নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী ওয়াজেদ আলী খোকন বলেছেন, ‘রায় ঘোষণার পর অভিযুক্ত নূর হোসেন ও তারেক সাঈদের ভাবলেশহীন আচরণ প্রমাণ করে তারাই খুনি। কেবল পেশাদার খুনিরাই খুন করার পর হাসি-ঠাট্টা-তামাশা করতে পারে।’
আজ সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে ৩৫ আসামির মধ্যে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন। রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এস এম ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ‘এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করি, উচ্চ আদালতে এ রায় বহাল থাকবে।’
আলোচিত এ মামলায় ২৬ জনের ফাঁসির রায় দেন আদালত। রায় ঘোষণার পর অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত নূর হোসেন এবং র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা নির্বিকার ছিলেন। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ওয়াজেদ আলী খোকন কথাগুলো বলেন।
সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘এ রায়ে আমরা খুশি। রাষ্ট্রপক্ষ সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আদালত সব আসামিকেই সাজা দিয়েছেন। এর মধ্যে ২৬ জনের ফাঁসি এবং বাকি নয়জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়েছে।’ তিনি বলেন, যে নয়জনের ফাঁসি হয়নি আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর তা দেখে উচ্চ আদালতে প্রয়োজনে আপিল করা হবে।
ওয়াজেদ আলী বলেন, এই রায় প্রমাণ করল আইনের চোখে সবাই সমান। কে এলিট ফোর্সের সদস্য, কে জনপ্রতিনিধি—আদালতের কাছে এটা বিবেচ্য নয়। আদালতের রায়ে তাই প্রমাণ হয়ে গেল।
এক প্রশ্নের জবাবে ওয়াজেদ আলী বলেন, অভিযুক্ত নূর হোসেন তাঁর প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য র্যাবের তারেক সাঈদসহ অন্যদের সহযোগিতা নেন। র্যাবের এসব সদস্য অর্থের বিনিময়ে নূর হোসেনের সহযোগীদের নিয়ে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটান।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোডের খানসাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের পাশ থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, তাঁর সহযোগী সিরাজুল ইসলাম লিটন, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করে র্যাব-১১।
পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের এবং ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এবং চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল আলাদা দুটি মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আদালতে ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডল।
এর পর বিভিন্ন সময়ে ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পলাতক থাকেন ১৩ জন। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর নূর হোসেনকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর ১৩ নভেম্বর সাত খুনের দুটি মামলাসহ ১১ মামলায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায়। ফলে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩-এ। সাত খুনের মামলায় হত্যার দায় স্বীকার করে র্যাবের ১৭ জনসহ ২২ জন এবং ঘটনার সাক্ষী হিসেবে র্যাব সদস্যসহ ১৭ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে অভিযোগপত্র থেকে পাঁচ আসামিকে বাদ দেওয়ায় এবং প্রধান আসামি নূর হোসেনের জবানবন্দি ছাড়া আদালত অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ায় ‘নারাজি’ আবেদন করেন সেলিনা ইসলাম বিউটি। আবেদনটি নারায়ণগঞ্জ বিচারিক হাকিম ও জজকোর্টে খারিজ হয়ে গেলে বিউটি উচ্চ আদালতে যান।
হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়, পুলিশ চাইলে মামলাটির ‘অধিকতর তদন্ত’ করতে পারে এবং ‘হত্যার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার’ ধারা যুক্ত করে নতুন করে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারে। তবে তদন্তকারী সংস্থা জানায়, তাদের অভিযোগপত্র ‘নির্ভুল ও চমৎকার’।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :