ঢাকা : ১৯৯৬-২০০১ পর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতি ছয় হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে চার হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়।
বর্তমানে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামীণ জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা এবং ৪৫ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এর বাইরে সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে বিনামূল্যে ২৯ ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনো সবার জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়নি।
সরকারি হিসাব বলছে, হাসপাতালে প্রতি শয্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা এখনো এক হাজার ১৬৯ জন।
চিকিৎসা নিতে গিয়ে এখনো হয়রানির শিকার হয় সাধারণ মানুষ। তাদের অসন্তুষ্টি রয়েছে বেসরকারি চিকিৎসা কার্যক্রমের মান নিয়েও। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সরকার সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে চায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছে তারা।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, সরকার সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ব্যাপক কার্যক্রম গত কয়েক বছর ধরে বাস্তবায়ন করছে। স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে অনেকটা। নতুন নতুন হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ব্যাপকসংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স। এই ধারাবাহিক কার্যক্রমের আওতায় স্বাস্থ্যবীমা চালু করা হবে। প্রতিটি নাগরিককে কীভাবে এর আওতায় আনা যায়, সেটি চিন্তা করা হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই স্বাস্থ্যবীমা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এটি চালু করা গেলে কেউ অসুস্থ হলে তার পরিবারের ওপর চাপ কম পড়বে। অন্যের কাছে হাতও পাততে হবে না। বীমার সমুদয় অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেওয়া হবে। নামমাত্র অর্থ পরিশোধ করার বিধান থাকবে। এর মাধ্যমে দেওয়া হবে বিশেষ বীমা কার্ড।
তবে এটি কবে থেকে কীভাবে কার্যকর হবে, সেটি চূড়ান্ত হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট ফোরামের অনুমোদনের পর। কোনো নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে ভেটিংয়ের জন্য। এরপর এটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে।
সরকারি হিসাব বলছে, গত ১১ বছরে ২৩ হাজারের বেশি চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাঠ পর্যায়ে ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ও সাড়ে ১৪ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর ১০ মাসে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৯-এ ছিল ৬৬ বছর ৮ মাস।
সরকারের তথ্যমতে, মাতৃ মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৪৮ থেকে ১ দশমিক ৭২ এবং শিশু মৃত্যুর হার ৪১ থেকে ২৪ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। ৫৩টি উপজেলায় মাতৃ-ভাউচার কর্মসূচি চালু করা হয়েছে এবং পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি উপজেলায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বীমা চালু করা হয়েছে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রসবকালীন সেবা প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিডওয়াইফ পদায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সরকার সারা দেশে আধুনিক কল সেন্টার ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ও অনলাইনে চিকিৎসাসেবা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আরো উন্নত করার প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। ৬০টি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের সুরক্ষায় ২২টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ২০৩টি অ্যাডলেসেন্ট ফ্রেন্ডলি হেলথ কর্নার স্থাপন এবং ১৪টি জেলায় ১৮৯টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়েছে। তিন হাজার ১৩১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে ২ হাজার ২০০টিতে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা নিরাপদ প্রসবসেবা চালু করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানের ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি অ্যান্ড হসপিটাল নির্মাণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন করে মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৪টি শয্যা স্থাপন করা হয়েছে।
সূত্র বলছে, ১১ বছরে হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়েছে। তবে এখনো বর্তমানে শয্যা ও রোগীর অনুপাত ১:১১৬৯। অবশ্য ২০০৬ সালে এই অনুপাত ছিল ১:২৬৬৫।
জানা গেছে, সরকার এক বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের ওপরে সবাইকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা করতে চায়। সব বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে।
প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হার্ট, ক্যানসার ও কিডনি চিকিৎসা-ব্যবস্থা চালু করার কাজও চলছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে অন্তত ১০০ শয্যার স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যানসার ও কিডনি চিকিৎসা-ব্যবস্থা চালু করা হবে।
সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং হাসপাতালে আধুনিক প্রযুক্তি প্রচলন করে স্বাস্থ্যসেবা-ব্যবস্থাকে আরো নির্ভুল ও জনবান্ধব করার দিকে যাচ্ছে সরকার। অনলাইনে দেশ-বিদেশ থেকে বিশেষায়িত চিকিৎসকের সেবা পাওয়া যাবে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :