ঢাকা: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লাল তালিকাভুক্ত ৩৭টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের (টিটিসি) মধ্যে ২৩টি কলেজের কার্যক্রম ও প্রচারণা নিয়ে বিভ্রান্তি কাটছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের বাতিল করা একটি অফিস আদেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দু-একটি গণমাধ্যমে ভুলভাবে প্রচার হচ্ছে বলে বিভ্রান্তি চরমে রূপ নিয়েছে।
লাল তালিকাভুক্ত ও শিক্ষা কার্যক্রমের অনুমতি না থাকা এই কলেজগুলোর পক্ষে বলা হচ্ছে– তাদের বাইরে আর কোনও কলেজের অর্জিত সনদের বিপরীতে বিএড স্কেল পাওয়া যাবে না।
তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত যেসব কলেজগুলোয় প্রশিক্ষার্থী ভর্তি হবে তার তালিকা দেওয়া আছে। কালো তালিকাভুক্ত কলেজগুলোরও তালিকা দেওয়া আছে। সেই বিবেচনায় প্রশিক্ষার্থীরা বিএড হবেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে ১৪টি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের পাশাপাশি বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ১০৭টি। কার্যক্রম চলমান রয়েছে ৭১টির। এগুলোর মধ্যে মানহীন বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কালো তালিকাভুক্ত করেছে ৩৭টি কলেজকে। ২০০৮ সালে ৩৭টিকে কালো তালিকাভুক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। তবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠলে ২০১৫ সালে ওই ৩৭টি কলেজের তথ্য প্রকাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কালো তালিকাভুক্তির আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে ৩৭টি কলেজের মধ্য থেকে ২৩টি কলেজ হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে ২০০৮ সালে। রিট আবেদনে ২৩ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের পাস করা শিক্ষার্থীদের সনদে বিএড স্কেল দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। ওই রিট আবেদনের আদেশ হয় ২০১৫ সালে। আদেশে ২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মামলা চলাকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ২৩টি কলেজ থেকে যারা পাস করেছেন তাদের অর্জিত সনদ বৈধ ঘোষণা করা হয়। তবে এই আদেশে কলেজগুলো বৈধ হওয়া কিংবা ভবিষ্যতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি করাতে পারবে কিনা তার কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেননি আদালত।
হাইকোর্টের এই আদেশ ভুলভাবে উপস্থাপন করলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর ২০১৯ সালের ১৪ মে পক্ষপাতমূলক একটি অফিস আদেশ জারি করে। তাতে ২৩টি কলেজের বিএড সনদ অর্জনকারীদের বিএড স্কেল প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ২৩টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে অর্জিত সনদের বাইরে অন্য কলেজ থেকে অর্জিত সনদে স্কেল প্রদান না করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার সকল আঞ্চলিক উপপরিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মাউশির আগের আদেশ
এই নির্দেশনার ফলে লাল তালিকাভুক্ত ২৩টি কলেজেকে যেমন বৈধতা দেওয়া হয়, তেমনি অন্য সব বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজকে অবৈধ বিবেচনা করা হয়। এই আদেশের পর দেশের অন্য সব বেসরকারি ট্রেনিং কলেজ বিতর্কিত নির্দেশনার বিরোধিতা করে। এতে ২০১৯ সালের ১৪ মে জারি করা আদেশ ৭ দিনের মাথায় ২০১৯ সালের ২২ মে বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর।
কিন্তু ২০১৯ সালের বিতর্কিত বাতিল আদেশটি নিয়ে নিজেদের বৈধতার প্রচার চালাতে থাকে ২৩টি কলেজ। তাদের পক্ষে বলা হয়, বৈধতা পেলো ২৩টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। এতে করে আসন্ন প্রশিক্ষণার্থী ভর্তিতে শিক্ষার্থীরা প্রতারিত হতে পারেন বলে জানান টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের বাতিল নির্দেশনাটি নিয়ে ২৩টি কলেজ প্রচার চালাচ্ছে—তারা ছাড়া অন্য কোনও কলেজের সনদধারীরা বিএড স্কেল পাবে না। ফলে একটি বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন কালো তালিকভুক্ত কলেজগুলো বৈধতা পেয়েছে। আর এতে দেশের মানসম্পন্ন কলেজগুলোর সম্মানও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।’
সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল বাবুল হোসেন বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ভুলের কারণে এই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মানসম্পন্ন কলেজগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে। কালো তালিকাভুক্ত কলেজগুলোতে ভর্তি হলে প্রশিক্ষণার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সহ সভাপতি অধ্যাপক রমজান আলী বলেন, ‘বাতিল আদেশের নির্দেশনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া এবং আদেশটি গণমাধ্যমের কাছে দিয়ে ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এই ২৩টি কলেজসহ ৩৭টি কলেজ এখনও কালো তালিকাভুক্ত।
সোনালীনিউজ/এন
আপনার মতামত লিখুন :