• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ওপর ভেঙে পড়ল শ্রেণীকক্ষের ছাদ!


পটুয়াখালী প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২০, ১২:৩০ পিএম
প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ওপর ভেঙে পড়ল শ্রেণীকক্ষের ছাদ!

পটুয়াখালী : ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর সোয়া একটা। পাঠদানের বিরতি চলছিল। তৃতীয় শ্রেণির মো. জিহাদ ও মো. রিফাত নামে দুই শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে বসে গল্প করছিল। তৃতীয় শ্রেণির বাকি শিক্ষার্থীরা মাঠের মধ্যে খেলাধুলা করছে। সহকারী শিক্ষকেরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে অবস্থান করছেন। ঠিক ওই সময় ছাদের একটি বিশাল অংশ ধসে পড়ে। অল্পের জন্য রক্ষা পায় ওই দুই শিক্ষার্থী।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার দক্ষিণ বিলবিলাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ১৯৩৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭০। 

খবর পেয়ে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন। এর মধ্যে একটি কক্ষ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাকি তিনটি কক্ষে পাঠদান চলে। ভবনটির অধিকাংশ বিম ও পিলারে ফাটল রয়েছে। বিম, পিলার ও ছাদের সুরকি-পলেস্তেরা খসে রড বেরিয়ে রয়েছে। বৃষ্টির সময় ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। এরপরেও এখানে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান চলছে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোসা. নাজমা বেগম বলেন, অল্পের জন্য জিহাদ ও রিফাত রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু ওরা অনেক ভয় পেয়েছে। বাকি শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে থাকলে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও ঘটতে পারতো।

তিনি আরও বলেন, তার বিদ্যালয়ে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। আর ১৯৯৩ সালে বিদ্যালয়ের বর্তমান ভবনটি নির্মিত হয়। যা বর্তমানে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

তৃতীয় শ্রেণির মো. জিহাদ ও মো. রিফাত বলে, আমরা খুব ভয় পেয়েছি। এখন ক্লাস করতে আরও ভয় লাগবে।

তারা দুজনেই বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি করে।

এদিকে, কক্ষ সংকটের কারণে বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার পরেও ওই ভবনে ক্লাস নিতে হচ্ছে কোটপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির তিনটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে এক কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনসেড ভবন, দুই কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবন, তিন কক্ষ বিশিষ্ট আরেকটি একতলা ভবন রয়েছে। এর মধ্যে তিন তলা বিশিষ্ট একতলা ভবনটি ১৯৫০ সালে নির্মিত হয়। যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ে এসে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। কক্ষ সংকটের কারণে এরপরেও ওই পরিত্যক্ত ভবনে পাঠদান চলছে। যদিও ওই দুটি ভবনও পাঠদানের অনুপযোগী।

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা, মোসা. আলিফা মো. ইয়ামুন অভিন্নভাবে বলে, নিয়মিত ছাদ আর দেয়ালের পলেস্তেরা খসে খসে পড়ে। বৃষ্টির সময় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ভয়ে ভয়ে ক্লাস করতে হয়।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শামসুন নাহার শিল্পী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কক্ষে ক্লাস করায় অভিভাবকদের মনেওকাঁপন ধরে। শিগগির নতুন ভবন নির্মাণ করা না হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজনিন সুলতানা বলেন, কক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত ভবনে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান নিতে হচ্ছে। এ কারণে সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ মহোদয় ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও কোনো কাজ হচ্ছে না। এখন আপনারা (সাংবাদিক) একটু লেখেন যাতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল হক বলেন, দুটি বিদ্যালয়ের ভবনই খুব ঝুঁকিপূর্ণ। দুই-তিন বছর ধরে চাহিদা দেওয়া হচ্ছে। এ বছরও ওই দুটি বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। ছাদ ধসে পড়ার বিষয়টিসহ ফের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সোনালীনিউজ/এএস 
 

Wordbridge School
Link copied!