• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুই স্ত্রী থাকার পরও ২ বছর বাসার বাইরে ক্যাসিনো সম্রাট!


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৬, ২০১৯, ০২:১০ পিএম
দুই স্ত্রী থাকার পরও ২ বছর বাসার বাইরে ক্যাসিনো সম্রাট!

ঢাকা : ঢাকার মহাখালী ও বাড্ডায় দুই স্ত্রী থাকলেও যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট দুই বছর ধরে বাসায় যান না। তবে এর আগে তিনি মহাখালীতে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাসায় যেতেন।  স্ত্রী ব্যবহৃত গাড়ি চালকের খরচসহ পরিবারের সব খরচ দিতেন তিনি। কাকরাইলে ভূঁইয়া ম্যানশনে নিজ কার্যালয়ে থাকতেন তিনি। সম্রাটের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, সম্রাটের দুই স্ত্রী। প্রথম পক্ষের স্ত্রী বাড্ডায় থাকেন। প্রথম পক্ষে সম্রাটের এক মেয়ে। তিনি পড়াশোনা শেষ করেছেন। সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরী মহাখালীর ডিওএইচএসে থাকেন। তার এক ছেলে। তিনি মালয়েশিয়ায় এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

আরও পড়ুন: রিমান্ডের তথ্য: ৭ মন্ত্রী, ২৩ এমপি জি কে শামীমের পার্টনার

সিঙ্গাপুরে সম্রাটের বিদেশি একজন স্ত্রী আছে বলেও পারিবারিক সূত্রটি জানায়। তবে ওই স্ত্রীর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জানা গেছে, সম্রাটরা তিন ভাই। এক ভাই ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন। আরেক ভাই সম্রাটের ক্যাসিনো ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। সম্রাটের মা ভাইদের সঙ্গে ঢাকায় থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ফেনীতে।

চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের কারণে যুবলীগ নেতা সম্রাটের নাম আলোচনায় আসে। অভিযানে যুবলীগ, কৃষক লীগ ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা র‍্যাব ও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। কিন্তু সম্রাট ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

রোববার (৬ অক্টোবর) ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার সহযোগী আরমানকেও গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে সম্রাটকে গ্রেফতারের বিস্তারিত তথ্য দেননি তিনি। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে ঢাকাতেই অবস্থান করছিলেন সম্রাট। এ সময় তিনি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে ছিলেন। ঢাকায় তিনি প্রভাবশালী নেতার বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে তিনি বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

আরও পড়ুন: বাল্যবন্ধু মনিরের বাসায়ই ছিলো সম্রাটের শেষ আশ্রয়

এদিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের এক শিবির নেতার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এরআগে মধ্যরাত থেকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম সম্রাটের নিকট আত্মীয় পরিবহন ব্যবসায়ী, সাবেক শিবির নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের ফেনী পৌরসভার মেয়র  মনিরুল ইসলামের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় শুধু মনিরুল ইসলামের বৃদ্ধ মা থাকতেন।

ওই বাড়ি থেকে সম্রাট গ্রেফতারেরপর ভোর থেকে ওই এলাকায় মানুষের ভিড় জমতে থাকে। যে এলাকা থেকে সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামটি সীমান্তের কাছাকাছি। ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি।

এদিকে আলকরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, একসময় মনিরুল জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গতকাল সন্ধ্যা থেকে তার বাড়ির চারপাশে অবস্থান নেয় র‍্যাব। সেখান থেকে ভোরে সহযোগী আরমান’সহ সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়।

আরও পড়ুন: সম্রাটের কাকরাইল কার্যালয়ে তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকলো র‌্যাব

প্রসঙ্গত, আলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট জুয়াড়িদের কাছে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। দেশ বিদেশে যেতেন জুয়া খেলতে। সম্প্রতি রাজধানীতে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়েন সম্রাটের ডান হাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরপর ধরা পড়েন রাজধানীর ‘টেন্ডার কিং’ জিকে শামীম। জানা গেছে, এ দুজনই অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন সম্রাটকে।

এরপরই, গা ঢাকা দেন যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। তার অবস্থান ও তাকে গ্রেফতার করা না করা নিয়ে তৈরি হয় নানা গুঞ্জন। অনেকে বলছিল, সম্রাট ক্ষমতাসীন সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের কাছে তার গুরুত্ব তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। অবশ্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, অপেক্ষা করুন, যা ঘটবে দেখবেন। সম্রাট বলে কথা নয়; যে কেউ আইনের আওতায় আসবে। আপনারা সময় হলেই দেখবেন।

সোনালীনিউজ/এএস

Wordbridge School
Link copied!