (ব্যাখ্যা) বলে দিয়েছি, এই উপলক্ষে প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তার একটা নোটেবল প্রোগ্রামকে মুজিববর্ষের প্রোগ্রাম হিসেবে ঘোষণা করবে, তার নরমাল বাজেট থেকে। যদি ভিন্ন কোনো কাজ থাকে তার জন্য অতিরিক্ত টাকা চিন্তা করা যেতে পারে; কিন্তু বড় বড় বাজেট দিয়ে নতুন কাজ করার দরকার নেই।’

তিনি বলেন, ‘উদাহরণ হিসেবে এসেছে, অর্থ বিভাগ মুজিববর্ষ ঘোষণার সাথে সাথে প্রোগ্রাম নিল- ডিসেম্বরের মধ্যে ছয় লাখ পেনশনারের বাড়িতে পেনশন দেবে। এ প্রোগ্রাম তারা মুজিববর্ষের প্রোগ্রাম হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ রকম ভালো কোনো প্রোগ্রামকে মুজিববর্ষের প্রোগ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা যাবে।’

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো কোনো প্রোগ্রাম করতে গিয়ে যদি ফান্ড লাগে, উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিল্পী আনবেন, এটার জন্য পেমেন্ট করতে হবে। স্টেজ হবে, এ জন্য আলাদা টাকা দেয়া হবে না। পিডব্লিউডি তার মেইনটেনেন্স বাজেট থেকে করে দেবে। পেমেন্টের দরকার হলে এএফডি (সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ) তার বাজেট থেকে করে দেবে, এ জন্য আলাদা কোনো টাকা দেয়া হবে না।’

সচিব বলেন, সবাইকে কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে সমন্বয় করে প্রোগ্রাম নিতে বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘খালি বাজেট নয়, সবার নতুন নতুন কিছু করার দরকার নেই। আমার যে প্রোগ্রাম আছে মানুষের কল্যাণে বা দেশের উন্নয়নে কনট্রিবিউট করতে পারি ওটা মুজিববর্ষের সাথে মোর সিনোনিমাস। ওই জাতীয় প্রোগ্রাম, নরমাল যে প্রোগ্রামটা আছে সেটিকে আরো ইফেকটিভ করেন। অনেকে বুঝতে পারেন না, মনে করেছেন নতুন প্রোগ্রাম নিতে হবে।’

পাপিয়া কেলেঙ্কারি: পাপিয়া কেলেঙ্কারি নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে অস্থিরতা চলছে। আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, এমপির ছবি পাপিয়ার সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে একটি পাঁচ তারকা হোটেলে একটি স্থানীয় পর্যায়ের অঙ্গসংগঠনের নেতা কিভাবে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট নিয়ে থাকেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। আর কত পাপিয়া আছে তা নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা রকম মুখরোচক আলোচনা চলছে। পাপিয়া এখন আওয়ামী লীগের এক অস্থিরতার নাম।

অন্তকলহ- কোন্দল: আওয়ামী লীগের দিন যতই যাচ্ছে ততই আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে বিরোধ অন্তকলহ প্রকাশ্য রুপ ধারণ করছে। আগে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের মধ্যে অন্তকলহের খবর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন এই

অন্তকলহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যেও প্রকাশ্য হয়েছে। সম্প্রতি পিরোজপুরের সাবেক এমপি এবং বর্তমান মন্ত্রী ও এমপিকে নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধ আওয়ামী লীগের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী করেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের দ্বন্দ্ব-ও নতুন খবর নয়। প্রত্যেকটা জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগ অন্তকলহে জড়িয়ে গেছে। কেন্দ্র থেকে বারবার ঘোষণার পরেও এই অন্তকলহ থামানো যাচ্ছেনা।

অনুপ্রবেশকারী: আওয়ামী লীগ সভাপতি দুই বছর আগে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ঘোষণা দিয়েছিলেন। অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে দল থেকে বের করে দেয়া এবং তাঁদের কোন পদ-পদবী না দেওয়ার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তবে কে শোনে কার কথা। অনুপ্রবেশকারীরা এখনো আওয়ামী লীগে অবাধে প্রবেশ করছে এবং অনুপ্রবেশকারীরা এখন এতটাই প্রভাবশালী হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, তাঁরা দলের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। আর এটা আওয়ামী লীগের জন্য একটি মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

কমিটি জট: আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি দীর্ঘদিন ধরে ঘোষণার অপেক্ষায় আছে। এখন পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি। ছাত্রলীগের কমিটি আংশিক হয়েছে, এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। যদিও ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করা হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শূন্য পদগুলো পূরণের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

যুবলীগের কংগ্রেস হয়েছে দীর্ঘদীন হলো, তবে এখনও তাঁদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। এমনকি ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণের কমিটিসহ সারাদেশের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি কবে হবে তাও কেউ জানেনা। কৃষকলীগের সম্মেলনের পরেও আংশিক কমিটি দেয়া হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। শ্রমিক লীগের কমিটিও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণের সম্মেলন হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।

আওয়ামী লীগ কমিটি জটের অস্থিরতায় রয়েছে। এরকম নানারকম বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামীলীগ নিজেই নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। এই যুদ্ধে বিজয়ী হবার একমাত্র যে অস্ত্র তা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, তিনি এখন কি করেন সেটাই দেখার বিষয়।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!