যুক্তরাষ্ট্রের গত ৮ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল আজ সোমবার ঘোষণা করবে ইলেকটোরাল কলেজ। ওই নির্বাচনে জনগণের ভোটে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে থাকলেও এই ইলেকটোরাল কলেজের ভোটেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প ব্যস্ত আছেন তার ক্যাবিনেট গঠন, এজেন্ডা পরিকল্পনাসহ সরকার পরিচালনার নানা বিষয় নিয়ে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি এখনো প্রেসিডেন্ট নন, কারণ যে ইলেকটোরাল ভোটে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তা ছিল প্রাথমিক ফল। এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আজ ১৯ ডিসেম্বর।
প্রায় ৩২ কোটি জনসংখ্যার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হবেন বিধান অনুযায়ী তা ঠিক করেন ৫৩৮ ‘ইলেকটর’-এর একটি ছোট্ট দল। গত ৮ নভেম্বর সেই ইলেকটরদের দেয়া ভোট আসলে আনুষ্ঠানিক ভোট নয়, অনেকটা ভোট দেয়ার প্রতিশ্র“তির মতো। অর্থাৎ ৩০৬ ইলেকটর প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন তারা ১৯ নভেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দেবেন। একইভাবে ২৩২ জন বলেছেন হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে দাঁড়াবেন।
কিন্তু চূড়ান্ত নির্বাচনে যদি ট্রাম্পপন্থি ইলেকটরদের বড় একটা অংশ সিদ্ধান্ত পাল্টে হিলারির পক্ষে চলে যান, তাহলে ট্রাম্প-হিলারির মধ্যে ৭৪ ইলেকটোরাল ভোটের বিশাল ব্যবধান কাটিয়ে উঠতে অনেক ইলেকটরের মত পাল্টাতে হবে। সাধারণত শেষ পর্যন্ত ইলেকটররা খুব একটা সিদ্ধান্ত পাল্টান না। তবে ইলেকটরদের ভোট বদলানোর কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল উল্টে যাওয়ার ঘটনা মার্কিন সংবিধান এবং যৌক্তিক দিক থেকে অসম্ভব কিছু নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ইলেকটোরাল কলেজের সিদ্ধান্ত বদলের কারণে ফল বদলানোর ঘটনা একবারই ঘটেছে। ১৮৩৬ সালে মার্টিন ভ্যান ব্যুরেন ও তার রানিংমেট রিচার্ড মেনটর জনসনের পক্ষে থাকা ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ২৩ জন ইলেকটর তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন; বলেন, তারা জনসনকে ভোট দেবেন না। এর ফলে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের ফলাফল গেলেও পরে জনগণের ভোট ও সিনেটের সিদ্ধান্তে ভ্যান ব্যুরেন ও জনসনের সরকারই নির্বাচিত হয়।
প্রথমে কথা দিয়ে পরে মত বদলানো এমন ইলেকটরদের ‘ফেইথলেস ইলেকটর’ বা ‘অবিশ্বস্ত ইলেকটর’ বলা হয়। ইলেকটররা ১৯ তারিখে যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন, তাতে নিচের তিনটি ঘটনার একটি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে :
ঘটনা ১ : সব আগের মতোই থাকল, ট্রাম্প হলেন প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট হতে হলে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হবে। বেশ কয়েকজন ইলেকটর তাদের সিদ্ধান্ত বদলে ফেললেও ট্রাম্পের পক্ষে ৩০৬ ভোট থেকে কমে ২৭০ থাকলে প্রেসিডেন্ট হবেন ট্রাম্প।
ঘটনা ২ : ‘অবিশ্বস্ত ইলেকটর’রা মত পাল্টালেন, হিলারি হলেন প্রেসিডেন্ট।
কাক্সিক্ষত ২৭০ ভোট থেকে ৩৮ ভোট পিছিয়ে আছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। যদি ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক একটা বিপ্লব ঘটে এবং ৩৮ বা তার বেশি ইলেকটর তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টে জনগণের মোট ভোটের পক্ষে, অর্থাৎ হিলারির পক্ষে চলে যান, তবে নির্বাচনের ফলাফল ডিগবাজি খেয়ে হিলারিকেই প্রেসিডেন্ট বানিয়ে দেবে।
বিষয়টি আপাতত অবাস্তব। কেননা ইলেকটররা নির্বাচিত হন অঙ্গরাজ্যের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে, মানে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দেয়া ইলেকটররা সিদ্ধান্ত বদলানোর অর্থ শুধু ট্রাম্পের বিপক্ষে নয়, পুরো রিপাবলিকান দলের বিপক্ষে যাওয়া।
ঘটনা ৩ : ট্রাম্পপন্থি ইলেকটররা সিদ্ধান্ত বদলালেও কেউই ২৭০ ভোট পেলেন না। সংবিধানে নির্দিষ্ট কোনো বাধা না থাকলেও ২৯টি অঙ্গরাজ্যে আইন করে নিজ অঙ্গরাজ্যে জনগণের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি এমন প্রার্থীকে ভোট দিতে ইলেকটরদের নিরুৎসাহিত করা হয়। চূড়ান্ত ভোটে মত বদলানোর শাস্তি হিসেবে আর্থিক জরিমানা ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে ইলেকটরের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। এজন্য সাধারণত তেমন কেউ সিদ্ধান্ত পাল্টান না।
কিন্তু তারপরও কিছু সংখ্যক ইলেকটর যদি আজ সোমবারের চূড়ান্ত ভোটে মত বদলে হিলারির পক্ষে চলে যান এবং দুজনের ভাগেই ২৭০-এর কম ভোট পড়ে, তাহলে একটি না হলে আরেকটি, এমন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রক্রিয়াটি এ রকম :
ইলেকটোরাল কলেজের বর্তমান ভোটের ম্যাপ
সিদ্ধান্ত ১ : ২৬ বা তার বেশি অঙ্গরাজ্যে জয় পাওয়া প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হবেন।
সিদ্ধান্ত ২ : ২৬টি রাজ্যে না জিতলে আবার (এবং আবার) ভোট হবে যতক্ষণ না সিদ্ধান্ত পাওয়া যাচ্ছে।
সিদ্ধান্ত ৩ : ২০ জানুয়ারির মধ্যে ভোটের পর ভোটেও সিদ্ধান্ত না হলে সিনেটে নির্বাচিত নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন।
এখানেও একটা সুদূর কল্পনা করা যায়। ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রেও যদি দ্বিধা দেখা দেয় তাহলে নিচের পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে :
সিদ্ধান্ত ১ : ৫১ বা তার বেশি সিনেটরের ভোট পাওয়া ব্যক্তি হবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
সিদ্ধান্ত ২ : দুই প্রার্থী ৫০-৫০ ভোটে আটকে গেলে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভোটে মীমাংসা হবে।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :