শিশুকাল থেকে নৈতিকতা চর্চা

  • ফিচার ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৩, ২০২২, ০১:২৪ পিএম
শিশুকাল থেকে নৈতিকতা চর্চা

ঢাকা : শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। ঠিক এই কারণেই তারা তাদের চোখের সামনে যা-কিছু দেখে তা থেকেই শিখতে শুরু করে। তাই-তো শিশুদের প্রথম শিক্ষক তাদের মা। এরপর ধারাবাহিকভাবে আসে তাদের বাবাসহ পরিবার অঙ্গনের সদস্যগণ ।

সুতরাং আমরা বলতেই পারি পরিবার হলো অন্যতম সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তাই একটি  শিশুর জন্য পারিবারিক শিক্ষাটি খুব বেশি জরুরি তবে সেটা অবশ্যই আর্দশ শিক্ষা হতে হবে। আর এর সংঙ্গে যোগ হবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ডিগ্রি কবি আসাদ চৌধুরী তেমনটিই মনে করেন। গুণীজনরা বলেন, ‘পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম বিদ্যাপীঠ।

মূলত বাবা-মার কাছেই শিশুরা লেখাপড়া, নৈতিকতা, আদর্শ ও দেশপ্রেম সর্ম্পকে জানতে শুরু করে। পিতামাতার পর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানটি পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। যেহেতু শিক্ষকতা সমাজের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার পেশা এবং শিক্ষকদের বলা হয়ে থাকে আর্দশজাতি গঠনের কারিগর তাই প্রত্যক শিক্ষকদের উচিত সর্বপ্রথম তার শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে  নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া। শিশুকাল হলো নৈতিকতা আর মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়ার সবচেয়ে উর্পযুক্ত সময়।

এ বয়সে শিশু যে শিক্ষাটি পেয়ে থাকে সেটি তার সারাজীবনের পথ চলতে পার্থেয় হয়ে দাঁড়ায়। সে জন্য শিশুকে ৫ বছর বয়স থেকেই নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা দিতে হবে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয়ের দিকে আমাদের বিশেষ নজর রাখতে হবে।

বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে-

সততা : নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষার সর্বপ্রথমে আমাদের শিশুদের শেখাতে হবে- সততা কি? বাংলায় একটি প্রবাদ রয়েছে ‘সততা সর্বোৎষ্ট পন্থা’। এই প্রবাদ-টির আলোকে শিশুদের সামনে তাদের ভুল/মিথ্যাগুলিকে আমাদের তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি শিশুকে এটা নিশ্চিতভাবে বোঝাতে হবে সে যদি সত্যের পথে চলে তাহলে সে জীবনে অনেক বড় হবে। প্রয়োজনে  সত্য বলার জন্য শিশুদের পুরষ্কৃত করুন। এভাবে শিশুর মধ্যে সত্য কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন ।

ন্যায়বিচার : শিশু যদি কোন দোষ করে তবে ছোট ছোট শাস্তি দিতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে সে যেটা করেছে সেটা অন্যায়।  আবার আপনার শিশুর সাথে অথবা সামনে কেউ অন্যায় করলে শিশুর সামনেই তাকে শাস্তি দিয়ে শিশুকে বোঝাতে হবে- ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে তৃণ সমদহে’।

সম্মান : আমাদের শিশুদের সম্মান করা শেখাতে হলে সবার আগে আমাদের পরিবারে যারা বয়স্ক মানুষ রয়েছে তাদেরকে  কখনোই শিশুর সামনে অসম্মান জনক কিছু বলা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। মনে রাখবেন শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। সে সেটাই শিখবে যা তার আশেপাশে ঘটছে। রাস্তায় বড়দের সাথে দেখা হলে। শ্রেণিকক্ষে বা ঘরে প্রবেশ করা মাত্র সালাম দেয়া শেখাতে হবে। সালাম বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি  মাধ্যম বলা যেতে পারে।

নম্রতা : নৈতিক ও মূল্যবোধ শিক্ষার অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয় শিশুকে নম্রতা ও ভদ্রতা শিক্ষা দেওয়া। শিশু কার সাথে কিভাবে কথা বলবে।কতটা আওয়াজের সুরে সে শিক্ষা দেওয়াই  নম্রতার অন্তর্ভুক্ত।

দায়িত্ববোধঃ আপনার শিশুকে ছোট ছোট কাজ দেওয়ার মাধ্যমে দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলুন। যেমন; তার নিজের কাপড়,স্কুল ব্যাগ,পড়ার টেবিল ইত্যাদি গোছাতে দেওয়া। সকালে উঠে নিজের দাঁত নিজে ব্রাশ করা। আপনার যদি দুটি সন্তান থাকে সেক্ষেত্রে বড় সন্তানটিকে কিছুক্ষণের জন্য ছোট বোন/ভাইয়ের খেয়াল রাখার দায়িত্ব দেওয়া। এভাবে শিশুকে তার শৈশব থেকেই দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা।

ধৈর্য : ‘সবুরে মেওয়া ফলে’ প্রবাদটি-র সাথে আমরা পরিচিত হলেও শিশুরা কিন্তু পরিচিত নয়। তাকে  এই প্রবাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। আপনার শিশুর কোন জিনিস ভীষণ পছন্দ আপনি তাকে সাথে সাথে জিনিসটি কিনে না দিয়ে তার থেকে সময় নিন। তাকে বলুন অপেক্ষা করতে। সে যদি কোনো বিষয়ে দুর্বল হয়, পড়া মনে রাখতে না পারে তাকে বলুন বার বার পড়তে। এভাবে তাকে ধৈর্য ধারণ করতে শিখান।

ভালোবাসা : ভালোবাসা পেতে চায় না এমন কোন মানুষ এ পৃথিবীতে নেই, শিশুরাও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই ভালোবাসার বিকল্প নেই। শিশুদের শাসন যেমনি করতে হবে তেমনি ভালোবাসতে হবে। এই পৃথিবীতে কেউ যে ঘৃণার পাত্র হতে জন্মায় না। তাই শিশুদের শুধু ভালোবাসা দিলেই হবে না তাদেরকে  ভালোবাসতে ও  শেখাতে হবে।

মহানুভবতা : শিশুদের প্রতি উদারতার পরিচয় দিতে হবে। তাদের করা ছোট ছোট ভুল গুলোকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তাদের কে বোঝাতে হবে। তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করা যাবে না। আমাদের শিশুরা আমাদের থেকেই শেখে তাই তাকে মহানুভবতার অধিকারী করে গড়ে তুলতে সবার প্রথম আমাদের মহানুভবতার পরিচয় দিতে হবে।

সময়ানুবর্তিতা : শৈশব থেকেই শিশুদের রুটিন করে দিন। যাতে শিশু সময়ের মূল্য বুঝতে শেখে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং সকালে তাড়াতাড়ি উঠার প্রয়োজনীয়তা ও সুফল তুলে ধরুন শিশুর সামনে। দিনের সময়টাকে ভাগ করে দিন। কখন শিশু খেলবে,খাবে, খেলাধুলা করবে, বই পড়বে সেগুলো রুটিন মাফিক করতে বলুন। এবং  অভিভাবক হিসেবে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় আপনার শিশুর সাথে কাটান। এর মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হবে এবং শিশু সাথে তার বাবা মায়ের ইমোশনাল কানেকশনও তৈরি হবে।

শিষ্টাচার : শিশুকে শিষ্টাচার শেখানোর মাধ্যমে তার আচার-আচরণ সুন্দর করতে হবে।  যাতে করে সে সমাজে সবার ভালোবাসা ও সহানুভূতি লাভ করে। শিশুর সামনে শুদ্ধ ভাষায়  উচ্চারণ করুন। আমাদের শিশুরা যেন আমাদের থেকে ভালো কিছু শিখতে পারে তাই শিশুর সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন তবে অবশ্যই সেটা পজিটিভ পন্থায়।

এভাকে  শিশুকাল থেকেই শিশুকে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ বোঝান যাতে ভবিষ্যতে সে  নিজের জন্য সর্বোত্তম সিদ্ধান্তটি নিতে পারে। আমাদের শিশুদের নৈতিক শিক্ষার সব ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় মঙ্গলময় হয়। আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর রুচিশীল সমাজ উপহার দিতে আমাদের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই শিশুর এই নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব শুধুমাত্র তাদের পরিবারের নয়, এই দায়িত্ব শিক্ষক থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি  মানুষের।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!