ঢাকা : রাজধানীর ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীন হত্যার ঘটনায় তার দুই গৃহকর্মীকে খুঁজছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে বাসায় থাকা তিন গৃহকর্মীর মধ্যে দুই জনই পলাতক আছেন।
সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, তাদের আটকের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর বিকেল ৫টার দিকে তারা পালিয়ে যায় এরপরই তাদের ধরার জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল (রবিবার) সারা রাতই অভিযান চলে। আশা করছি দ্রুতই তাদের আটক করা সম্ভব হবে।
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের বহুতল ভবন ‘সুকন্যা টাওয়ারের’ নিজ ফ্ল্যাটে রোববার বিকালে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ও মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় মাহফুজা চৌধুরীকে।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার পর তার বাসার দুই গৃহকর্মী স্বপ্না ও রেশমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মাহফুজাকে হত্যার পর তারা পালিয়ে যান। বাসা থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকাও খোয়া গেছে।
এলিফ্যান্ট রোডের ফ্ল্যাটে স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসমত কাদের গামার সঙ্গে মাহফুজা চৌধুরী বসবাস করতেন।
ইসমত কাদের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও ’৭০ দশকের প্রথম দিকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঘটনার সময় তিনি বাসায় ছিলেন না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, মাহফুজা চৌধুরীর বাসার দুজন গৃহকর্মীকে পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে তারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য মাহফুজা চৌধুরীর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মাহফুজার পরিবার ও পুলিশ জানায়, মাহফুজা চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। স্বামী ইসমত কাদের ও মাহফুজা ২০ তলা সুকন্যা টাওয়ারের ১৫ ও ১৬ তলার ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে থাকতেন। এ ফ্ল্যাটের মালিক তারা। রোববার সকালে ইসমত কাদের ব্যক্তিগত কাজে বাইরে যান। ওই সময় বাসায় রেশমা ও স্বপ্নাসহ তিনজন গৃহকর্মী ছিলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ইসমত কাদের বাসায় ফিরে ১৬ তলার কলিং বেল চাপলেও কেউ দরজা খুলছিলেন না। পরে ১৫ তলার কলিং বেল চাপলে বৃদ্ধা গৃহকর্মী পারভীন দরজা খোলেন। তখন কাদের ১৬ তলায় গিয়ে দেখেন মাহফুজার লাশ পড়ে আছে। বাসা লণ্ডভণ্ড। ততক্ষণে রেশমা ও স্বপ্না পালিয়ে গেছে। রেশমার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরে। আর স্বপ্নার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। মাহফুজার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে অভিক সেনাবাহিনীর মেজর ও ছোট ছেলে অমিত একটি ব্যাংকে চাকরি করেন।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বিকাল ৫টা ৬ মিনিটে গৃহকর্মী স্বপ্না ও রেশমা ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ৫টার আগেই মাহফুজাকে ১৬ তলার ফ্ল্যাটে খুন করা হয়েছে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক কবির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মাহফুজার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ও বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ওড়না ও বালিশ আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়েছে। বালিশে রক্ত লেগে ছিল।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, লাশের পাশে স্বর্ণালঙ্কার ছড়িয়ে ছিল। দুই গৃহকর্মী সব স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যেতে পারেনি। তারা কিছু স্বর্ণালঙ্কার রেখেই পালিয়ে যায়। তবে কী পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা খোয়া গেছে তা জানা যায়নি। হত্যার ধরন ও আলামত দেখে মনে হচ্ছে পরিকল্পনা করেই ঘটনা ঘটিয়েছেন দুই গৃহকর্মী। গত মাসেই তারা কাজে যোগ দেয়।
ঘটনার সময় বাড়িতে থাকা বৃদ্ধা গৃহকর্মী ১৫ তলার ফ্ল্যাটে ছিলেন। তিনি কিছুই বলতে পারছেন না। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই