ঢাকা : শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক দিবসের আলোচনায় তিনি বলেছেন, ‘আপনারা জাতীয়করণের কথা বলেছেন, এর সঙ্গে সরকারের আর্থিক সংশ্লিষ্টতা শুধু নয়, নীতিগত সিদ্ধান্তও জড়িত। কাজেই এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য না করতে পারলেও শিক্ষায় বড় নিয়োগ হতে হবে বলে মনে করি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, জাতীয় আয়ের অন্তত চার শতাংশ শিক্ষায় বিনিয়োগ হওয়া জরুরি।’
বিশ্ব শিক্ষক দিবসে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুজিববর্ষে জাতীয়করণের ঘোষণার দাবি নিয়ে পালন করেছেন শিক্ষকরা। একই দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকদের সমাবেশ, ভার্চুয়াল মাধ্যমে আলোচনা সভা এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার (৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকদের সমাবেশ করে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস) ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইইনটি মিলনায়তনে আলোচনা সভা করে বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম এবং অনলাইনে সভা করে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ।
পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত দেশের বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানান শিক্ষক নেতারা। মুজিববর্ষে জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে পর্যায়ক্রমে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারি করার আহ্বান জানান তারা। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণার বিষয়ে কোনও প্রতিশ্রুত দেননি। তবে শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে বলে জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাশিসের মহাসচিব জনাব মো. মেজবাহুল ইসলাম প্রিন্স।
উক্ত শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে (ভিডিও কনফারেন্সে) অংশ নেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও ডিবিসি নিউজের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি (এমপি)।
শিক্ষক সমাবেশে বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দসহ জোট নেতৃরা উপস্থিত ছিলেন। ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস: প্রেক্ষিত বাংলাদেশে শিক্ষকের মর্যাদা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু, অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের সমস্যা তুলে ধরেন শিক্ষক নেতারা। মুজিববর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ঘোষণার দাবি করেন।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা দর্শনের আলোকে মুজিব জন্মশতবর্ষে এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরামের নেতারা। তারা বলেন, স্বাধীনতার পর প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণের মাধ্যমে তিনি এ দেশে গুণগত শিক্ষার বুনিয়াদ গড়েছিলেন।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২০ উপলক্ষে সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন এবং মুজিব জন্মশতবর্ষে এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম এ সভার আয়োজন করে।
ফোরামের সভাপতি সাইদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম. ফারুক, সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান খান, ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব উপাধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী, মো. আবদুল জব্বার, জি এম শাওন, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল ইসলাম মাসুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরো বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু গণমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী জাতি বিনির্মাণের লক্ষ্যে নৈতিক ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানবসম্পদ গড়ে তোলার উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর শিক্ষা দর্শনের অনুকরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী গুণগত শিক্ষার সম্প্রসারণে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার উন্নত দেশগুলোর আদলে বাংলাদেশেও শিক্ষকদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিকে যৌক্তিক উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী জানান, শিক্ষক সমাজের এ দাবি সময়মতো জাতীয় সংসদে তুলে ধরা হবে।
বঙ্গবন্ধুকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এ প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা সবাই শিক্ষা গ্রহণ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেই প্রতিষ্ঠানের একজন যোগ্য শিক্ষার্থী এবং তিনি শিক্ষকদের সম্মান করে থাকেন। এ বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছেন। কোভিড-১৯ এর প্রভাব কাটিয়ে ওঠে পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ করার সুযোগ তৈরি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সোনালীনিউজ/এএস
আপনার মতামত লিখুন :