ঢাকা: বহুল আলোচিত শিশু গৃহকর্মী আদুরিকে নির্যাতনের মামলায় গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। প্রায় চার বছর আগে মিরপুরের পল্লবীতে নির্মম নির্যাতনের পর মুমূর্ষু অবস্থায় ময়লার স্তূপে ফেলে রাখা হয় আদুরিকে। প্রতিক্ষিত এ রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে আদুরির পরিবার।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার ৩ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিল আদুরি নিজেও। রায়ের পর আদুরির মামা মামলার বাদী নজরুল বলেন, ‘ওরা প্রচুর বিরক্ত করেছে। আপসের জন্য চাপ দিয়েছে। আপস করি নাই; কঠিন যুদ্ধ করেছি। আপনারা সাহায্য করেছেন। আপনাদের সাহায্য না পেলে এই মামলা রায়ের পর্যায়ে আনতে পারতাম না।’
আসামি নদীকে যাবজ্জীবন কারাদাণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন বিচারক। ওই অর্থ আদায়ের পর তা নির্যাতিত কিশোরী আদুরিকে দিতে হবে। আর জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে আরও এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে নদীকে। এ মামলার অপর আসামি নদীর মা ইশরাত জাহানকে মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।
জামিনে থাকা ইশরাত জাহান রায়ের জন্য এদিন আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। আর তার মেয়ে নদীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায়ের পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত নদীকে ফিরিয়ে নেয়া হয় কারাগারে।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে ১১ বছর বয়সী আদুরিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, তার গৃহকর্ত্রী পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ২৯/১, সুলতানা প্যালেসের দ্বিতীয় তলার বাসিন্দা নদী আগের দিন ধারালো চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে, ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে মারাত্মক জখম করে মেয়েটিকে সেখানে ফেলে রাখেন। ওই ঘটনার তিন দিন পর পল্লবী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন আদুরির মামা নিরাপত্তা প্রহরী মো. নজরুল চৌধুরী।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার কৌরাখালী গ্রামের মৃত খালেক মৃধার মেয়ে আদুরি এখন পরিবারের সঙ্গেই থাকে। সম্প্রতি পাশের গ্রাম পূর্ব জৈনকাঠীর একটি মাদরাসায় তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সে। মামলার রায় জানতে মঙ্গলবার মা শাফিয়া বেগমের সঙ্গে আদালতে এসেছিল আদুরি। সঙ্গে ছিলেন মামা নজরুল চৌধুরী, খালা শাহিনুর বেগমসহ আরো কয়েকজন।
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ন্যায়বিচার হয়নি; রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
আদুরির পরিবারকে এ মামলায় আইনি সহায়তা দিয়েছে মহিলা আইনজীবী সমিতি। সংস্থাটির সভাপতি সালমা আলী রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। যদি আদুরির পরিবার চায়, তাহলে তার সারা জীবনের কর্মসংস্থান আমরা করে দেব।’
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই
আপনার মতামত লিখুন :