শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০, ০১:৪৭ পিএম
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছেই

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। এতে কয়েক কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্কুলে অর্ধবার্ষিক হয়নি, বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েও শঙ্কা। পিইসি ও জেএসসি বাতিলের পর এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই স্তরে দেরি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ভর্তি পিছিয়ে যাবে। এর প্রভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি শিক্ষাবর্ষে সেশনজট বাড়বে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশযাত্রার অপেক্ষায় রয়েছে বহু শিক্ষার্থী। সব মিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছেই।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কয়েক ধাপে বাড়িয়ে সর্বশেষ আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়। করোনাকালে সরকার টিভি, রেডিও ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখলেও আর্থসামাজিক বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের বড় অংশ এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এমন পরিস্থিতিতে স্কুলে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। নভেম্বর-ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, সময়মতো প্রতিষ্ঠান খুললে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু এতে খুব বেশি ভরসা পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। 

ফলে প্রতিষ্ঠান খুলতে না পারলে অটোপাস ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম-আল-হোসেন। যদিও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে ৮ সেপ্টেম্বর এক নির্দেশিকা জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘স্কুল খুলতে প্রস্তুতি লাগে। সেই প্রস্তুতি নিতেই বলা হয়েছে। খোলার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

এইচএসসি পরীক্ষা ৫ মাস ধরে স্থগিত থাকায় আদৌ এটি হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে। সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে এইচএসসি পরীক্ষা হলে সেপ্টেম্বর নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এবার কবে নাগাদ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করতে পারবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের প্রায় ১৩ লাখ পরীক্ষার্থী অনিশ্চিত জীবন পার করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাটি নিতে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত এই পরীক্ষা আয়োজনের চেষ্টা চলছে। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিক বৈঠক করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

কর্মকর্তারা বলছেন, পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বেগ পেতে হবে। ফলে পরীক্ষাটি না-ও হতে পারে। এতে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতা বাড়বে।

এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আমরা পরীক্ষা নেব। তবে দেরি হলে কিছু বিকল্প পরিকল্পনা রয়েছে, যা পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে যত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, সবগুলোতে তো আর পরীক্ষা হয় না। এবার স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। আমি আমার জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলো পরীক্ষার জন্য ছেড়ে দিতে রাজি আছি। কারণ এখন তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধই রয়েছে।’

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি গোটা বিশে^র শিক্ষাব্যবস্থার ওপর চাপ ফেলেছে। বাংলাদেশে এইচএসসির মতো বড় পরীক্ষা আয়োজনে সমস্যা বা পিছিয়ে দিতে হলে অবশ্যই বিকল্প ভাবা উচিত। পরীক্ষা না নেওয়া গেলে অন্য অনেক দেশের মতো আগের ক্লাস পরীক্ষার মার্কিং বা গ্রেডের ফলাফলের ভিত্তিতে গড় ফলাফল ঠিক করে সনদ দেওয়া যেতে পারে।’

সোনালীনিউজ/টিআই

Link copied!