• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাড়তি টাকা না দিলে মেলে না পুলিশ ক্লিয়ারেন্স


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১৭, ২০১৯, ০৪:৫১ পিএম
বাড়তি টাকা না দিলে মেলে না পুলিশ ক্লিয়ারেন্স

ঢাকা : ভিসার আবেদন, বিদেশে ভিসা-পাসপোর্ট রিনিউ অথবা গ্রিনকার্ড-ওয়ার্ক পারমিটের জন্য প্রয়োজন হয় পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের। আর এ ক্লিয়ারেন্স পেতে নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে।

শুধু হয়রানি নয়, ৫শ টাকার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে অতিরিক্ত গুনতে হয় আরো ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। থানা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা টাকা ছাড়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দেন না বলে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য পাসপোর্টে দেওয়া স্থায়ী অথবা বর্তমান ঠিকানার যে কোনো একটি ঠিকানায় আবেদন করতে হয়। এটি হতে হবে মেট্রোপলিটন বা জেলা পুলিশের আওতাধীন অঞ্চলে। যদি পাসপোর্টে ঠিকানা উল্লেখ না থাকে তবে ঠিকানার প্রমাণস্বরূপ ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলের দেওয়া জন্ম সনদের ফটোকপি ১ম শ্রেণির সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তাকে দিয়ে সত্যায়িত করে স্ক্যান করতে হবে।

আবেদনকারী যদি দেশের বাইরে অবস্থান করেন তাহলে তার পক্ষে দেশে যে কেউ আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস/হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার ফটোকপির স্ক্যানকপি প্রয়োজন।

গত ২৩ জুন ফেসবুকে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল ইসলাম সহজে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়া নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে একাধিক ব্যক্তি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে তাদের হয়রানির কথা তুলে ধরেন।

আমিন মোহাম্মদ রুহুল নামে এক যুবক লেখেন, ‘প্রিয় নাজমুল ভাই, আপনার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সম্পর্কিত পোস্টটি দেখে আশাবাদী হয়ে মেসেজ দিলাম। আপনার দৃষ্টিগোচর হলে অনুরোধ রইল আমার সমাধানের। আমি একজন ছাত্র। আমি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার বাসিন্দা। আমি বিদেশে পড়াশোনার জন্য আবেদন করে মাল্টা (ইউরোপীয় দেশ)-তে অ্যাডমিশনের সুযোগ পাই। গত ফেব্রুয়ারিতে এম্বেসিতে আবেদনের জন্য নো অবজেকশন লেটারস্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করি।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমার সব ঠিক থাকা সত্ত্বেও ভেরিফিকেশনের জন্য আমাকে থানায় ডাকা হয়। পরে আমি থানায় গেলে সকল ডকুমেন্টস সঠিক হওয়ার পরও কর্মরত কর্মকর্তা আমার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে।

কিন্তু আমি অত্যন্ত হতাশ হয়ে তাদের বুঝাতে অক্ষম হই যে, আমি পড়ালেখার জন্য বিদেশে যেতে চাই আর আমি একজন ছাত্র। আমার কাছে এত টাকা নাই। আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা আমাকে এর কাছে ওর কাছে ঘুরিয়ে পরে বলে ওসি স্যারকেই ২ হাজার টাকা দিতে হয়, আমরা কী করব? পরে আমি নিজেকে তাদের কাছে জিম্মি মনে করে চলে আসি।

কারণ ৫ হাজার টাকা আমি অন্যায় দাবি মনে করে তাদের দিতে চাইনি। শেষমেশ ক্লিয়ারেন্স ছাড়াই আমার কাগজ জমা দেই। এখন জানি না, আমার ভিসা হবে কি না।’

জুয়েল আইচ নামে এক ব্যক্তি লেখেন, ‘আমি আমার উপজেলায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেছিলাম চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। নিয়ম মেনে ৫০০ টাকা জমা দেওয়াসহ সকল সত্যায়িত ডকুমেন্টস আপলোড করি। ১৫ দিন পেরিয়ে যাবার পরও আমার হাতে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট আসেনি। ১৫ দিন পর জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়ে থানায় ডেকে নেন। উনাকে প্রশ্ন করেছিলাম কেন আমি আমার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাইনি।

তিনি সোজাসাপ্টা উত্তর দেন, আমি খরচ দেইনি, তাই পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য তিনি আমার ডকুমেন্টস ছাড়েননি এবং খরচ বাবদ তিনি আমার কাছে ২ হাজার টাকা দাবি করেন। সেদিন আমার পকেটে মাত্র এক হাজার ৪শ টাকা ছিল, যা তিনি এক প্রকার জোর করেই আমার কাছ থেকে নিয়ে নেন। পরে ধার করে আমাকে উপজেলা থেকে জেলা শহরে আসতে হয়েছিল।

আমার লাইফে সব কয়টি বাজে অভিজ্ঞতার মাঝে এটি একটি। সব পুলিশ সদস্য খারাপ না হলেও মফস্বল এলাকার থানাগুলোর বেশির ভাগ পুলিশ স্টেশনের পুলিশ সদস্যই এমন কাজের সঙ্গে জড়িত থাকে। প্রশ্ন জাগে, শর্ষের মাঝের এই ভূত তাড়াবে কে???’

শেখ নাদিম নামে এক ব্যক্তি লেখেন, ‘আমি গত মাসে সরাসরি থানা থেকে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিয়েছি। তারা সাত হাজার টাকা অফার করেছিল। যেটা ৫ হাজার টাকায় কন্ট্রাক্ট হয়েছিল। বাট তারা নাম ভুল করার কারণে জরিমানার এক হাজার টাকা আমাকেই গুনতে হয়েছে। অবশেষে সার্টিফিকেট হস্তান্তরের সময় বখশিশ হিসাবে আরো ২০০ টাকা।’

রানা সুহেল নামে এক ব্যক্তি লেখেন, ‘অন লাইনে আবেদন করলেই পুলিশ ভেরিভেকেশনের জন্য থানায় ৩৫০০ টাকা দিতে হয়। আর সরাসরি থানায় গেলে ৪০০০ টাকা দিতে হয়। যেখানে ৫০০ টাকা হলেই হওয়ার কথা। এটা কোন দেশ জানি না। রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এদেশ একসময় দুর্নীতির মহাসাগরে ভাসবে।’

তামিম কিশোর লেখেন, ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স অ্যাপ্লাই করে অটোমেটিক ব্যাংক স্লিপ নিয়ে একবার সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে দেখি ভুল অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিয়েছে ওয়েবসাইট। ৫০০ টাকা গচ্চা দিয়ে আবারো ম্যানুয়ালি জমা দিলাম। এই ৫০০ টাকা সোনালী ব্যাংক ফেরত দিল না। আর পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের আবেদনের ওয়েবসাইটের নাম্বার সবই বন্ধ পেলাম আজ পর্যন্ত। সিস্টেম ভালোই, তবে সিস্টেম লসটা ভয়াবহ!’

এ ব্যাপারে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!