সাতক্ষীরা: নিজের চাচা আর গ্রামের কয়েক ব্যক্তি তাকে ‘অপবাদ’ দিয়ে বাপের বাড়ি থেকে তাড়াতে চেয়েছিল। শুক্রবার (২৮ জুলাই) এ নিয়ে সালিশ বিচারের কথাও প্রচার করেছিল তারা। তার আগেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে রত্না খাতুন।
বছর দশেক আগে মাত্র ১৩বছর বয়সে সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে রত্নার সাথে বিয়ে হয় শহরের কুখরালি মহল্লার আবুল কালামের ছেলে শাহাদাত হোসেনের। তাদের সংসারে ৮ বছরের বৃষ্টি ও সাড়ে চার বছরের শাওন নামের এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। স্বামী শাশুড়ির সাথে পারিবারিক বিরোধের জেরে বছর চারেক আগে রত্না ফিরে আসে বাবার বাড়িতে। সে সময় থেকে দরিদ্র প্রতিবন্ধী বাবা রফিকুল ইসলামের বোঝা হয়ে থাকলেও রত্না বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ করতো। এভাবেই চলছিল তার দিনকাল।
রত্নার পারিবারিক সূত্র জানায়- হঠাৎ করে তাদের মেয়ে সম্পর্কে নানান কথা রটনা হতে থাকে। রত্না গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের বাড়িতে নিয়মিত কাজ করতো। মেয়ের অপবাদের কথা শুনে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা সালমা বেগম।
অথচ রত্নার চাচা আক্কাজ ও সিরাজুল এবং প্রতিবেশি হায়দার আলি ও আমির আলি গ্রামে প্রচার করে ‘রত্না নষ্ট হয়ে গেছে’। ওকে গ্রামছাড়া করতে হবে। তার আগে হবে ওর সালিশ বিচার। বেশ কিছুদিন ধরে এই প্রচার দিয়েও আসছিল তারা। রত্নাও তার প্রতিবাদ করতে থাকে। তাকে নিয়ে সালিশ বিচারের জন্য আজ শুক্রবার দিন নির্ধারণ করে আক্কাজ ও সিরাজুল। খবর দেয়া হয় রত্নার শ্বশুর বাড়িতেও।
স্থানীয় লাবসা ইউপি সদস্য গোলাম কিবরিয়া বাবু জানান, তাকেও ওই সালিশে থাকার অনুরোধ জানানো হয়। শুক্রবার নলকুড়া গ্রামের ব্র্যাক স্কুলের সামনে এই সালিশ বসবার কথা ছিল। এ নিয়ে ব্যাপক প্রচারের মুখে অপমান সহ্য করতে না পেরে বুধবার বিকেলে রত্না বাবার ঘরে বসে তরল কীটনাশক খেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। বিষক্রিয়ায় তার অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নলকুড়ার লাবু ডাক্তারের কাছে। সেখানে তার পাকস্থলি ওয়াশ করার কাজ চলছিল। কিছু সময় পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে রত্না খাতুন।
রত্নার চাচা আক্কাজ বলেন ‘ওর মাথা খারাপ ছিল। শ্বশুর বাড়ি যেতো না। শ্বশুর বাড়ির লোকজন ও বাপের বাড়ির লোকজন মিলে শুক্রবার বসাবসির কথা ছিল। তার আগেই সে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছে’। অপবাদ দিয়ে তাকে গ্রামছাড়া করার চেষ্টার কথা অস্বীকার করেন আক্কাজ। তবে এসব বিষয়ে রত্নার প্রতিবন্ধী বাবা ও মার সাথে কথা বলা যায়নি।
এদিকে রত্নার মৃত্যুর নেপথ্য প্ররোচণাকারী হায়দর আলি, আমির আলি ও সিরাজুল ইসলাম গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহমেদ জানান, রত্নার মৃত্যু নিয়ে থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন
আপনার মতামত লিখুন :